1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ষণকাণ্ডে কাঠগড়ায় ভারত

গ্রেহেম লুকাস/জেকে৫ জুন ২০১৪

ভারতের মতো দেশে এর চেয়ে খারাপ খবর আর হতে পারে না৷ কয়েকদিনের ব্যবধানে সেখানে তিনজন নারীকে যেভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হলো, তা অবর্ণনীয়৷ কিন্তু আমরা যদি মুখ না খুলি, সেটাও হবে অন্যায় – লিখেছেন ডয়চে ভেলের গ্রেহেম লুকাস৷

DW Bengali Grahame Lucas
ছবি: DW/Matthias Müller

প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং তাঁদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা যে কোনো দেশের গণতন্ত্রের অপরিহার্য উপাদান৷ নারীর অধিকার মানবাধিকার থেকে আলাদা কিছু নয়৷ অথচ যে দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গর্ব বোধ করে, যে দেশটির কাছে বিশ্বের মানুষের অনেক প্রত্যাশা, সেই ভারতে এই অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে চরম মাত্রায়৷

গত ২রা জুন উত্তর প্রদেশের পুলিশ ২২ বছর বয়সি এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে, যাঁকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়৷ কেবল তাই নয়, হত্যা করার আগে তাঁকে অ্যাসিড পানে বাধ্য করা হয় এবং তাঁর মুখ অ্যাসিডে ঝলসে দেয়া হয়৷

এর সপ্তাহখানেক আগে ওই এলাকা থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে ‘নিম্ন বর্ণের' দলিত সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে৷ গণধর্ষণের পর তাঁদের হত্যা করা হয় গাছে ঝুলিয়ে৷

ওই ঘটনার পর ভারতীয় পুলিশ ‘উচ্চ বর্ণের' যাদব সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে৷ আর ধর্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়ায় বরখাস্ত করা হয় দুই পুলিশ সদস্যকে৷ যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেন৷ অল্প কয়েকজন সাংবাদিক মুখ্যমন্ত্রীরও সমালোচনা করেছেন এবং তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন৷

২০১২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা দেশটিতে নারী নির্যাতনের সামগ্রিক চিত্রকে সামনে নিয়ে আসে৷ ওই ঘটনার পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো ভারত৷ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের প্রতি ভারতের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে৷

গণদাবির মুখে ভারতের তখনকার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ধর্ষণের পর মৃত্যুর ঘটনায় অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে৷ সন্দেহভাজন ধর্ষকদের বিচারের জন্য চালু করা হয় দ্রুত বিচার আদালত, নারীদের নিরাপত্তায় খোলা হয় পুলিশের একটি নতুন ইউনিট৷ কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো ভারতকে দেখিয়ে দিল – এই সংকট সমাজের কতটা গভীরে পৌঁছে গেছে৷

সরকার ধর্ষণ বন্ধে একটি আইনি কাঠামো দাঁড় করাতে পারে এবং আদালত সে অনুযায়ী অপরাধীর বিচার করে সাজা দিতে পারে৷ কিন্তু পরিস্থিতি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে ভারতকে এর চেয়েও বেশি কিছু করতে হবে৷ ধর্ষণ সেখানে একটি সামাজিক সংকটের চেহারা নিয়েছে, কেউ কেউ একে বলছেন একটি ‘সামাজিক ব্যাধি'৷

ভারতে একজন নারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যেমনই হোক, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর জীবন চলে স্বামী ও পরিবারের মর্জিতে৷ তাঁদের যেন সব সময় ‘অধস্তন' হয়েই থাকতে হবে৷ আর ভারতের সনাতনি গোঁড়া সমাজ কাঠামো এর পারিবারিক সংস্কৃতির মাধ্যমে, ধর্মের মাধ্যমে, ভারতীয় মিথলজির মাধ্যমে, এমনকি বলিউডের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নারীদের ওই ভূমিকায় থাকতে বাধ্য করে৷

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পর ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী মেনকা গান্ধী একটি ‘রেপ ক্রাইসিস সেল' গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন৷ নতুন সরকারের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ কিন্তু ভারতীয় সমাজকে এই ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ জন্য প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে৷ জনগণকে বোঝাতে হবে যে, নিজেদের একুশ শতকের একটি সভ্য জাতি হিসাবে দাবি করতে হলে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, সমাজে নারীর অবদানকে সবার আগে স্বীকৃতি দিতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ