1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শ্রমজীবীদের নিরাপত্তায় সরকারের দায়বদ্ধতা

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
১৪ জুন ২০১৭

মধ্যপ্রাচ্যে ভারতীয় শ্রমজীবী, বিশেষ করে নারীরা কেমন আছেন? বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার অদক্ষ শ্রমজীবী দুর্ভোগ চরমে, যাদের বেশির ভাগই অল্প শিক্ষিত, গরিব নারী৷ তাঁদের দুর্ভোগ কমাতে মোদী সরকার কতটা তৎপর?

Katar Doha Baustelle Arbeiter OVERLAYFÄHIG
ছবি: Getty Images

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে অভিবাসী নারী-পুরুষ শ্রমজীবীদের একটা বড় অংশ ভাগ্য ফেরানোর তাগিদে হামেশাই পাচারচক্রের খপ্পরে পড়ে৷ গরিব এবং অল্প শিক্ষিত নারী-পুরুষ শ্রমজীবীরা এজেন্টদের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে পারে না৷ ঐসব দেশে পৌঁছে কিছু বোঝার আগেই তাঁরা, বিশেষ করে মেয়েরা হাতবদল হয়ে যায়৷ পৌঁছাবার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের পাসপোর্ট আর মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়৷ বিদেশে ভারতীয় স্রমিকরা কিভাবে শোষিত, নির্যাতিত হয়, তাঁদের স্বপ্নভঙ্গ হয়, মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতিতে তার নানা করুণ কাহিনী উঠে এসেছে সম্প্রতি৷ সরকার এখন হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার বাঙ্গালি তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল৷ মোটা মাইনের লোভ দেখিয়ে আকবর ওভারসিজ নামে এক ট্রাভেল এজেন্টের দালাল তাঁকে নিয়ে যায় সৌদি আরবের রিয়াদে৷ যাবার পর তাঁর পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়৷ তাঁকে সামান্য বেতনে সাফাই কর্মীর কাজ দেওয়া হয়৷ বাড়ি ফেরার পথ তাঁর বন্ধ৷ পকেটে ভাড়ার টাকা নেই৷ প্রায় দেড় বছর কাজ করেন আশরাফুল৷ সেখানে এক ভারতীয় যুবক মোহাম্মদ হাবিবের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়৷ তিনি তাঁকে সাহায্য করেন৷ বর্ধমানের পুলিশ সুপার, সিআইডি রিয়াদের ভারতীয় দূতাবাসকে ই-মেলে সবকিছু জানাবার পর তাঁর বাড়ি ফেরার ব্যস্থা করা হয়৷ গত সোমবার বাড়ি ফিরে ভারতীয় দূতাবাস আর পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান হাবিব৷ 

জাবিনা বেগম নামে হায়দ্রাবাদের এক মুসলিম নারী সৌদি আরবে এক ডাক্তার দম্পতির বাড়িতে গৃহ পারিচারিকার কাজ করছেন বছর দেড়েক ধরে৷ তাঁকে দিয়ে এত বেশি খাটানো হতো যা করতে তিনি শারীরিকভাবে সক্ষম নন৷ তাই স্বদেশে ফিরে আসতে চান৷ কিন্তু ডাক্তার দম্পতি তাঁকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রেখেছে৷ এই মর্মে জাবিনা ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন এবং অনুরোধ করেন যেন সরকার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন৷

সমাজকর্মী ফজিল খান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জাবিনার ঘটনা জানতে পেরে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে টুইট করে সবকিছু জানালে তিনি সৌদি আরবের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন৷ সৌদি ঐ ডাক্তার দম্পতির সঙ্গে কথা বলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত৷ তাঁরা জানান, রমজানের পর তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে দেশে৷ কিন্তু পরে জানা যায়, সেরকম কোনো ইচ্ছাই সৌদি দম্পতির নেই৷

পাচারকারীদের হাত থেকে ছোট ছোট বাচ্চারাও রেহাই পাচ্ছে না৷ সেকথাই ডয়চে ভেলেকে জানালেন ‘সংলাপ' নামের এক এনজিওর কর্তাব্যক্তি অলোক গোস্বামী৷  তিনি বললেন, ‘‘হজের সময় ভিক্ষাবৃত্তির জন্য এক শ্রেণির দালাল পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার গরিব ঘরের কিছু ছোট বাচ্চাকে নিয়ে যায় সৌদি আরবে৷ বাড়ির লোকেদের বোঝায়, তাঁরা তো কোনোদিন হজে যেতে পারবে না টাকার অভাবে৷তাই বাচ্চারাই হজ করবে আর টাকা রোজগার করবে৷ সৌদি আরবে হজের সময় ঐসব বাচ্চা গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা রোজগার করে৷ প্রথম প্রথম দালালরা বাচ্চাদের ফিরিয়ে আনে এবং বাড়ির লোকদের ১০-১৫ হাজার টাকা দেয়৷ পরের দিকে দালালরা বাচ্চাদের ছেড়ে পালিয়ে আসে৷ বাচ্চাদের মুখে বাংলা ভাষা শুনে রিয়াদের ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সংলাপের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং সংলাপের আমরা তাঁদের ফিরিয়ে আনি৷''

২৯ বছরের মনিকা পাচারকারিদের খপ্পরে পড়ে পাচার হয়ে যান সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে৷ সেখান থেকে চালান হয়ে যান ওমানে৷ এক আন্তর্জাতিক পাচারকারি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে৷ প্রথমে গৃহ পারিচারিকার কাজ, পরে যৌনদাসী৷ এক সমাজকর্মীর সাহায্যে মনিকা আশ্রয় নেন ওমানের ভারতীয় দূতাবাসে৷ মনিকার নিজের কথায়, ‘‘পরিবারের অভাব-অনটনে সাহায্য করতে আমি গিয়েছিলাম৷ এখন বুঝেছি সবটাই ধোঁকাবাজি৷ তাই অন্যদের বলছি, তাঁরা যেন সবকিছু ভালোভাবে যাচাই না করে পাচারকারীদের পাল্লায় না পড়েন৷'' মনিকা জানান, প্রথমে তাঁকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয় ইউএই-তে এক আশ্রয় শিবিরে৷ সেখানে আরও অনেক ভারতীয় মেয়ে ছিল৷ সবার ওপরে নিয়মিত চলে দৈহিক নির্যাতন৷ খাওয়া-দাওয়া অখাদ্য৷ তাঁদের কিছুই করার থাকেনা৷ পাসপোর্ট, মোবাইল ইত্যাদি কেড়ে নেওয়া হয় আগেই৷

SanglapAloke_Goswami - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে, ভারত-ওমান পারিচারিকার কাজে লোক নিয়োগের নিয়মবিধি সংশোধন করেছে সরকার৷ নতুন নিয়মে যে বাড়িতে ভারতীয় পারিচারিকা নিয়োগ করা হবে, সেই বাড়ির মালিককে বেতন সার্টিফিকেট এবং ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি দিতে হবে৷ নতুন নিয়মে ৩০ বছরের কম বয়সী কোনো ভারতীয় মেয়েকে  ‘ডোমেস্টিক হেল্প', অর্থাৎ গৃহপরিচারিকা হিসেবে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ নিয়োগ করার আগে ওমানের ভারতীয় দূতাবাস থেকে ‘নো-অবজেকশন সার্টিপিকেট' নেওয়া বাধ্যতামূলক৷ পাশাপাশি ভারতীয় বিমান বন্দরের অভিবাসী দপ্তরও ভারতীয় মেয়ে কর্মীদের কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করবে৷ যদিও সেটা সব ক্ষেত্রে করা হয়না৷ কারণ, পাচারকারীরা মোটা টাকার লোভ দেখায়৷

নেপাল ও বাংলাদেশ থেকেও বহু নারী পাচার হয় ভারতীয় বিমানবন্দগুলি দিয়ে৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, উপ-সাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বহু পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক৷ প্রায় আট লক্ষ অনাবাসী ভারতীয় ঐ দেশগুলিতে আছে৷ ফলে সেখানকার শান্তির সঙ্গে ভারতের জাতীয় স্বার্থ জড়িত৷ একই সঙ্গে  অনাবাসী এবং অভিবাসী ভারতীয়দের নিরাপত্তার প্রতিও সরকার দায়বদ্ধ৷ ভারতীয় দূতাবাসগুলি সেদিক থেকে অতিমাত্রায় সজাগ ও সক্রিয়৷ যাঁরা দেশে ফিরতে চান, তাঁদের সব রকম সাহায্য দিচ্ছে৷ পাশাপাশি কূটনৈতিক দৌত্য চলছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ