বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশে সরকারের ‘কঠোর নিয়ন্ত্রণ' চলছে বলে পর্যবেক্ষণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর৷ ২০১৫ সালে বৈশ্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে একথা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
[No title]
গত বছর একদিকে ব্লগার ও বিদেশিরা জঙ্গি হামলার লক্ষ্যে ছিলেন বাংলাদেশে৷ আবার অন্যদিকে সরকারের চোখ রাঙানি হজম করতে হয়েছিল গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজকে, জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ৷ এছাড়া একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ‘ত্রুটিগুলো' প্রশমন না হওয়াতে ‘ন্যায়বিচার' হচ্ছে না বলেও দাবি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংগঠনটির৷
এইচআরডাব্লিউ-র এই প্রতিবেদনের সঙ্গে পুরোপুরি একমত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এম হাফিজ উদ্দিন খান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের কোনো স্বাধীনতা নেই৷ সরকার তো আগেই কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে গেছে৷ সবাই ভয়ভীতির মধ্যে আছে৷ বিরোধীপক্ষ এখন সভা-সমাবেশ করতে পারছে, এটা ঠিক৷ কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রচুর মামলা হচ্ছে৷ আমরা বুঝি না এর কতগুলো মামলা সঠিক আর কতগুলো সাজানো৷''
অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা ভয়ে ভয়ে আছি, কথা বলতে পারছি না৷ টেলিভিশনের টক শোতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি৷ কারণ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি না আমরা৷''
গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের নয়া কৌশল
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছে বহুজাতিক বিভিন্ন কোম্পানি৷ না, এমনিতেই নয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এমন সিদ্ধান্ত৷ এই কর্তৃপক্ষ চায় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করতে, এক ভিন্ন উপায়ে৷
ছবি: DW
শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো
প্রথম আলো পত্রিকার প্রচার সংখ্যা পাঁচ লাখ বলে দাবি করা হয়৷ এটি বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিক৷ অনলাইনেও পত্রিকাটি সমান পাঠক প্রিয়৷
ছবি: DW
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিজ্ঞাপন বন্ধ
গত ১৬ই আগষ্টের পর থেকে পত্রিকাটিতে নির্দিষ্ট কিছু বিজ্ঞাপন কমে যায়৷ বিশেষ করে মোবাইল ফোন ও কহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রথম আলোতে তাদের পণ্য এবং সেবার বিজ্ঞাপন দেয়া কার্যত বন্ধ রেখেছে৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপনের তারতম্য
জুলাই মাসে প্রথম আলো গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৩০ হাজার ৭০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভস থেকে পাওয়া গেছে এই তথ্য৷
ছবি: DW
নয় কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কমে গেছে
গ্রামীণ ফোনের ভাষ্য অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষে নির্দেশে বন্ধ হয়েছে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে বিজ্ঞাপন৷ রায়ান্স আর্কাইভসের হিসেব অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ২৪ কোটি ৮৭ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার৷ সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো মোট বিজ্ঞাপন পায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ২৮ হাজার ৯০০ টাকার৷ জুলাই মাসের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম আলো ৯ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন কম পেয়েছে৷
ছবি: DW
ক্ষতির মুখে ডেইলি স্টারও
বিজ্ঞাপনে ধস নেমেছে প্রথম আলোর সহযোগী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারেও৷ পত্রিকাটিতে জুলাই মাসে গ্রামীণ ফোন, রবি, বাংলা লিংক, এয়ারটেল, টেলিটক, প্যাসিফিক টেলিকম এবং ইউনিলিভার থেকে বিজ্ঞাপন পেয়েছে মাসে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকার৷ আর সেপ্টেম্বর মাসে পেয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকার বিজ্ঞাপন৷ ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক৷
ছবি: DW
কাদের নির্দেশে বন্ধ হচ্ছে বিজ্ঞাপন?
ডয়চে ভেলেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে গ্রামীণ ফোন ‘কর্তৃপক্ষ’ বলতে কাদের বুঝিয়েছে, তা পরিষ্কারভাবে জানায়নি৷ তবে আল-জাজিরা সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে৷
ছবি: DW
6 ছবি1 | 6
গত বুধবার ৬৫৯ পৃষ্ঠার ‘বিশ্ব প্রতিবেদন ২০১৬' প্রকাশ করে এই নিউ ইয়র্কে অবস্থিত এই মানবাধিকার সংস্থাটি৷ তাতে ৯০টি দেশ নিয়ে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর, সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে৷ যাতে প্রাণ হারায় অগুন্তি সাধারণ মানুষ, আহতের সংখ্যাও ছিল অসংখ্য৷ হরতাল-অবরোধে শিশুদের স্কুলে শিক্ষাগ্রহণের মতো বিষয়গুলো বাধাগ্রস্ত হয়৷ অন্যদিকে ঐ সময়ে সহিংসতা দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন, বিরোধী কর্মীদের বন্দি এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয়ে নজরবন্দি করে রাখার ঘটনা ঘটে৷ সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয় যে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ একটি ‘স্বেচ্ছাচারিতা পূর্ণ' পথে চলতে থাকে৷ আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অবতীর্ণ হতে দেখা যায় বাকস্বাধীনতা ‘হরণ' এবং সুশীল সমাজকে ‘ছত্রভঙ্গ' করার ভূমিকায়৷
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মন্তব্য তুলে ধরে এইচআরডাব্লিউ-র এশিয়া অঞ্চলের নির্বাহী পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘‘প্রধান দলগুলো নির্বাচন বয়কট করায় সংসদ বিরোধীদলশূন্য হয়ে পড়েছে৷ বর্তমানে সরকার সংসদের বাইরেও বাকস্বাধীনতা হরণের পথ বেছে নিয়েছে৷''
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
ব্লগার হত্যা প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘মর্মান্তিক বিষয় হলো ব্লগার হত্যার পর সরকার ব্যবস্থাগ্রহণের পরিবর্তে বাকস্বাধীনতা চর্চায় উল্টো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে৷'' প্রতিবেদনে আরো বলা হয় যে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়ে পাঁচজন ব্লগার প্রাণ হারান৷ হুমকির মুখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে আত্মগোপনে যেতে হয় অনেক ব্লগার, লেখক ও প্রকাশককে৷
শিয়া সম্প্রদায়ের মিছিল ও হিন্দু মন্দিরে হামলায় আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে একই বছর৷ সরকারের বিরুদ্ধে দমনের অভিযোগ তুলে ধরে এইচআরডাব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে হত্যা, গুম এবং নির্বিচারে আটকের মতো বেশ কয়েকটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে বলেও দাবি করে৷ এছাড়া বাংলাদেশে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকে কঠোর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে৷
বর্তমান সরকার কি সত্যিই বাকস্বাধীনতায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷