সোমবার ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে পেশ করতে চান৷ ফিলিস্তিনিরা তাঁর এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে৷
বিজ্ঞাপন
সেনেটে ইমপিচমেন্ট তদন্তের কারণে চাপের মুখে পড়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ গত সপ্তাহে ডাভোসে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তিনি ওয়াশিংটনে সোমবার ইসরায়েলি নেতাদের সামনে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা পেশ করতে চলেছেন৷
ফিলিস্তিনি পক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে আগেই সব সম্পর্ক ত্যাগ করায় আলোচনা দ্বিপাক্ষিক স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ তাদের আশঙ্কা, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বপ্ন এবার পুরোপুরি জলাঞ্জলি দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ গত বছরের জুলাই মাসে ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনি এলাকা ও সংলগ্ন আরব দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ৫,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের যে পরিকল্পনা পেশ করেছিল, ফিলিস্তিনিরা সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছে৷ এমনকি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ভেঙে দেবার হুমকিও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস৷
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল: যে সম্পর্ক বিভাজনের
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের নাবলুস ঘুরেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিক জুলফিকার এবানি৷ তুলে এনেছেন সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আর পাশাপাশি থেকে ইসরায়েলিদের সাথে তাদের যোজন যোজন দুরত্বের চিত্র৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ডাক টিকিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড
পশ্চিম তীরে নাবলুসের একটি সড়ক৷ পাশেই ইসরায়েল কিন্তু ফিলিস্তিনের কোনো ডাক টিকিট চলে না সেখানে৷ আবার বিপরীতে ইসরায়েলের কোনো ক্রেডিট কার্ড আপনি ফিলিস্তিনে ব্যবহার করতে পারবেন না৷ ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে অবস্থানকালে ডয়চে ভেলের জুলফিকার এবানিকে সেখানকার ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির পাঠানো বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘‘অবস্থান প্যালেস্টাইন অঞ্চলে৷ লেনদেন সম্ভব নয়৷ আপনি কার্ডটি এই দেশে ব্যবহার করতে পারবেন না৷’’
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
বিভাজনের দেয়াল
জুলফিকার এবানি ফিলিস্তিনে অবস্থান করেছেন ‘ওয়ার্ল্ড অফ হোটেলে’৷ তাঁর ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে ‘নিকৃষ্ট দৃশ্য’ অবলোকন করা যায় হোটেলটি থেকে৷ ফিলিস্তিন থেকে যে দেয়াল পৃথক করেছে ইসরায়েলকে সেটি দেখতে পাবেন এই হোটেলের জানালা দিয়ে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
চাকুরি না বিদ্যা?
আন-নাজাহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফিলিস্তিনের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়৷ ছবিতে ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি নিউজলেটার দেখা যাচ্ছে৷ যার শিরোনাম ছিল ‘দখলদারিত্বের ১৯ বছর’৷ ফিলিস্তিনের ৪০ ভাগ স্নাতোকোত্তরই বেকার৷ যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি চাকুরি সংকট আছে এমন কিছু বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা বন্ধ করে দিচ্ছে৷ জোর দেয়া হচ্ছে গণিত আর প্রকৌশলে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
যে বিশ্ববিদ্যালয় বিচ্ছিন্ন বিশ্ব থেকে
আন-নাজাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নাহের নাতসেহ৷ ফিলিস্তিনের অন্য বিজ্ঞানীদের মতো তিনিও একটা সময় পর্যন্ত বিদেশে থেকে ফিরে এসেছেন দেশে৷ তাঁর জন্ম জেরুজালেমে৷ কাজ করেছেন মিশরের কায়রো, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়াতে৷ নাহের নাতসেহ জানান বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীকে তারা আমন্ত্রণ জানাতে পারেন না৷ এমন কি নিরাপত্তার কারণে ইসরায়েলিদের আনা সম্ভব না৷
ছবি: DW/Z. Abbany
তবুও বড় স্বপ্ন
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আরবের শীর্ষ দুই ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে আন-নাজাহর পরিচালকরা৷ যদিও সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কয়েকগুণ কম বাজেট নিয়েই চলছেন তারা৷ তবে আন-নাজাহর কমপ্লেক্স কিন্তু বেশ আধুনিক আর দৃষ্টিনন্দন৷ যেমনটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
ফিলিস্তিনের কাঁচা বাজার
এটি ফিলিস্তিনের একটি কাঁচা বাজার৷ কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ী আর বাসিন্দারা প্রায়ই ইসরায়েলি সৈন্যদের তল্লাশীর মধ্যে পড়েন বলে জানান ব্যবসায়ীরা৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
কানাফে বা কুনাফার স্বাদ
ফিলিস্তিনের একটি রেস্টুরেন্টের ছবি৷ সেখানে বেশ জনপ্রিয় কানাফে৷ যা কুনাফা নামেও পরিচিত৷ এটি মূলত এক ধরনের মিষ্টান্ন যা শুধু ফিলিস্তিন নয় গোটা মধ্যপ্রাচ্যেই সমান জনপ্রিয়৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
অদৃশ্য সীমান্ত
ফিলিস্তিনের ব্যস্ত কোন বাজার বা পথ ধরে হাটতে গিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন ইসরাইলে৷ যেমন এই মার্কেটটি৷ এর এক পাশে ফিলিস্তিন অন্য পাশে ইসরায়েল৷ তবে ইসরায়েল অংশে ট্যাংক কিংবা ভারি যানবাহন নিয়ে সবসময় প্রহরায় থাকে সেনারা৷
ছবি: DW/Zulfikar Abbany
8 ছবি1 | 8
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিও বেশ নাজুক৷ একাধিক নির্বাচনের পর সরকার গঠন সম্ভব না হওয়ায় আগামী ২রা মার্চ আবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাই বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গানৎস-ও ওয়াশিংটনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় উপস্থিত থাকছেন৷ নির্বাচনের আগে এই পরিকল্পনা প্রকাশের বিষয়ে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল৷ ট্রাম্প এই দুই নেতার সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করবেন৷ দুই নেতাই ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানাবেন বলে হোয়াইট হাউস আশা করছে৷ তারপরই তিনি প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনার রূপরেখা পেশ করবেন৷
ক্ষমতায় আশার পরই ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার উদ্যোগ শুরু করেন৷ তাঁর আগে সব মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই প্রচেষ্টায় বিফল হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে আশাবাদী৷ জামাই ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার এবং আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গত প্রায় তিন বছর ধরে শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তুতি চালিয়ে গেছেন৷ এবার ইসরায়েলের সম্মতি পেলে সে দেশে নির্বাচনের পরেই সেই পরিকল্পনা কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন৷
এতকাল ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তি আনতে প্রায় সব উদ্যোগের ভিত্তি ছিল দুই পক্ষের জন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি৷ কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একতরফাভাবে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে এসছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ইহুদি বসতির ভবিষ্যৎ ও জেরুসালেম শহরের উপর দাবির প্রশ্নেও ওয়াশিংটনের আচরণ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ইসরায়েলের প্রতি একতরফা সমর্থনের মাধ্যমে ট্রাম্প অ্যামেরিকার এভাঞ্জিলিকাল খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় করতে আরও উদ্যোগী হচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন৷ কোনোক্রমে ইমপিচমেন্ট তদন্তে রেহাই পেলেও নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁকে যথেষ্ট সমর্থন পেতে হবে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
ভূমি তুমি কার
পশ্চিম তীরে একসময় শুধু ফিলিস্তিনি মুসলমানরাই ছিলেন৷ তবে ১৯৬৭ সালে তা দখল করে সেখানে ইহুদিদের বসতি গড়তে শুরু করে ইসরায়েল৷ এখন দু’ পক্ষেরই দাবি, ‘‘এই ভূমি আমাদের৷’’ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Reuters/R. Sawafta
বাড়ছে, বাড়বে ইহুদিদের বসতি
পশ্চিম তীরে ইতিমধ্যে ১২০টি বসতি গড়ে দিয়েছে ইসরায়েল সরকার৷ গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময়ই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়ানহু বলে রেখেছেন ভবিষ্যতে আরো বসতি গড়া হবে অধিকৃত সেই অঞ্চলে৷
ছবি: Reuters/Peace now
‘এই জায়গা আমাদের বাইবেলেও তা বলা আছে’
মাইকেল নেটসার৷ বয়স ৬৩ বছর৷ ইহুদি এই ব্যক্তি ১৯৮৫ সাল থেকে পশ্চিম তীরের বাসিন্দা৷ পশ্চিম তীর ইসরায়েল বা ইহুদিদের নয় তা তিনি একেবারেই মানতে রাজি নন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ইহুদিরা এখানে বাস করতে পারবে না, এ কথাটা খুবই হাস্যকর৷ এটা তো বাইবেলের অংশ৷ আমি প্রশ্ন করতে চাই— আপনার পূর্বপুরুষ বা পূর্বপুরুষের ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া কি এত সহজ? মোটেই তা নয়৷ ইতিহাসই ইহুদিদের এখানে নিয়ে এসেছে৷ ’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই ভূমি আমার হুদয় এবং আত্মা’
মুসলিম কৃষক আজমি মুসলেহর সোজা দাবি— এই ভূমি মুসলমানদের৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গাটা আমার হৃদয় এবং আত্মা৷ ওটা আমার পরিবারের হৃদয় এবং আত্মা৷’’ তিনি জানান, এখন যেখানে ইহুদিদের বাস, এক সময় সেখানে তাঁরা চাষবাস করতেন৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘নিজেকে সেটলার মনে হয় না আমার’
৬০ বছর বয়সি মাইকের কোভেন-ভোগেল ইহুদি৷ পেশায় আইনজীবী৷ পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল সেখানে তাদের জন্য বসতি গড়ে দিলেও নিজেকে আর বহিরাগত মনে হয় না তার৷ তিনি বললেন, ‘‘নিজেকে মোটেই সেটলার মনে হয় না৷’’ তিনি মনে করেন, ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য আরো বসতি গড়ে দিলে ভালো হবে৷
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘এই জায়গা ইসরায়েলের জনগণের’
৪৩ বছর বয়সি ইহুদি ইতাই জার মনে করেন, ‘‘এই জায়গা যে ইসরায়েলি জনগণের সে বিষয়ে কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না৷’’
ছবি: Reuters/R. Zvulun
‘অন্য জায়গায় জমি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়’
ডেভিড হামবার্গারও একজন ইহুদি৷ ইসরায়েলে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয় বলে পশ্চিম তীরে বাস করছেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা আদর্শিক কারণে এখানে আসিনি৷এই জায়গায় না কিনলে অন্য কোথাও জমি কিনে বাড়ি বানানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷’’
ছবি: Reuters/N. Elias
‘আমাদের মধ্যে শান্তি আসা অসম্ভব’
মোহাম্মদ আওয়াদ একজন ফিলিস্তিনি মুসলমান৷ বয়স ৬৪ বছর৷ তাঁর মতে, পশ্চিম তীরে শান্তি আসার কোনো সম্ভাবনা নেই, ‘‘একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা ওরা দখল করে নেয়ার কারণে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত৷ ফলে এখানে শান্তি আসা অসম্ভব৷আমার জমি কেউ চুরি করে নিয়েছে এটা কেমন করে মেনে নেবো? তার সঙ্গে কিভাবে শান্তিতে বসবাস করবো?’’