বাংলাদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচন ও সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে৷ ধারণা করা হচ্ছিল, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর সব দলের অংশগ্রহণে আরেকটি নির্বাচনের হবে৷ সরকার ও বিএনপির মধ্যে শুরু হবে সংলাপ৷ সে সম্ভাবনা ক্রমেই কমে আসছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করেই বলেছেন যে, পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন এবং বিএনপির সঙ্গে সংলাপ কোনোটাই হবে না৷ এর আগে একাধিক মন্ত্রী বার বার বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার পাঁচ বছরে জন্য ক্ষমতায় এসেছে৷ এমনকি জাতীয় পার্টির নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও মনে করেন যে, তাঁরা পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন৷ এছাড়া নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যখন নির্বাচন হবে তখন আলোচনা হবে৷ তিনি আলোচনার জন্য জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য বলেছেন বিএনপিকে৷
এদিকে নির্বাচনের পর বিদেশি কূটনীতিকরা আলোচনা এবং সমঝোতার কথা বললেও, বিএনপিকে সহিংসতা ছাড়ার কথাও বলেছেন তাঁরা৷ কিন্তু তার পরেও, নতুন সরকার যে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল তা আপাতত বাস্তবতা পায়নি৷ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় রাখার ঘোষণা দিয়েছেন৷ এমনকি কোনো ধরণের অর্থনৈতিক অসহযোগিতার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না, যা নতুন সরকারকে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত করেছে৷ তাই তারাও কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করেছে৷ আর ভারত, রাশিয়াসহ বেশ কিছু দেশ সরকারের সরাসরি পক্ষেই আছে৷
ওদিকে বিএনপি তার আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করেছে৷ তারা জামায়াতের সঙ্গে এক ধরণের দূরত্ব বজায় রাখছে৷ সহিংসতার সুযোগ আছে এমন ধরণের সরকারবিরোধী কর্মসূচি থেকে আপাতত বিরত আছে দলটি৷ তারা আগামী ছয় মাস এভাবেই চলবে বলে জানা গেছে৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন বর্তমান সরকারকে অবৈধ বললেও, তিনি সংলাপ-সমঝোতা এবং নতুন নির্বাচনের দাবি তুলছেন এই সরকারের কাছেই৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ জানিপপ-এর চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে৷ নির্বাচনের আগের অবস্থা আর নেই৷ সরকার এখন তার অবস্থান শক্ত করেছে৷ তাই তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না৷ তাঁর মতে, যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়ও তা ২০১৬ সালের আগে হবে না৷ তাছাড়া, সেই নির্বাচন যে বিএনপির চাপের কারণে হবে, তাও নয়৷ সেটাও হবে বর্তমান সরকারের কৌশলের কারণে৷
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
12 ছবি1 | 12
নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, তারা আগেই একটি একপাক্ষিক নির্বাচনের আশঙ্কা করেছিলেন এবং তাই হয়েছে৷ বিএনপি নির্বাচনের আগে আন্দোলনের যে কৌশল নিয়েছিল, তা দেশে-বিদেশে শেষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ ভবিষ্যতেও সহিংস আন্দোলন দিয়ে কিছু করা যাবে না৷ বিএনপি কিছু করতে চাইলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনে যেতে হবে৷ তবে তাও সফল হতে কতদিন লাগবে, তা নিয়ে সন্দিহান তিনি৷ তিনি মনে করেন, সংলাপ হলেও তা হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন কোন ধরণের সরকার ব্যবস্থার অধীনে হবে – শুধুমাত্র তা নিয়ে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিএনপির জন্য সংলাপ প্রয়োজন৷ সংলাপ হলে বিএনপি তার সহিংস আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনের একটি জায়গা পাবে৷ তবে সরকারের মধ্যে ‘সবকিছু জয় করে ফেলেছি' ধরণের যে মনোভাব কাজ করছে, তাতে তারা সংলাপ নিয়ে টালাবাহানা করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ ড. মজুমদার মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও সন্দিহান৷ তবে তিনি মনে করেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন৷