ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে৷ প্রাণ হারিয়েছে বহু শিশু৷ এত প্রাণহানির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে৷ অবিলম্বে হামলা বন্ধের দাবি উঠেছে সেখানে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ নিহতদের ছবি আর খবর নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক আর টুইটারে৷ শুক্রবার সকাল থেকে ফেসবুক ছেয়ে যায় নিহত শিশুদের বীভৎস ছবিতে৷ অনেকেই নিজেদের প্রোফাইল ছবিতে হামলা বন্ধের আহ্বান জানান৷
ফেসবুক পাতায় সাঈফ ইবনে রফিক লিখেছেন, ‘‘মুহাম্মদ (সা.) নিজেই যেখানে জেরুসালেম থেকে কেবলা ফিরিয়ে নিয়েছেন, তার উম্মতরা জায়গাটা ছাড়লেই পারে৷ সৌদি আরব, জর্ডান বা ইয়েমেনে হিজরত করলে ফিলিস্তিনিরা প্রাণে বাঁচতো৷ প্রেস্টিজের চেয়ে প্রাণ বড়৷ তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পর্যাপ্ত পতিত জমি থাকার পরও আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের জায়গা দেবে না৷
আরব জাতীয়তাবাদের বিক্রি বাড়িয়ে গণবিচ্ছিন্ন সরকারগুলো টিকে থাকার স্বার্থে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করেছে, সন্ধি করেছে৷
ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরবরা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করে নাই৷ আসলে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটকে ধর্মযুদ্ধ বলারও উপায় নাই৷ ইয়াসির আরাফাত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি করেছেন, ঈসা (আ.) যে বেথলেহেমে জন্মেছিলেন সেখানকার খ্রিষ্টানরাও আরাফাতের পক্ষে৷মধ্যপ্রাচ্য সংকটটা আসলে মানবিকতার সংকট, সাম্রাজ্যবাদের সংকট, সভ্যতার সংকট৷ এই সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করছে সৌদি আরব, জর্ডান, মিশর, লেবাননসহ আশপাশের আরব দেশগুলোর সরকার৷'
রাশিয়াভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আরটি টিভিতে গাজায় হামলা নিয়ে সংবাদ উপস্থাপিকার মন্তব্য সাড়া ফেলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে৷ বলা হচ্ছে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানিয়ে কোন উপস্থাপকের এমন সাহসী মন্তব্য আর দেখা যায়নি৷
যে লড়াই আজও চলছে...
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলমান সংঘাত নিয়ে গবেষণা করছে হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে)৷ তাদের হিসেবে, গত বছর গোটা বিশ্বে চারশোর মতো সংঘাত ঘটেছে, যার বিশটি সরাসরি যুদ্ধ৷ এই নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
শান্তির কোনো লক্ষণ নেই
ধর্মান্ধতা, দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থের লোভ কিংবা ক্ষমতা দখলের বাসনা – হাজার হাজার বছর ধরে যুদ্ধ, সংঘাতের কারণ ঘুরে ফিরে এগুলোই৷ ২০১৩ সালেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ হাইডেলবার্গ ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল কনফ্লিক্ট রিসার্চ (এইচআইআইকে) গত বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু সংঘাত, যুদ্ধের কথা প্রকাশ করেছে ‘কনফ্লিক্ট ব্যারোমিটার ২০১৩’ শিরোনামে৷
ছবি: Reuters
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো
গত বছর কিভু-তে সেনাবাহিনী নিয়মিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ ২০১৩ সালের শেষের দিকে অবশ্য সরকার ঘোষণা দেয়, বিদ্রোহীদের দমনে সক্ষম হয়েছে তারা৷ অন্যদিকে এম২৩ গোষ্ঠীর ঘোষণা, এখন থেকে রাজনৈতিক পথে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে তারা৷
ছবি: Melanie Gouby/AFP/GettyImages
মালি
মালিতে উগ্র ইসলামপন্থিরা ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে৷ ২০১২ সালে সে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটা বড় অংশ তাদের দখলে চলে যায়৷ ফলশ্রুতিতে মালি সরকারকে যুদ্ধে সহায়তায় এগিয়ে আসে ফ্রান্স৷ এরপর পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র ইসলামপন্থিরা৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী মালিতে শান্তি রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷ তবে সে দেশে বিভিন্ন জঙ্গি এবং আত্মঘাতী হামলার খবর মাঝে মাঝেই শোনা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নাইজেরিয়া
উগ্র ইসলামপন্থি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷ এই লক্ষ্য পূরণে সে দেশের খ্রিষ্টান এবং মধ্যপন্থি মুসলমানদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে গোষ্ঠীটি৷ ছবিতে একটি হামলায় নিহতদের জন্য সমাধি খুঁড়ছেন তাদের খ্রিষ্টান আত্মীয়রা৷ নাইজেরিয়ায় আরো একটি সংঘাত চলছে৷ তৃণভূমি ইস্যুতে খ্রিষ্টান কৃষকরা লড়াই করছেন গবাদি পশু পালক মুসলমানদের সঙ্গে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদান
গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দারফুর অঞ্চলে বসবাসকারী আফ্রিকার বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারি বাহিনী এবং তাদের অনুসারীদের সঙ্গে লড়াই করছে৷ যুদ্ধের কারণে কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছে এবং অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আফগানিস্তান
আফগানিস্তানে নিযুক্ত ন্যাটো বাহিনী স্থানীয় বাহিনীর হাতে সে দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পরও সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ তালেবান এবং অন্যান্য চরমপন্থি গোষ্ঠী সে দেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আত্মঘাতী হামলা এবং ‘বুবি-ট্র্যাপ’-এর মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সীমান্ত অঞ্চলে সংঘাত থামার কোন লক্ষণ নেই৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, আফগানিস্তানে ২০১৩ সালে আড়াই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মেক্সিকো
মাদক, মানবপাচার, ব্ল্যাকমেল এবং চোরাচালানের মতো কর্মকাণ্ড মেক্সিকোর মাফিয়াদের অর্থ উপার্জনের উৎস৷ আয়ের এসব উৎস নিরাপদ রাখতে মাফিয়ারা একে অপরের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়৷ সে দেশে প্রতি সপ্তাহেই দাঙ্গার ঘটনা ঘটে৷ মেক্সিকো সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গত বছর সে দেশে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিরিয়া
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে৷ সেদেশ কার্যত বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে গেছে৷ কিছু অংশের দখল রয়েছে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনীর কাছে, বাকি বিভিন্ন অঞ্চল মধ্যপন্থি বিরোধী দল, উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দখলে চলে গেছে৷ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং নব্বই লাখের মতো মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Mohmmed Al Khatieb/AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
চল্লিশ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিপাইন্সে মোরো সম্প্রদায় স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে৷ মাঝে কিছুদিন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকার পর ২০১৩ সালে আবারো তারা শুরু হয়েছে সহিংস সংগ্রাম৷ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এমএনএলএফ সে দেশের দক্ষিণের দ্বীপগুলোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে৷ যুদ্ধের কারণে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে৷
ছবি: Reuters
সোমালিয়া
সোমালিয়ায় আল-শাবাব জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর যুদ্ধ চলছে গত আট বছর ধরে৷ জাতিসংঘ এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সেনাদের সহায়তায় সোমালিয়া সরকার আল-শাবাবকে ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে৷ তবে এখনো সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ জঙ্গি গোষ্ঠীর দখলে রয়েছে৷
ছবি: Mohamed Abdiwahab/AFP/Getty Images
দক্ষিণ সুদান
তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভ করা দক্ষিণ সুদানে এখনো সংঘাত অব্যাহত রয়েছে৷ সে দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্টের পক্ষের সেনারা প্রেসিডেন্সিয়াল ফোর্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এছাড়া প্রতিবেশী দেশ সুদানের দুটি রাজ্যে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত রয়েছে দক্ষিণ সুদানের সেনারা৷
ছবি: Reuters
11 ছবি1 | 11
সামহয়্যার ইন ব্লগে হিল্লোল লিখেছেন, ‘প্রথম ক্রুসেডের পর যখন খ্রিষ্টানদের হাতে জেরুজালেমের পতন হল , তখন তারা জেরুজালেমে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়, নারী ও বাচ্চাদেরকেও তারা রেহাই দেননি৷ ধারণা করা হয় সে সময় লাখেরও বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ কিন্তু সুলতান সালাউদ্দিন আয়ুইবি যখন জেরুজালেম দখল করেন, সামান্য মুক্তিপণের বিনিময়ে তিনি সবাইকে ছেড়ে দেন৷ আজকে গাজা ইহুদিদের দখলে৷ রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস, আসুন দোয়া করি তাদের জন্য, যারা গাজায় জীবিত আছেন, আর যারা পরলোকে গমন করেছেন৷'
সাদমান সাদেক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ফেসবুক হোমপেজ ভরে গেছে ইসরায়েলিদের হামলায় নিহত ফিরিস্তিনি মৃতদেহের ছবিতে৷ চারদিকে কেবলই হায় মুসলিম, হায় মুসলিম রব৷ আর এদিকে গত দুই বছর ধরে সিরিয়ায় মুসলমানরাই মেরেছে লাখখানেক মুসলমানদের৷ ইরাকে আইএসআইএস মুসলমান হয়েও মারছে হাজার হাজার মুসলিম সৈন্যদের৷ জঙ্গিরা মারছে সাধারণ মুসলমানদের৷ পাকিস্তানে সাধারণ মুসলমানরা মারছে খ্রিষ্টানদের৷ এসব হামলায় কারো ভ্রূক্ষেপ নেই৷ কারো ঈমানে আঘাত লাগেনি মোটেও৷ ইসরায়েল মারলেই শুধু আমাদের ঘুম ভাঙে৷ ঈমান জাগ্রত হয় প্রতিনিয়ত৷ ইসরায়েলকে ডিফেন্ড করছিনা৷ গণহত্যাকে সমর্থন করছিনা৷ কিন্তু নিজের ভেতরে, মজ্জায় মিশে থাকা হিপ্যোক্রেসিকে যদি তুলে না ধরি, তবে কেমন মুসলিম হলাম?'