1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যপ্রাচ্যের সংকট কপালে ভাঁজ ফেলেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের

২৭ জুন ২০২৫

ভারতের সিংহভাগ বাণিজ্য হয় ইরান সংলগ্ন হরমুজ প্রণালী দিয়ে। মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আমদানি এবং রপ্তানি বাণিজ্যের মোট পরিমাণ প্রায় কয়েকশ বিলিয়ন ডলার।

হরমুজ প্রণালী দিয়েই ভারতেই বেশিরভাগ বাণিজ্য হয়ে থাকেছবি: Hamad I Mohammed/REUTERS

ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ভারতীয় বাজারে উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।

ইরানের পরমাণু কেন্দ্রে যেদিন অ্যামেরিকা বিমান হামলা চালায়, তার দেড় দিন বাদে গত সোমবার ভারতের শেয়ার বাজার ভয়ংকর ধসের মুখোমুখি হয়। সেনসেক্স ৬০০ পয়েন্ট নেমে যায়। নিফটি পৌঁছে যায় লালের ঘরে। বস্তুত, ইউক্রেন যুদ্ধের সময় থেকেই বার বার আশঙ্কার ধস দেখেছে ভারতের শেয়ার বাজার। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শেয়ার বাজার ক্রমশ নীচের দিকে নামতে থেকেছে। এর মূল কারণ, পশ্চিম এশিয়া বা মধ্য প্রাচ্যের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক সুপ্রাচীন এবং বিপুল।

প্রথমেই কয়েকটি সংখ্যার হিসেব দেওয়া যাক। ২০২৫ অর্থবর্ষে শুধুমাত্র ইরানে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ এক দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। ওই অর্থবর্ষে ইরান থেকে ভারত আমদানি করেছে ৪৪১ দশমিক আট বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই আমদানির সিংহভাগই হলো তেল। অন্যদিকে, ভারত ইরানকে রপ্তানি করে বাসমতি চাল, কলা, সোয়াবিন, ডাল এবং প্রায় ২৬ মিলিয়ন ডলারের চা।

ইসরায়েলে ভারত রপ্তানি করে দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে ইসরায়েল থেকে ভারত আমদানি করে এক দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশ ছাড়াও ভারতের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে ইরাক, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং আরব আমিরাতের সঙ্গে। এসব দেশে ভারত রপ্তানি করে প্রায় আট দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য। আমদানি করে ৩৩ দশমিক এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই অঞ্চলে ভারত বিপুল টাকার মশলা রপ্তানি করে।

মধ্যপ্রাচ্যে সংকট শুরু হওয়ার পর ভারতের এই বিশাল বাণিজ্যে নানা বাধা আসতে শুরু করেছে। খেয়াল রাখতে হবে, ইউরোপের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যেও মধ্যপ্রাচ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। পাকিস্তানকে বাইপাস করে ভারত যে বাণিজ্য পথ ব্যবহার করে সেখানে ইরানের ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের চাবাহার বন্দরের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের কৌশলগত চুক্তি আছে। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে ইরানের এই পোর্টের মাধ্যমে ভারত মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে বাণিজ্য করে।

এর পাশাপাশি আছে হরমুজ প্রণালী। ভারতের সিংহভাগ অপরিশোধিত তেল এবং অর্ধেকের বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আসে এই অঞ্চল থেকে। এই ২১ মাইলের সরু রাস্তা দিয়ে ভারতের ৮০ শতাংশ তেল এবং গ্যাস আসে।

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

সংকটের শুরু যেভাবে

ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারতের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথে নানা সমস্যা শুরু হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরা এই পথে আক্রমণ চালিয়েছে। ফলে ভারতের বহু জাহাজ রাস্তা বদলে আফ্রিকা ঘুরে কেপ অফ গুড হোপ প্রণালী হয়ে জিনিসপত্র আনা-নেওয়া করেছে। এবার ইরান সংলগ্ন অঞ্চলেও উত্তেজনা তৈরি হওয়ার ফলে জাহাজ যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে ভারতের বাজারে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, তেলের দাম লাফিয়ে বাড়তে পারে। অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়তে শুরু করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতের সার্বিক রপ্তানি ছয় শতাংশ বেড়ে ৮২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। চলতি অর্থবর্ষে মনে করা হয়েছিল তা বেড়ে ৯০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। কিন্তু গত দুই মাসে দুই দশমিক এক সাত শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

দীর্ঘদিন ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের ট্রেড প্রোমোশনের ডিরেক্টর ছিলেন সুমিত দত্ত মজুমদার। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, "ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক সেই সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে। হরমুজ প্রণালী মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান দরজা বলা যেতে পারে। ফলে এই রাস্তায় সমস্যা তৈরি হলে ভারতের বাণিজ্য বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।" সুমিত জানিয়েছেন, এর ফলে একদিকে ভারতের রপ্তানি বাণিজ্য মার খেতে শুরু করেছে, অন্যদিকে ভারতে তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে দেশে তেলের দাম বাড়তে শুরু করতে পারে। আি জের গোটা বাজারের উপর পড়ার আশঙ্কা আছে।

মুম্বইয়ের ব্যবসায়ী এবং টেকনোক্রাফট ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান শরদ কুমার সরফ সংবাদমাধ্যম মিন্টকে বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে ভারতের বাণিজ্যে। তেলবাহী জাহাজগুলি ইতিমধ্যেই নতুন পথে আসতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই এর প্রভাব তেলের দামে পড়তে পারে।''

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)-র প্রধান অজয় শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ''বাণিজ্য জাহাজের পথ পরিবর্তন মানে একাধিক অঙ্কের পরিবর্তন। এর ফলে পণ্য সরবরাহে সময় লাগবে বেশি। বদলে যাবে বিমার অর্থের পরিমাণ। সবচেয়ে বড় কথা সাপ্লাই চেনে নতুন নতুন সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে। অতিরিক্ত এই অর্থের বোঝা চাপবে বাজারের উপর।'' অজয়ের মতে, ইরাক, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া-সহ সমগ্র পশ্চিম এশিয়ার বাণিজ্য সম্পর্ক এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বস্তুত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সংঘাত শুরু হওয়ার পর লোহিত সাগর দিয়ে ভারতের জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে শুরু করে। দিল্লির একটি থিংক ট্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ইউরোপ এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ এই রাস্তা দিয়ে হয়। লোহিত সাগর হয়ে ইরানের পাশ দিয়ে জাহাজ ভারতের বন্দরে পৌঁছায়। অ্যামেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যেও ভারত এই রাস্তা ব্যবহার করে। ভারতের সার্বিক আমদানির ৩৪ শতাংশ পণ্য এই রাস্তা দিয়ে আসে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট না কাটলে ভারত ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ