শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও জার্মান চ্যান্সেলর সংবাদ সম্মেলনে আন্তঃপ্রশান্তমহাসাগরীয় ঐক্য অটুট রাখার ওপর জোর দেন৷ ইরান, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা প্রসঙ্গ অগ্রাধিকার পেয়েছে তাঁদের আলোচনায়৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর পর এবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ওয়াশিংটন সফর করলেন৷ মূলত ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বহাল রাখা, এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনাই এ সব সফরের মূল লক্ষ্য৷
হোয়াইট হাউজে ম্যার্কেল
এ মেয়াদে জার্মান চ্যান্সেলর নির্বাচিত হবার পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন ম্যার্কেল৷ আগেরবার গেল মার্চে যখন তিনি সেদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, তখন মিডিয়ার সামনেই করমর্দন করতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প৷ তাতেই দুই দেশের মধ্যে শীতল সম্পর্ক বুঝতে কারো বাকি থাকে না৷
কিন্তু এবার ট্রাম্প ভিন্ন আচরণ করলেন৷ শুধু করমর্দনই করেননি, ম্যার্কেলের গালে চুমুও খেয়েছেন৷
শুক্রবার তাঁর এই উষ্ণ অভিবাদনের অংশ হিসেবে তিনি ম্যার্কেলকে ‘অসাধারণ নারী' হিসেবে আখ্যায়িত করলেন৷
তারপরও এই সফর কতটা কার্যকর হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে৷ বলা হচ্ছে, ইরান প্রসঙ্গ ও মার্কিন মুল্লুকে পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক নিয়ে আলোচনা খুব একটা অগ্রগতি হয়নি৷
আলোচনায় কী ছিল?
ইরান প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এই খুনি শাসকদের কাছে যেন পারমাণবিক অস্ত্র না থাকে তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷''
ম্যার্কেল বলেন, ‘‘২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি করা হয়েছিল তা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমানোর প্রথম পদক্ষেপ৷ তবে এটাও ঠিক যে, ইরানের উচ্চাকাঙ্খায় সীমা নির্ধারণ করতে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয়৷''
এর আগে আসছে ১২ মে'র মধ্যে চুক্তিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন' আনলে ট্রাম্প তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন৷ ম্যার্কেল ও মাক্রোঁ চান চুক্তি বাতিল না হোক৷
বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির ওপর সে দেশ যে কর বসিয়েছে, তা থেকে ইউরোপকে আপাতত অব্যাহতি দেয়া হয়েছে৷ এই অব্যাহতির সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তবে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে এখনো সম্মতি দেয়নি৷
গত মাসেই ইস্পাতের ওপর ২৫ শতাংশ ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ইউরোপকে মওকুফের সময়সীমা আগামী পয়লা মে শেষ হবে৷ ট্রাম্প ইইউ'র সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি মনে করিয়ে দেন৷
মার্কিন প্রেসিডন্ট জার্মানির কথা সরাসরি না উল্লেখ করলেও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় জিডিপির কমপক্ষে ২ ভাগ নির্ধারণ করতে ন্যাটো'র সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান৷ উত্তর কোরিয়ার ওপর সর্বোচ্চ চাপ অব্যাহত রাখায় ম্যার্কেলকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প৷ কোরীয় উপদ্বীপে চলমান শান্তি আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে দাবি করেন তিনি৷ ম্যার্কেলও এই সংকট নিরসনে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করেন৷
জেডএ/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, এপি, রয়টার্স)
রাজনীতিতে বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত
বেস্ট ফ্রেন্ড ফরএভার: চিরকালের সেরা বন্ধু-স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের বন্ধুত্ব দেখা যায়৷ কিন্তু বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে বন্ধুত্বের এমন দৃষ্টান্ত কমই আছে৷ ছবিঘরে থাকছে তাঁদের কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভ্লাদিমির পুটিন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে রুশ প্রেসিডেন্ট এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বন্ধুত্বপূর্ণ হ্যান্ডশেক করছেন৷ হামবুর্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে এটাই ছিল তাঁদের প্রথম বৈঠক৷ কিন্তু এই দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না৷ সকলের ধারণা ছিল তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব অত্যন্ত গাঢ়৷ (কারো কারো মতে একটু বেশিই)৷ কিন্তু সম্প্রতি ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বারাক ওবামা এবং আঙ্গেলা ম্যার্কেল
বন্ধুত্বের জয় হোক! সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একসাথে হেসেখেলে তাদের রাজনৈতিক সংকট সমাধান করেছেন৷ কেবল একটা ব্যাপার ছাড়া৷ যেসময় ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালীন ম্যার্কেল এবং তার সরকারের উপর নজরদারি করেছিল তাঁর প্রশাসন৷ বন্ধুত্বে এ সব ঠিক নয়, তাই না? কিন্তু ম্যার্কেল বন্ধুর এ অপরাধ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন এবং ওবামার দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার সময় ব্যথিত ছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/M. Sohn
জর্জ ডাব্লিউ বুশ এবং টোনি ব্লেয়ার
নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ যখন চরম সংকটের মধ্যে ছিলেন, তখনও তাঁর পাশে ছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার৷ এমনকি ঐ ঘটনার পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতেও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন ও সহায়তা পেয়েছিলেন বুশ৷ নিজের দেশে চরম বিক্ষোভ সত্ত্বেও বুশের উপর থেকে সমর্থন সরিয়ে নেননি ব্লেয়ার৷ একেই বলে বন্ধুত্ব!
ছবি: picture-alliance/Photoshot
হেলমুট কোল এবং জর্জ বুশ
জর্জ বুশ সিনিয়র তৎকালীন জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোলের মধ্যে নিজের প্রিয় বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছিলেন৷ জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের স্থপতি বলা হয় কোলকে৷ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না৷ ২০১৭ সালের জুনে যখন কোল মারা যান, সিনিয়র বুশ বলেছিলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভাবে জার্মানির পুনরেকত্রীকরণ এবং শীতল যুদ্ধ বন্ধে কোলের মত বন্ধুর সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের একটা বড় অর্জন ও সুখের মুহূর্ত৷’’
ছবি: AFP/Getty Images
জ্যাকি কেনেডি এবং হিলারি ক্লিনটন
১৯৯৩ সালে হিলারির স্বামী বিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তারা যখন হোয়াইট হাউজে ওঠেন, সেই সময়টা হিলারির জন্য বেশ কঠিন ছিল৷ ফার্স্ট লেডি হওয়ার ছ’দিন পর তাই পরামর্শের জন্য সাবেক ফার্স্ট লেডি জ্যাকির শরণাপন্ন হন তিনি৷ সন্তানদের মানুষ করা, কাপড়, ফ্যাশান – এ সব নিয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেন তাঁরা৷ হিলারি এখনো জ্যাকির একটা পরামর্শ মেনে চলেন৷ তাহল, ‘‘নিজের সত্ত্বাকে ঠিক রাখতে হবে৷’’
নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ইরানের রাজধানীতে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ অংশ নিচ্ছেন ৭৮টি দেশের কার্টুন আঁকিয়ে, তাঁদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও দু’জন আছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
ছেলেমানুষি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচার-ব্যবহার কোনো প্রবীণ বা অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো নয় – কোথায় যেন তার মধ্যে ছেলেমানুষি মিশে আছে৷ কার্টুনের খোকা ট্রাম্প...
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
পিনোকিও
কলোডির গল্পের কাঠের পুতুল পিনোকিও-র নাক সে মিথ্যে কথা বললেই আরো খানিকটা লম্বা হয়ে যেতো৷ ট্রাম্পের লম্বা নাকের অর্থ যদি মিথ্যাভাষণ হয়, তবে সেই নাকের ওপর টুইটারের লোগোর মতো দেখতে ছোট ছোট পাখি বলে দিচ্ছে, ট্রাম্প কিভাবে মিথ্যাভাষণ করে থাকেন৷ কার্টুনিস্টের কল্পনায় একেবারে সামনের পাখিটি আবার নখে বোমা ঝুলিয়ে চলেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
টুইটারের লোগো, কিন্তু মুখটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের
ট্রাম্প যে টুইট করতে ভালোবাসেন, সেটা বিশ্বের বাকি মানুষজনের মতো কার্টুনিস্টদেরও নজর এড়ায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
সীমান্তে প্রাচীর
সারা বিশ্ব থেকে মোট ১,৬১৪টি ব্যঙ্গচিত্র তেহরানের ট্রাম্প কার্টুন প্রতিযোগিতায় এসে পৌঁছেছে – তার মধ্যে দু’টি ব্যঙ্গচিত্র এসেছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প যে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার নির্মাণ করতে চান, এই প্রসঙ্গটিকে বিষয়বস্তু করেছেন বহু কার্টুনিস্ট৷ ছবিতে কিউবার এক কার্টুনিস্টের পাঠানো ব্যঙ্গচিত্রটি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
মেলানিয়ার মুখে হাসি ফোটানোর পন্থা
ইটালির এক কার্টুনিস্টের ব্যঙ্গচিত্রে ট্রাম্প মেলানিয়ার ঠোঁটের কোণ টেনে ধরে তাঁকে জোর করে হাসাচ্ছেন৷ এখানে দু’জনের সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে: ট্রাম্পদের দাম্পত্য জীবন কি সুখের? ওদিকে মেলানিয়া এ পর্যন্ত ক’বার ট্রাম্পের হাত ঠেলে সরিয়ে দিয়েছেন, তার হিসেব রাখছেন ট্যাবলয়েড সাংবাদিকরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
‘অ্যামেরিকা মানে তো আমি!’
কার্টুনটিতে নানা দেশের পতাকা উড়ছে – শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে পতাকার জায়গায় উড়ছেন ট্রাম্প স্বয়ং৷ তেহরানে এর আগেও কার্টুন প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং তার সবটাই যে বিতর্ক মুক্ত, এমন নয়: যেমন ইসলামিক স্টেট সন্ত্রাস গোষ্ঠীকে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা সাহসী বলে প্রশংসা পেলেও, হলোকস্ট নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রতিযোগিতা কতটা সুরুচির পরিচায়ক, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
এ কেমন বৈরি
দেশ বা প্রশাসন হিসেবে ইরান যে ঠিক মানবাধিকারের আলোকবর্তিকা নয়, তা বলা চলে৷ তবে ইরান-মার্কিন সম্পর্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্টুনিস্টরা ট্রাম্পকে তুলোধোনা করলে তেহরানের আপত্তি না থাকারই কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Kenare
বিজয়ী ইরানেরই
জ্বলন্ত মাথার চুল আর একশ’ ডলার নোটের তৈরি সুট পরিহিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যঙ্গচিত্র এঁকে প্রায় দেড় হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের প্রথম পুরস্কার লাভ করেছেন ইরানি কার্টুনিস্ট হাদি আসাদি৷ তাঁকে অভিনন্দন৷