ইরাক নিয়ে সংবাদভাষ্য
১৭ জুন ২০১৪উদ্বেগের কারণ আছে বৈকি: ‘ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামি রাষ্ট্র' বা আইসিস নামধারী গোঁড়া ইসলামপন্থিদের দশ হাজার যোদ্ধা বাগদাদের দিকে এগোচ্ছে৷ তাদের লক্ষ্য হল রাজধানী দখল করে, প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি-কে বিতাড়ন করে ইরাকে শিয়াদের শাসনের অন্ত ঘটানো৷ তারা চায়, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে যে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রগুলি সৃষ্টি হয়েছে, তা বিনাশ করে মুসলমান ‘‘উম্মা''-কে একটি নূতন শরিয়া-শাসিত খিলাফতে সংঘবদ্ধ করা৷
আইসিস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি-র নেতৃত্বাধীন সুন্নি জিহাদিরা যে শুধু ইরাকী শিয়াদের চ্যালেঞ্জ করছে এমন নয়; তারা গোটা অঞ্চলটিতে আগুন জ্বালাতে চলেছে৷ শিয়া-অধ্যুষিত ইরান ইরাকি শিয়াদের সাহায্য করতে প্রস্তুত, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতাতেও নাকি তেহরান নেতৃত্বের কোনো আপত্তি নেই৷ যদিও প্রেসিডেন্ট ওবামা এখনো চিন্তা করছেন, এই নতুন ইরাক সংঘাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে পারে৷
ইরানের ধর্মীয় অথবা রাজনৈতিক যুক্তিতে কোনো ফাঁক নেই: লেবাননের হেজবোল্লাহ যেমন সিরিয়ার অ্যালাউইট প্রেসিডেন্ট-কে সাহায্য করেছিল এবং করছে, ঠিক সেভাবেই ইরাকের শিয়াপন্থিদের সাহায্য করাটা তেহরানের পক্ষে একটা স্বাভাবিক কাজ৷ হেজবোল্লাহ, সিরিয়া, ইরাক ও ইরানের শিয়াপন্থি মৈত্রী যাতে বজায় থাকে, তার ব্যবস্থা করা তেহরানের আঞ্চলিক রাজনৈতিক স্বার্থের অঙ্গ – কেননা সেভাবেই ইরানের প্রভাব বজায় থাকবে৷ অপরদিকে যেখানেই হোক শিয়াদের সাহায্য করাটা ইরানের তরফেও জিহাদ, অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধের সমতুল৷
সিরিয়ায় আজ বহুদিন ধরেই বস্তুত গৃহযুদ্ধ চলেছে৷ আসাদের বাহিনী লড়ছে বিরোধীদের বিরুদ্ধে; বিরোধীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রত; আইসিস লড়ছে দেশের গণতন্ত্রীকরণ রোখার প্রচেষ্টায়৷ এ গৃহযুদ্ধে বিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা – তবুও বোঝা যাচ্ছে যে, আসাদ পূর্বাপর ক্ষমতায় থাকবেন এবং গৃহযুদ্ধ চলবে৷ উত্তর ইরাকে কুর্দরা নিজেদের ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে এবং তারা আইসিসের তোয়াক্কা করে না৷ সিরিয়া সীমান্তে যা কিছু ঘটছে, তা আবার তুরস্কের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ জর্ডান সিরিয়া থেকে পলাতক উদ্বাস্তুদের মূল ভারটা বইতে বাধ্য হচ্ছে – অথচ জর্ডানের রাজতন্ত্রের শিকড় যে কতো গভীর, তা কারো জানা নেই৷
তারপরে আছে সৌদি আরব – উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বী; মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মীয় আধিপত্যের ক্ষেত্রেও দু'টি দেশ পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী; মুসলমান ধর্মের দুই পবিত্র স্থান মক্কা ও মেদিনা ঐ সৌদি আরবেই৷ ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী সৌদি আরব নিজেই একটি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র, যারা বিশ্বব্যাপী ইসলাম ধর্মের প্রসারে বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইসলামি গোষ্ঠীগুলি গড়ে তোলায় সাহায্য করে থাকে৷ সৌদি রাজতন্ত্রের দ্বিবিধ নীতি হল তাদের জিহাদিদের ভীতি ও যুগপৎ জিহাদিদের প্রতি মদত – যাতে সৌদি শাসকরা তাদের লক্ষ্য না হয়ে পড়েন৷
আইসিসের বর্তমান অভিযান রোখা যদি সম্ভবও হয়, তা বলে মধ্যপ্রাচ্যের জিহাদি বিপদ কাটছে না৷ ইরাকের এই নয়া যুদ্ধ, বাগদাদ-কে কেন্দ্র করে যুদ্ধ শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে এক নতুন ধর্মযুদ্ধের সূচনা হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলের অস্তিত্ব আরো বেশিভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে৷ এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমি বিশ্ব নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না৷