1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যপ্রাচ্যে নিরানন্দ রমজানের প্রস্তুতি

২০ এপ্রিল ২০২০

ইফতার মাহফিল বাতিল, মসজিদে নামাজ বন্ধ৷ কোভিড-১৯ মহামারি যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, আনন্দহীন এক রমজান মাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷

ছবি: Reuters

রমজান মাস আত্ম পরিশুদ্ধি ও সামাজিকতার মাস৷ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীরা পবিত্রতম এ মাসে সকাল-সন্ধ্যা রোজা রাখেন এবং তারপর পরিবার বা সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে ইফতার করেন৷ মাসের শেষে রয়েছে ঈদুল ফিতরের উৎসবও৷

কিন্তু এ বছর নভেল করোনা ভাইরাসের দ্রুত সংক্রমণে লাখ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে লকডাউনে আটকা পড়েছেন৷ সৌদি আরব থেকে লেবানন, এমনকি লিবিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশেও পড়েছে করোনার প্রভাব৷ পুরো অঞ্চল জুড়ে মসজিদ বন্ধ রয়েছে৷ এমনকি মুসল্লিদের তারাবির নামাজও বাসায় থেকে পড়তে বলা হচ্ছে৷

সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি আব্দুল আজিজ আল শেখসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের ধর্মীয় নেতা রমজান ও ঈদ এবার ঘরে থেকে পালন করার নির্দেশনা দিয়েছেন৷ মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের মোয়াজ্জিন আলী মুল্লাহ দুঃখপ্রকাশ করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘‘আমাদের অন্তর কাঁদছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই পবিত্র মসজিদে দিন রাত সবসময় ধর্মপ্রাণ মানুষের ভিড় দেখে অভ্যস্ত৷ আমরা মনের গভীরে এ ব্যথা অনুভব করছি৷''

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কাবাতেও নেই মুসল্লিদের আনাগোণা৷ অন্য যেকোনো সময় কাবার চারপাশের চত্ত্বর লোকে লোকারণ্য থাকে৷ গত মাসে উমরাহ হজও বন্ধ করে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ৷

জুলাই মাসের শেষে মূল হজও বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এমন হলে এটিই হবে আধুনিক ইতিহাসে হজ বাতিলের প্রথম ঘটনা৷ এরই মধ্যে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের হজে আসার আগাম প্রস্তুতি না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷

কোনো উৎসব নয়

জেরুসালেম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ হোসেইন রমজান মাসজুড়ে মসজিদে নামাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছেন৷ এছাড়া রমজান মাসের চাঁদ দেখতে একসঙ্গে জ ড়ো না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ীই এসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিশ্বের সব দেশকেই আহ্বান করা হচ্ছে রমজানকে কেন্দ্র করে যাতে বড় যে-কোনো জমায়েত নিরুৎসাহিত করা হয়৷

রমজানকে কেন্দ্র করে ইফতারের পণ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে৷ এবছর বরং মাস্ক, হাতমোজা এবং অন্যান্য চিকিৎসাপণ্য বিক্রি হচ্ছে বেশি৷

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন ৫১ বছরের ইউনুস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি রমজানের সময় কেনাকাটার জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম৷ কিন্তু কোয়ারান্টিনে থাকার জন্য জরুরি কিছু জিনিস এবং বিভিন্ন সুরক্ষা পণ্য কিনেই সেসব অর্থ শেষ হয়ে গেছে৷ এ বছর কোনো বেড়ানো নেই, উৎসব নেই৷ যেখানেই যাই মনে হয় ভাইরাস চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে আছে৷

অর্থনৈতিক অবরোধে বিপর্যস্ত ইরান গত সপ্তাহে তেহরানে কিছু দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও সংক্রমণ আর অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে ভারসাম্য খুঁজতে হচ্ছে দেশটিকে৷

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এখন ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত, মারা গিয়েছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ৷ কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে বাস্তবে এ সংখ্যা আরপো অনেক বেশি হবে৷

দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি দেশটির নাগরিকদের রমজানে বাসায় বসে নামাজ আদায়ের আহ্বান জানিয়েছেন৷

মিশরের রাজধানী কায়রোতে কিছু সড়ক ও বাজারে রমজান উপলক্ষ্যে আলোকসজ্জা করা হয়েছে৷ তবে সব ধরনের রেস্টুরেন্ট ও খাবারের দোকান বন্ধ রয়েছে৷

তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হলেও বাসায় থেকে রোজা রাখতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয় নেতারা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিভিন্ন পরামর্শের তালিকায় বলেছে, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে রোজা থাকার সম্পর্ক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা হয়নি৷'' তবে সংস্থাটি একই সঙ্গে বলছে, ‘‘অন্য সব বছরের মতো সুস্থ মানুষের রোজা রাখলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না৷ তবে অন্য সব রোগের মতো কোভিড-১৯ এর রোগীদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷''

লিবিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে এই সামাজিক দূরত্ব নতুন কিছু নয়৷ দুই সন্তানের মা এবং ৫৪ বছর বয়সি ব্যাংকার করিমা মুনিরের মতে, ‘‘এ বছর আমার জন্য রমজান একটু আগেই এসেছে৷ কারফিউয়ের সময় রমজানের মতোই অফিসের সময় কমে যায়৷ রমজান সবসময় দানের মহিমা নিয়ে আসে৷ এবছর যুদ্ধের কারণে অনেক মানুষ ঘরহারা হয়েছে৷ তাদের সাহায্য দরকার৷''

এডিকে/এসিবি (এএফপি)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ