ইসরায়েল হেজবোল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে পুরোদমে যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে৷ হাইফা শহরের উপর হামলার হুমকির প্রেক্ষাপটে উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে বিশেষ মার্কিন দূত মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন৷
বিজ্ঞাপন
দক্ষিণে গাজায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালানোর পাশাপাশি উত্তরে লেবাননের জঙ্গি হেজবোল্লাহ গোষ্ঠীর সঙ্গেও পুরোদমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে ইসরায়েল৷ সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎস এমন সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ হেজবোল্লাহর নেতা সৈয়দ হাসান নাসরাল্লাহর সাম্প্রতিকতম হুমকির প্রেক্ষাপটে কাৎস হেজবোল্লাহ ও লেবাননের বিরুদ্ধে নতুন কৌশলের সম্ভাবনার উল্লেখ করেন৷ পুরোদমে যুদ্ধ হলে হেজবোল্লাহ গোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং লেবাননের শোচনীয় পরাজয় ঘটবে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন৷
মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বাড়তি উত্তেজনা এড়াতে জোরালো উদ্যোগ নিচ্ছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ দূত অ্যামস হোখস্টাইন লেবানন সফর করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছেন৷ গত প্রায় আট মাস ধরে লেবাননের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে হেজবোল্লাহ গোষ্ঠী গোলাগুলি চালানোর পর ইসরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফার উপর হামলার হুমকি দিচ্ছে৷ চীনা ও ভারতীয় কোম্পানি সেই শহরের বন্দর পরিচালনা করে৷ গত সপ্তাহে লেবানন সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বিশাল সংখ্যায় রকেট ও ড্রোন হামলা ঘটেছে৷ তার আগে ইসরায়েলের এক হামলায় হেজবোল্লাহর সবচেয়ে বড় কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছিল৷ হেজবোল্লাহ জানিয়েছে, গাজায় অস্ত্রবিরতি হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের উপর হামলা চালিয়ে যাবে৷
মার্কিন দূত অ্যামস হোখস্টাইন মঙ্গলবার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর যুদ্ধ এড়াতে বদ্ধপরিকর৷ তিনি মঙ্গলবারই লেবাননের সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ হেজবোল্লাহর সহযোগী বলে পরিচিত সশস্ত্র আমাল বাহিনীর প্রধান ও সংসদের স্পিকার নাবি বারির সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি৷ হোখস্টাইন হামাসের উদ্দেশ্যে গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার ডাক দেন৷ লেবাননের কার্যনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি তাঁকে বলেন, তাঁর দেশ উত্তেজনা বাড়াতে চায় না৷
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণে গাজার পাশাপাশি তারা উত্তরে লেবানন সীমান্তেও অভিযান চালাতে প্রস্তুত৷ সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযানের ছাড়পত্র ও প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ হয়ে গেছে৷ গাজায় মানবিক সাহায্য সরবরাহ সম্ভব করতে প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বিরতির ঘোষণা করেছে ইসরায়েল৷ কিন্তু হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলেও ক্ষোভ বাড়ছে৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার মানুষ সংসদের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ তাঁরা আগাম নির্বাচন ও পণবন্দিদের মুক্তির লক্ষ্যে হামাসের সঙ্গে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
ইসরায়েল-হেজবোল্লাহের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে দেড় লাখ মানুয ঘরছাড়া। হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েলের সেনার মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে।
ছবি: AFP
সংঘাত তীব্র হয়েছে
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও হেজবোল্লাহের মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বেড়েছে। ইসরায়েলের সেনার হাতে তাদের দুইজন কম্যান্ডোর মৃত্যুর পর হেজবোল্লাহ ইসরায়েলে ১৬০টি রকেট ছোড়ে। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে তাণ্ডব চালায়। তারপর থেকে ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে। হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল-সহ বেশ কিছু দেশ।
ছবি: Ayal Margolin/JINI/XinHua/picture alliance
হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েল
লেবাননের খুবই প্রভাবশালী গোষ্ঠী হলো হেজবোল্লাহ। লেবাননের রাজনীতি ও সমাজের উপর তাদের প্রভাব রয়েছে। হেজবোল্লাহ ইসরায়েলকে শত্রু বলে মনে করে। ১৯৯৬ ও ২০০৬ সালে হেজবোল্লাহ ও ইসরায়েল যুদ্ধ করেছে। একে অন্যের জায়গায় তারা আক্রমণ ও প্রতি-আক্রমণ করতে থাকে। এর ফলে প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। উপরের ছবিতে হেজবোল্লাহের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি।
ছবি: Ayal Margolin/JINI/Xinhua/picture alliance
আবার পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কা
গতবছর ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর থেকে ইসরায়েলের সেনা ও হেজবোল্লাহের মধ্যে আক্রমণের সংখ্যা বেড়েছে এবং তা আরো তীব্র হয়েছে। এর ফলে পুরোদস্তুর যুদ্ধের আশঙ্কাও বাড়ছে। চলতি মাসে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইসরায়েলের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, হেজবোল্লাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হওয়া উচিত। উপরের ছবিতে লেবানন সীমান্তে উড়ছে ইসরায়েলের এফ ১৫ যুদ্ধবিমান।
ছবি: Ariel Schalit/AP Photo/picture alliance
যুদ্ধ কি হতে পারে?
গাজায় লড়াই বন্ধ করার জন্য এখন আন্তর্জাতিক স্তরে চেষ্টা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এই অবস্থায় ইসরায়েল যদি গাজার পাশাপাশি আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু করে তাহলে তা তাদের পক্ষে কৌশলগতভাবে ভালো হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের মতে, হেজবোল্লাহ হামাসের থেকে বেশি প্রশিক্ষিত ও তাদের হাতে আরো ভালো অস্ত্রশস্ত্র আছে।
ছবি: Francisco Seco/AP/picture alliance
লেবাননের অবস্থা
বেশ কিছু বছর ধরে লেবাননে আর্থিক ও রাজনৈতিক সংকট চলছে। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে লেবাননকে। ফলে হেজবোল্লাহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক, তা লেবাননের মানুষ চাইবেন না।
ছবি: Fadel Itani/NurPhoto/picture alliance
দুই পক্ষের ক্ষয়ক্ষতি
লেবাননের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের হামলার ফলে ৮৮জন সাধারণ মানুষ-সহ ৩৭৫ জন মারা গেছেন। আর ইসরায়েলের হিসাব, তাদের ১৮ জন সেনা ও ১০ জন সাধারণ মানুষ হেজবোল্লাহের আক্রমণে মারা গেছেন।
ছবি: Ali Hashisho/XInhua/picture alliance
ঘরছাড়া মানুষ
লেবাননে সীমান্তের কাছের এলাকা থেকে প্রায় এক লাখ মানুষ ঘরছাড়া। তারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। ইসরায়েলের ৬০ হাজার মানুষও ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকছেন। সীমান্তের কাছের এলাকায় সমানে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ছে। ফলে সেখানে থাকা একেবারেই নিরাপদ নয়।