ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে আগামী ৮ই জুন মধ্যকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন৷ দৃশ্যত তিনি তাঁর ‘কঠিন ব্রেক্সিট’ নীতির জন্য জনসমর্থন খুঁজছেন৷
বিজ্ঞাপন
‘স্ন্যাপ ইলেকশানের' কথা ঘোষণা করার সময় মঙ্গলবার মে বলেন যে, তিনি বুধবার সংসদীয় অনুমোদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া শুরু করবেন – কেননা ব্রিটেনে মধ্যকালীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে পার্লামেন্টের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন নিশ্চিত করতে হয়৷
মধ্যকালীন নির্বাচনের ফলাফল যদি মে এবং কনজারভেটিভদের পক্ষে যায়, তাহলে অবশ্যই মে-র কর্তৃত্ব বাড়বে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রেক্সিট সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনায় মে দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে পার্লামেন্টে কনজারভেটিভদের আসনসংখ্যা বাড়লে, মে জানবেন যে, ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনায় পার্লামেন্ট তাঁর পাশে থাকবে৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Goodman
7 ছবি1 | 7
ব্রেক্সিট বিরোধীরা
দেশে ব্রেক্সিট বিরোধীদেরও কোনো অভাব নেই, যেমন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জন, যিনি স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা সংক্রান্ত একটি দ্বিতীয় রেফারেন্ডাম চান৷ মে-র ঘোষণার পর স্টার্জন টুইট করেন: ‘‘টোরিরা যুক্তরাজ্যেকে আরো দক্ষিণপন্থি করে তোলার সুযোগ দেখছে, দেখছে একটি কঠিন ব্রেক্সিট ও আরো বেশি সামাজিক সুযোগ-সুবিধা কমানোর সম্ভাবনা৷ চলুন আমরা স্কটল্যান্ডের জন্য প্রতিরোধে নামি৷''
আইরিশ রিপাবলিকান সিন ফেইন পার্টি ঘোষণা করেছে যে, তারা উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য ইইউ-তে একটি বিশেষ স্ট্যাটাস পাবার প্রচেষ্টা করবে৷
অপরদিকে লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন মে-র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন যে, ‘‘লেবার দেশকে একটি কার্যকরি বিকল্প পেশ করবে৷''
লিবারাল ডেমোক্র্যাটদের বর্তমানে মাত্র আটজন এমপি আছে৷ তাদের নেতা টিম ফ্যারন সঙ্গে সঙ্গে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন: ‘‘যদি একটি কঠিন ব্রেক্সিটের বিপর্যয় এড়াতে চান, যদি ব্রিটেনকে সিংগল মার্কেটে রাখতে চান, যদি একটি মুক্ত, সহিষ্ণু ও ঐক্যবদ্ধ ব্রিটেন কামনা করেন, তাহলে এটাই আপনার সুযোগ৷''