বিরোধ মিটলো। কার্টুন-বিতর্কের পর কথা হলো ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর।
বিজ্ঞাপন
মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে আলাদা অবস্থান নিয়েছিলেন দুই বন্ধু। ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ। ফরাসি প্রেসিডেন্ট পুরোপুরি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার পক্ষে। কিন্তু প্রথমে ট্রুডোর মত ছিল, সেই অধিকারের একটা সীমারেখা থাকা দরকার। এই মতবিরোধের ফলে দুই জনের সম্পর্কে কিঞ্চিত জটিলতা দেখা দেয়। অবশেষে ট্রুডো তাঁর মত কিছুটা বদল করার পরে দুই দেশের প্রধানের মধ্যে ফোনে কথা হলো। মনোমালিন্যের অবসান হলো।
ইতিমধ্যে তুরস্ক, পাকিস্তান মাক্রোঁর বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে। কিছু আরব দেশে ফরাসি জিনিস বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে মাক্রোঁর মন্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রচণ্ড। তারপর মাক্রোঁ বলেন, তিনি মুসলিমদের ক্ষোভের কথা বুঝতে পারেন, কিন্তু তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে।
গত সপ্তাহে ট্রুডো জানান, ''ফ্রান্সের শিক্ষক হত্যা ও গির্জায় আক্রমণের ঘটনা নিন্দনীয়। কিন্তু মতপ্রকাশের অধিকারেরও একটা সীমা থাকা দরকার। আমাদের একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে হবে। অযথা কারো মনে আঘাত করা উচিত নয়।''
বয়কটের আর্থিক প্রভাব কেমন?
বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশে ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছে৷ প্রতিবাদের অস্ত্র হিসেবে পণ্য বয়কট কতটা আর্থিক প্রভাব ফেলে তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে ছবিঘরে৷
ছবি: Chuck Beckley/Getty Images
ডেনমার্কে রপ্তানি হ্রাস
২০০৫ সালে ডেনমার্কের দৈনিক পত্রিকা ‘ইওলান্ত পস্টেন’-এ মহানবি (সাঃ)-এর কার্টুন প্রকাশিত হয়৷ এর প্রতিবাদে ডেনিশ পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়েছিল৷ ফলে ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশটির রপ্তানি সাড়ে ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল বলে সরকারি তথ্যে জানা গেছে৷ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৩২৯ কোটি টাকা৷
ছবি: AFP/Getty Images/A. Ali
যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রান্সের পণ্য বয়কট
২০০৩ সালে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্র’ থাকার অভিযোগ এনে ইরাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জর্জ বুশ৷ এর বিরোধিতা করে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেয়ার হুমকি দিয়েছিল ফ্রান্স৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়৷ ক্যাপিটল হিলের রেস্তোরাঁগুলোতে ‘ফ্রেঞ্চ ফ্রাই’য়ের নাম পরিবর্তন করে ‘ফ্রিডম ফ্রাই’ করা হয়৷ এক গবেষণা বলছে, বয়কট আহ্বানের শীর্ষ সময়ে ফরাসি ওয়াইনের সাপ্তাহিক বিক্রি ২৬ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷
ছবি: Chuck Beckley/Getty Images
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট
ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণের প্রতিবাদে ২০০৫ সালে ‘বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট, স্যাঙকশনস’ বা বিডিএস নামে একটি মুভমেন্ট শুরু হয়৷ এই আন্দোলনের অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন, তা নিয়ে বিতর্ক আছে৷ ২০১৫ সালে ইসরায়েলি সরকারের ফাঁস হওয়া এক নথি জানায়, দেশটির অর্থনীতিতে বিডিএস-এর আর্থিক প্রভাবের পরিমাণ বছরে ১৪০ কোটি ডলার৷ ঐ বছরই ব়্যান্ড কর্পোরেশন জানায়, ১০ বছরে আর্থিক প্রভাবের পরিমাণ হতে পারে ৪,৭০০ কোটি ডলার৷
ছবি: Imago/S. Zeitz
চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ
পূর্ব চীন সাগরে অবস্থিত কয়েকটি দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চীন, জাপান ও তাইওয়ানের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে৷ ২০১২ সালে এই দ্বীপগুলো সম্পর্কে জাপানের নেয়া কিছু সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চীনে জাপানবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়৷ ফলে চীনের সঙ্গে জাপানের গড়ে এক বছর মেয়াদি ট্রেড ডিজরাপশনের (বাণিজ্যে বিঘ্ন) পরিমাণ প্রায় ২.৭ শতাংশ ছিল বলে এক হিসেবে জেনেছেন গবেষক কিলিয়ান হাইলমান৷
ছবি: Reuters
ভারতে চীনা পণ্য বয়কট
লাদাখে ভারত-চীন সংঘাতের জেরে ভারতে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেয়া হয়৷ চীনের একাধিক অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়৷ আইপিএল-এর টাইটেল স্পন্সর পরিবর্তন করা হয়৷ ভারত সরকারের তথ্য বলছে, ২০০৫ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক খানিকটা হলেও হোঁচট খেয়েছে৷ আমদানি-রপ্তানি দুই ক্ষেত্রেই পতন হয়েছে৷ ছবিতে চীনা পণ্যে আগুন দিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. K. Singh
5 ছবি1 | 5
এই পরিস্থিতিতে ট্রুডো ও মাক্রোঁর কথা হলো। ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী সেখানে জানিয়ে দিলেন, তিনি ফ্রান্সের
জনগণের পাশে আছেন।
গত মঙ্গলবার মাক্রোঁ ফোন করেছিলেন, ক্যানাডার প্রভিন্স কুইবেকের প্রধানকে। তাঁদের মধ্যে কার্টুনকাণ্ড ও তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়। ট্রুডোকে ফোন না করে কুইবেকের প্রশাসনিক প্রধানকে ফোন করা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে কিছুটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মাক্রোঁ আসলে এই ভাবে ট্রুডোকে উপেক্ষা করছেন বলেও কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন।
তারপর ট্রুডো আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে বলেন, ''মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করা খুবই জরুরি। আমাদের শিল্পীরা আমাদের মনোভাব পরিবর্তনে সাহায্য করেন। সমাজে তাঁদের অবদান প্রচুর। তাই আমরা সবসময়ই মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করব।''
এরপর বৃহস্পতিবার দুই নেতার ফোনে কথা হয়। ট্রুডো বলেন, তিনি ফ্রান্সের পাশে আছেন। দুই নেতাই মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।