২০২৩ সালে নাগরিকদের মদ্যপানের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে ক্যানাডা৷ নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসে নাগরিকদের অ্যালকোহলমুক্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, কেউ যদি নিতান্তই মদ্যপান করতে চান, তবে তা করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ এবং প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুইবার মদ্যপান করা কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
এর আগে ২০১১ সালের নির্দেশনায় এক নারীকে সপ্তাহে সর্বাধিক ১০ পেগ ও পুরুষকে সর্বোচ্চ ১৫ পেগ মদ্যপানের অনুমোদন দিয়েছিল হেলথ ক্যানাডা৷
এদিকে ক্যানাডিয়ান সেন্টার অন সাবস্ট্যান্স ইউজ অ্যান্ড অ্যাডিকশন (সিসিএসএ) থেকে প্রায় ৯০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে মডারেট ড্রিংকিং বা পরিমিত মদ্যপানের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিবরণও দেওয়া হয়েছে৷
বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন নেচারে ২০২২ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় অল্প পরিমাণ মদ্যপানও মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, এমন প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে৷
এই গবেষণায় ইউকে বায়োব্যাংক থেকে পাওয়া ৩৬ হাজার মধ্যবয়স্ক এবং বয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের স্ক্যান পরীক্ষা করা হয়েছে৷ দেখা গেছে, যেসব পঞ্চাশ বছর বয়সি আগের বছর দৈনিক ১৭৫ মিলিলিটার ওয়াইন বা আধা লিটার বিয়ার পান করেছেন, তাদের মস্তিষ্ক এর অর্ধেক পরিমাণ বা একেবারেই মদ্যপান না করাদের চেয়ে দেড় বছর বেশি বুড়িয়ে গেছে৷
গবেষকদের দাবি, মদ্যপানের ফলে বয়স দ্রুত বাড়ে৷ মডারেট ড্রিংকিং বা পরিমিত মদ্যপানে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা হিসাবে দেখা হচ্ছে এটিকে৷
ছয়টি গ্লাসে পৃথিবীর ইতিহাস
ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক টম স্ট্যানডেজের ২০০৫ সালে প্রকাশিত একটি বই নজর কেড়েছিল অনেকের৷ মূলত সেই বইটি নিয়ে এই ছবিঘর৷ পানীয় কেমন করে পৃথিবীর ইতিহাস লিখেছে সেই গল্প বলেছেন লেখক৷
ছবি: picture-alliance/Phanie
ঐতিহাসিক ঘটনার মজার দিক
ব্রিটিশরা যুক্তরাষ্ট্র কেন ছাড়ল? একটা বড় কারণ কিন্তু রামের (এক রকমের মদ) ওপর কর বসানো৷ আচ্ছা কফির সঙ্গে ফরাসী বিপ্লব জড়িয়ে আছে ওতোপ্রোতভাবে, জানতেন আপনি? কিংবা এটা জানেন যে,একজন সোভিয়েত জেনারেল কোকাকোলাকে ভদকা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন?
ছবি: picture-lliance/The Holbarn Archive/Leemage
শুরুটা বিয়ারের গ্লাসে
বরফ যুগের পরপরই বিয়ারের প্রচলন শুরু৷ অর্থাৎ যিশুর জন্মের প্রায় ১০ হাজার বছর আগে৷ ‘ফার্টাইল ক্রিসেন্ট’ নামে পরিচিত বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য ও মিশরে এর জন্ম৷ তখন এখানে এত বুনো শস্য জন্মাত যে উদ্বৃত্ত শস্য ভিজিয়ে রেখে পরে তা থেকে বিয়ার তৈরি শিখে ফেলে স্থানীয়রা৷ এই মদিরায় এমনই মজেছিল তারা এর বিপুল উৎপাদন শুরু করে দেয়৷ তারা খামার তৈরি করে এবং এক জায়গায় স্থায়ী হতে শেখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
ওয়াইনের গ্লাসে ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’
মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের অ্যাসিরিয়া রাজ্যে প্রথম ওয়াইন তৈরি হয়৷ ওয়াইন মূলত সমাজে শ্রেণিবিভাজনকে স্পষ্ট করে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করে৷ তখন এটি ছিল এলিটদের পানীয়৷ পরবর্তীতে গ্রিকদের কাছে এসে ওয়াইন আরেকটু সহজলভ্য হলেও ভালো ওয়াইনগুলো ছিল উঁচুশ্রেণির কাছেই৷ রোমানরাও সেই একইপথ অনুসরণ করে৷ তখন বিয়ার ছিল বারবারিয়ানদের পানীয়৷
ছবি: picture allianc/dpa/R.Weihrauch
ইউরোপের অ্যালকোহল
আরবে প্রথম অ্যালকোহল আবিষ্কার হলেও তা ঔষধের কাজে ব্যবহৃত হত৷ কিন্তু ইউরোপীয়রা মদ হিসেবে এর এমন সম্ভাবনা দেখল যে, সারা পৃথিবীতে এর বাজারজাত করা শুরু করল৷ এতে তাদের উপনিবেশ তৈরি করা অনেক সহজ হলো৷ যেমন, ১৬০০ শতাব্দীর দিকে তারা ক্যারিবীয় দ্বীপ বারবাডোসে আখ ও চিনি উৎপাদন শুরু করল৷ রামের অনেক চাহিদা ছিল এবং রামের জন্য এই চিনি দরকার ছিল৷
ছবি: picture-alliance/imageBroker/Creativ Studio Heinemann
রামের কারণে হাতছাড়া অ্যামেরিকা
১৭৩৩ সালে ব্রিটিশরা অ্যামেরিকাতে নিয়ম করল, তারা যদি ব্রিটিশ কলোনি ছাড়া আর কোথাও থেকে গুড় আমদানি করে তাহলে কর দিতে হবে৷ কিন্তু অ্যামেরিকান কলোনিস্টরা তা না মেনে চোরাই পথে উচ্চ মানের ফ্রেঞ্চ গুড় আমদানি করতে লাগল৷ এভাবেই ব্রিটিশ আইন লঙ্ঘন করতে করতে একটা সময় বিপ্লবী যুদ্ধ শুরু করল অ্যামেরিকানরা৷
ছবি: picture-alliance/empics/S. Parsons
কফি বদলে দিল সমাজব্যবস্থা
মধ্যযুগে আরবে কফির প্রচলন শুরু হলো৷ ইউরোপে এল সতেরশ’ শতাব্দীতে৷ এসেই সাড়া ফেলে দিল৷ ইউরোপের বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীরা দিনের পানীয় হিসেবে কফিকে গ্রহণ করল কারণ, এটা বিয়ার বা ওয়াইনের মতো মাতাল করে না৷ ঠিকঠাক অবস্থায় কাজ করা যায়৷ ইউরোপজুড়ে কফি হাউজ খুলতে লাগল৷ এমনকি ফরাসী বিপ্লবের কারিগররা এই কফিশপগুলোতেই বিপ্লবের নকশা আঁকা শুরু করেন৷
ছবি: DW/K. Schenk
চীনাদের চা হয়ে উঠল আভিজাত্যের প্রতীক
চীনাদের চা প্রথম ডাচরা আমদানি করল সতেরশ’ শতকে৷ ক্রমে ব্রিটিশরাও তা পছন্দ করল৷ প্রথমে উঁচু শ্রেণির মানুষের কাছে ফ্যাশন হয়ে উঠল এই পানীয়৷ পরে নিচু শ্রেণির মানুষেরাও শ্রেণি উন্নয়ন করতে তা পান করতে লাগল৷ বিশেষ করে নারীদের কাছে এই পানীয় হয়ে উঠল খুবই আকর্ষণীয়৷ কারণ সন্ধ্যার পর কফি হাউজে তাদের ঢোকা নিষেধ ছিল৷ কিন্তু চায়ের দোকানে যেতে পারতেন তারা৷
ছবি: picture-alliance/Phanie
চা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতা
চায়ের জনপ্রিয়তা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রভাবশালী করে তুলল৷ তারা ব্রিটেনে চা রপ্তানি করত এবং এতই আয় করত যে, ব্রিটিশ সরকারি সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারত৷ তারা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে চা রপ্তানি করা শুরু করল, তাও বিনা শুল্কে৷ অথচ তারা ব্রিটিশ সরকারকে বাধ্য করল স্থানীয় অ্যামেরিকান ব্যবসায়ীদের ওপর কর বসাতে৷ মার্কিন বিপ্লবের অনেক কারণের একটি এই কর৷
আরো একশ’ বছর পর কোকা-কোলা আবিষ্কার হলো যুক্তরাষ্ট্রে৷ বৈশ্বিক পানীয়র তালিকায় এটিই অ্যামেরিকার সবচেয়ে বড় অবদান৷ গ্যাস মিশ্রিত পানির সঙ্গে কোকা মিশিয়ে এই পানীয় তৈরি করে খুব দ্রুতই জনপ্রিয় করে তোলেন জন পেমবার্টন নামের এক ব্যক্তি৷ প্রথমে মার্কিনিরা পানীয়টি নিয়ে খুবই রক্ষণশীল থাকলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা পৃথিবীতে একে ছড়িয়ে দেন৷ অর্থনীতি ও রাজনীতিতেও ভূমিকা রাখতে শুরু করে কোকা-কোলা৷