ধনবানরা সামলে নিতে পারছেন৷ দরিদ্ররা হয় সরকারের সহায়তা পাচ্ছেন, নয়তো চেয়েচিন্তে একরকম করে কাটাচ্ছেন জীবন৷ কিন্তু মধ্যবিত্ত যারা- তাদের পথ কী? আগামীর স্বপ্ন দেখে চলা এই শ্রেণি কেমন আছেন? কেমন যাবে তাদের সামনের দিনগুলো?
অর্থের হিসেবে একটি বছর বিদায় নিতে চলেছে, নতুন একটি বছর আসছে৷ এমন সময়ে মূল্যস্ফীতির যে গতি তাতে বিলাস পণ্য শুধু নয়, দরকারি কিছু জিনিসপাতিও আপাতত বাজারের তালিকা থেকে বাদ রাখছে মাঝারি আয়ের মানুষ৷ যে ঘরে আগে সপ্তায় তিন দিন মাংস খাওয়া হতো, এখন হয়তো তা দুই দিনে নেমে এসেছে৷ যে গৃহকর্তা আগে মাসে একবার গরুর মাংসের দোকানে যেতেন, এখন যাচ্ছেন হয়তো মাস তিনেক পর পর৷ যে ব্রয়লার মুরগি সাধারণের হাতের নাগালে ছিলো৷ তার দাম চুকাতে গেলেও এখন পকেট থেকে বাড়তি টাকা খসে পড়ছে৷ তাই এক বেলার জায়গায় দুই বেলা হয়তোবা ডাল-ভাত-ভর্তার মতো প্রণালির শরণ নিতে হচ্ছে৷ কারণ রাষ্ট্র তার ঘাটতি মেটাতে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের কাছে যেতে পারে৷ কিন্তু আমজনতা ধারদেনা করে খুব বেশি দিন চলতে পারে না৷ ঋণখেলাপি হওয়ার ভয় তাদের তাড়া করে বেড়ায় সবসময়৷ এমন ত্রস্ত যাপিত জীবন কেবা চায়!
নিজের কোষাগার ঠিক রাখতে নাগরিকের পেছনে লেগে থাকে রাষ্ট্রও৷ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কিংবা ঋণদাতা হিসেবে যেসব বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান কাজ করে, তারাও কেন জানি সরকারকে অবিরাম ইন্ধন দিতে থাকে- ‘ভ্যাট বাড়াও, আয়কর বাড়াও, ভর্তুকি কমাও৷' তারই প্রতিফলন এবার বাংলাদেশের আসছে অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে৷ আপনার যদি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) থাকে, আপনার বছরে কোনো আয় না থাকলেও রিটার্ন দাখিল করতে গেলে অবশ্যই দুই হাজার টাকা জমা দিতে হবে৷ আয় নেই এমন নাগরিকের কাছ থেকে আয়কর আদায়ের পথেই যেন হাঁটছে আমাদের অর্থ-প্রশাসন৷
অন্যদিকে গ্যাস, তেল, বিদ্যুতের মতো নিত্যদিনের জ্বালানির দাম বাড়ানোর সহজ পথ আগেই করে নিয়েছেন সরকার বাহাদুর৷ জনতার কথা শুনতে রাজি নন তারা৷ তাই উঠিয়ে দেয়া হয়েছে গণশুনানির বাধ্যবাধকতা৷ জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকারের আদেশই এখন গ্রাহকের জন্য আইন৷ আর এই খাতে কোনো বৃদ্ধি মানেই আরেক দফা বাজার চড়া হওয়া৷ আরেক দফা বাসা ভাড়া বৃদ্ধি৷ বরাদ্দ বাড়াতে হয় তখন বাসা ভাড়ার খরচায়ও৷ এসব নিয়ে বেশি বিপাকে আছে চাকরিজীবী শ্রেণি৷ কারণ ব্যয় বেড়ে চললেও তাদের বেতন সেই গতিতে বাড়ছে না৷ বেসরকারি চাকুরেরা এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে না পারলেও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশের আগে থেকেই মাঠে আছেন৷ বাজার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন-ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করছেন তারা৷ নতুন জাতীয় বাজেটে এ বিষয়ে ইতিবাচক ঘোষণা আশা করেছিলেন সরকারি কর্মচারীরা৷ কিন্তু তেমন কোনো প্রাপ্তি দেখতে পাননি৷ তাই আবার মাঠে নেমে দাবি আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাষ্ট্রে নিয়োজিত চাকরিজীবীরা৷ বছর শেষে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন তাদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি শেষ অবধি অবশ্য ইতিবাচক সিদ্ধান্তের দিকেই এগুবে বলে মনে হচ্ছে৷
তবে বছরের এই ধাপে এসে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বেড়ে গেলে কিন্তু বেসরকারিদের বিপদ আরেক দফা বাড়বে৷ কারণ গণহারে সরকারি স্তরে বেতন বৃদ্ধির মতো বিষয় বাজারে ছাপ রেখে যায়৷ ২০১৫ সালে সবশেষ পে স্কেলের বেলায় কিন্তু নিত্যদিনের সব জিনিসের দাম আমরা বাড়তে দেখেছি৷
প্রকৃতিতে গরমের তোপ, দফায় দফায় লোডশেডিং, বাজারে আগুন- সবটা মিলে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের মতোই মধ্যবিত্তের জীবন এখন জেরবার৷ জাতীয় নয়, ঘরের বাজেটের হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছে না তারা৷ ঘাটতি নিয়েই তাদের এখন জোড়াতালির ঘর-বসতি-সংসার৷ অর্থমন্ত্রী ঘোষিত, ‘গরিব-ধনী'র বাজেটে মধ্যবিত্তের কথা কী আসলে ভাবা হয়েছে সেভাবে?