নানা সংকটে জর্জরিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট কোনো রূপরেখা না থাকা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ তাঁর জামাই জ্যারেড কুশনার আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন৷
বিজ্ঞাপন
মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া আবার চাঙ্গা করে তুলতে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা ও জামাই জ্যারেড কুশনার৷ক্ষমতায় আসার পরেই ট্রাম্প দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তির আশা প্রকাশ করেছেন৷ সেই উদ্যোগের আওতায় কুশনার ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই মুহূর্তে গোটা অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন৷ মিশর, সৌদি আরব, কাতার ও জর্ডানের পর এবার তিনি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকায় সংলাপ চালাচ্ছেন৷ উল্লেখ্য, গত মে মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকা সফর করে শান্তি প্রক্রিয়া তরান্বিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন৷ কিন্তু সেই শান্তির কোনো স্পষ্ট রূপরেখা দিতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন৷
ট্রাম্প যতই উৎসাহ প্রকাশ করুন না কেন, এই মুহূর্তে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব পরস্পরকে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়৷ তেল আভিভে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু কুশনারের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, অনেক বিষয়ে কথা বলার আছে৷ শুধু শান্তি চুক্তি নয়, গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি আনার উদ্যোগের কথা বলেন তিনি৷ তবে তাঁর দফতর ‘গঠনমূলক' বিস্তারিত আলোচনা ছাড়া অন্য কোনো আশার আলো দিতে পারে নি৷ নিজের শিবিরের দক্ষিণপন্থি অংশের চাপে তাঁর পক্ষে ফিলিস্তিনিদের কোনো ছাড় দেওয়াকঠিন হবে৷ ফিলিস্তিনিদের বদলে আঞ্চলিক আরব শক্তিগুলির সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রতি বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে ইসরায়েল৷
পশ্চিম তীরে রামাল্লাহ শহরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস কুশনার ও তাঁর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ এক ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থাকে তিনি বলেন, কঠিন ও জটিল হলেও শান্তি আনার প্রয়াস অসম্ভব নয়৷
তবে ট্রাম্প নিজেদ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানসূত্রের বিষয়ে অঙ্গীকার না করায়ফিলিস্তিনি পক্ষ ক্ষুণ্ণ হয়েছে৷ উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী৷ একটি রাষ্ট্রের মধ্যেই যদি তা সম্ভব হয়, তাতেও তিনি সমর্থন দিতে প্রস্তুত৷ এমন মন্তব্যের পর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বার বার নিজেদের অস্তিত্ব ভেঙে দিয়ে পশ্চিম তীরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ইসরায়েলের হাতে তুলে দেবার হুমকি দিয়ে আসছে৷ একতরফাভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ঘোষণার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা করছে পশ্চিম তীরের নেতৃত্ব৷ অধিকৃত এলাকায় ইহুদি বসতি নির্মাণ বন্ধ করার বদলে আরও নতুন বসতির অনুমতির কারণেও ফিলিস্তিনিরা শান্তির আশা করছে না৷
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাত কোন পথে?
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি এলাকা জুড়ে যে সহিংসতার ঢেউ চলেছে, তা-তে দু’পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ, অবিশ্বাস ও মারমুখি ভাব৷ এই প্রবণতা চলতে থাকলে একটি তৃতীয় ইন্তিফাদার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/M. Abu Turk
একটি পবিত্র স্থান
পুরনো জেরুসালেমের প্রাচীন অংশে আল-আকসা মসজিদ; ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা৷ ইসরায়েলিদের কাছে এই স্থানটি হল টেম্পল মাউন্ট৷ মাস খানেক আগে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গুজব ছড়ায় যে, ইসরায়েল প্রাঙ্গণটি দখল করে নেওয়ার কথা ভাবছে৷ সেই থেকেই দাঙ্গা-হাঙ্গামার শুরু৷ ১৭ই জুলাই, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Gharabli
একটানা আক্রমণ
বিশেষ করে জেরুসালেমে ইসরায়েলিদের ওপর ছুরি আক্রমণের ঘটনা বাড়ায় ইসরায়েলি সরকার চিন্তিত৷ প্রধানত জেরুসালেমবাসী ফিলিস্তিনি কিশোররাই এই সব আক্রমণ চালাচ্ছে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে৷ তাদের কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় আবার দাঙ্গা বাঁধছে৷ অক্টোবরের সূচনায় বেথলেহেমের কাছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে এক ১৩ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি কিশোর এভাবে প্রাণ হারায়৷ বেথলেহেমে দাঙ্গার ছবি, ৫ই অক্টোবর, ২০১৫৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Coex
অন্যত্র, সর্বত্র
গাজা স্ট্রিপের দক্ষিণে খান ইউনুসেও একই দৃশ্য৷ ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘাতে ১৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ আল-রেকেব প্রাণ হারানোর পর তাকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন শোকার্ত৷ ৯ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/I. Abu Mustafa
গাজা স্ট্রিপে
২২ বছর বয়সি জিহাদ আল-ওবাইদের সমাধি অনুষ্ঠানে যোগদান করে আল-কাসাম ব্রিগেডের জঙ্গিরা৷ জিহাদ প্রাণ হারান গাজা স্ট্রিপের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, সীমান্তের কাছে, ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে৷ ছবিটি তোলা ১০ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷ ১৫ই অক্টোবর অবধি এই ‘তৃতীয় ইন্তিফাদায়’ এ যাবৎ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন ইসরায়েলি ও অন্তত ৩০ জন ফিলিস্তিনি; দু’পক্ষে আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Khatib
বিজয় চিহ্ন
পশ্চিম জর্ডানের হেব্রনে মোহাম্মেদ ফারেস আল-জাবারিকে গোরস্তানে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে দাঙ্গা বাঁধে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের৷ আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভিক্টরি সাইন দেখাচ্ছেন এক ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী৷ ছবিটি ১০ই অক্টোবর, ২০১৫-র৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Bader
বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, দাঙ্গা
পশ্চিম জর্ডানের নাবলুসে হাওয়ারা চেকপয়েন্টে ইসরায়েলি সৈন্যদের দিকে ঢিল ছুঁড়ছে ফিলিস্তিনি কিশোর ও তরুণেরা৷ ১১ই অক্টোবর, ২০১৫-র ছবি৷
ছবি: Reuters/A. Talat
যাত্রীবাহী বাসে আক্রমণ
১২ই অক্টোবর, ২০১৫-র ঘটনা৷ পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী জনৈক আরব একটি যাত্রাবাহী বাসের মধ্যে এক ইসরায়েলি সৈন্যকে ছুরিকাঘাত করার ও বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে৷ অপর এক সৈন্যের গুলিতে আততায়ী নিহত হয়৷ ছবিতে পুলিশ কর্মকর্তারা বাসটির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O. Ziv
ইসরায়েলি সরকার নিরুপায়
ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে হাজার চারেক পুলিশ ছাড়াও তিন’শ সৈন্য পথে নামানো হয়েছে৷ অস্থায়ী চেকপয়েন্ট সৃষ্টি করে গাড়ি ও ড্রাইভারদের পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ ছবিতে পূর্ব জেরুসালেমের জাবাল মুকাবর এলাকায় কংক্রিটের ব্লক বসানোর কাজ চলেছে বুধবার, ১৪ই অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/S. Scheiner
আরো একটি মৃতদেহ
পূর্ব জেরুসালেমের ‘ওল্ড সিটির’ প্রবেশমুখে দামাস্কাস গেটে বুধবার আরো একটি ছুরি আক্রমণের ঘটনা ঘটে৷ দৃশ্যত পশ্চিম জর্ডানের হেব্রন থেকে আগত এক ২০ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি তরুণ এক নিরাপত্তা কর্মীকে আক্রমণ করে ও নিরাপত্তা কর্মীদের গুলিতে নিহত হয়৷ ছবিতে নিহত আততায়ীর লাশ অকুস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷