মধ্যপ্রাচ্যে দেড় হাজার সেনা পাঠাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২৫ মে ২০১৯
ইরানের সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে মধ্যপ্রাচ্যে দেড় হাজার সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে দেশটি এটাও জানিয়েছে যে এখনই ইরানের সঙ্গে কোন সামরিক সংঘাতে জড়াতে চায় না ওয়াশিংটন৷
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার জানিয়েছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে জটিলতা তৈরি হওয়ায় সুরক্ষার খাতিরে মধ্যপ্রাচ্যে দেড় হাজারের মতো সেনা পাঠানো হচ্ছে৷ তবে দেশটির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সংঘাতের যে সম্ভবনার কথা শোনা যাচ্ছে তা ততটা জোরালো নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা মধ্যপ্রাচ্যে সুরক্ষা চাই৷ আমরা এজন্য তুলনামূলকভাবে ছোট আকারের সৈন্যদল সেখানে পাঠাচ্ছি, যাদের অধিকাংশেরই কাজ হবে সুরক্ষা নিশ্চিত করা৷''
অ্যামেরিকার বড় শত্রু কারা?
ইরানের সঙ্গে অনেকটা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে অ্যামেরিকার৷ আর চীনের সঙ্গে চলছে বাণিজ্য যুদ্ধ৷ মার্কিনিদের বিবেচনায় তাঁদের শত্রুদের চিনে নিন ছবিঘরে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
উত্তর কোরিয়া
জরিপের মাধ্যমে অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে গ্যালাপ৷ প্রতিষ্ঠানের ২০১৮ সালের জরিপে দেখা যায়, গত কয়েক বছরের মতো এবারও অ্যামেরিকার শত্রু তালিকার শীর্ষ দেশ হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নাম আছে৷ ২০১৬ সালে ১৬ ভাগ মানুষ উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে হুমকি হিসাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে এসে হুমকি বিশ্বাসকারীদের সংখ্যা ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়া
অ্যামেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার শত্রুতার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের৷ এর মধ্যে উত্থান-পতনও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ ২০১৬ সালে ১৫ শতাংশ অ্যামেরিকান বলেছেন, রাশিয়া তাঁদের সবচেয়ে বড় শত্রু৷ ২০১৮ সালে গিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে৷
চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্য যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও৷ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে চীন৷ দুই দেশের সাম্প্রতিক কিছু সিদ্ধান্ত উভয়ের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে৷ ২০১৬ সালে অ্যামেরিকার ১২ শতাংশ মানুষের বিবেচনায় চীন ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শত্রু৷ তবে, ২০১৮ সালে দেশটিকে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ১১ শতাংশ অ্যামেরিকান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অ্যামেরিকানদের কাছে তাঁদের শত্রু তালিকায় শীর্ষে ছিল ইরান৷ পরের কয়েক বছর পরিস্থিতি ভালো হয় কিছুটা৷ তবে, ২০১৫ সালে ইরানকে নিজেদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ৯ শতাংশ অ্যামেরিকান৷ ২০১৮ সালে এমন চিন্তার মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ শতাংশে৷
ছবি: Imago/UPI//Imago/Russian Look
সিরিয়া
গ্যালাপের পাশাপাশি অ্যামেরিকার শত্রুদের তালিকা প্রকাশ করে থাকে ক্যানাডাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন বা সিআরজি৷ তাদের বিবেচনায় ইরান, রাশিয়া ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে সিরিয়ায় ক্ষমতাসীনদের সখ্যের কারণে সিরিয়ার সঙ্গে অ্যামেরিকার বিরোধ হয়েছে৷ আবার অ্যামেরিকা-ইসরায়েল মৈত্রীর ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থানে আছে সিরিয়া৷ ভূ-রাজনৈতিক কারণে সিরিয়ার উপর আধিপত্য রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Elfiqi
ভেনেজুয়েলা
সিআরজি বলছে, ভেনেজুয়েলার তেলের মজুদ ও সামাজিক-রাজনৈতিক কারণে অ্যামেরিকার সঙ্গে তাঁদের বিরোধ দীর্ঘদিনের৷ যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভেনেজুয়েলা, তবুও সেই বিরোধ কমেনি মোটেও৷ দেশটির ক্ষমতাসীন মাদুরো সরকারকে হটাতে তৎপর অ্যামেরিকা৷ সম্প্রতি অ্যামেরিকার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Miraflores
6 ছবি1 | 6
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমি মনে করি ইরান এই মুহূর্তে যুদ্ধে যেতে চাচ্ছে না৷ এবং আমি নিশ্চিতভাবে এটা মনে করি যে তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না৷ তবে, তা সত্ত্বেও তারা পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না৷''
প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহে ইরানের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে দেশ দু'টির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে৷ দেশটি এসব নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ২০১৫ সালে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে নতুন করে দর কষাকষি করতে চায়৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে সেই চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন৷
চলতি মাসের শুরুর দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে বোমারু বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পেট্রিয়টসহ পারস্য উপসাগরে যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
এদিকে, পেন্টাগন জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে কিছু ঘটনার সঙ্গে ইরান সরকারের হাত রয়েছে ধারণা করায় সেখানে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ সেসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে বাগদাদের গ্রিন জোনে রকেট হামলা, গাল্ফ-এ চারটি তেলবাহী ট্যাংকারে বিস্ফোরক ব্যবহার করে অন্তর্ঘাত এবং সৌদি একটি তেল স্থাপনায় ড্রোন হামলা৷
পেন্টাগনের জয়েন্ট স্টাফ বিষয়ক পরিচালক মাইকেল গিল্ডে এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমরা এসব ঘটনাকে ক্যাম্পেইন হিসেবে দেখছি৷ তবে আমরা মনে করি যে খুবই পরিমিত মাত্রায় মোতায়েনের মাধ্যমে আমরা এই বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছি যে আমরা ইরানে সঙ্গে যুদ্ধবিগ্রহে যেতে চাচ্ছি না৷''
রাশিয়ার এক আইনপ্রণেতা অবশ্য শুক্রবার জানিয়েছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আসন্ন বৈঠকে তুলতে পারে মস্কো৷