1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মধ্যবিত্ত বিনিয়োগ করবে কোথায়

হারুন উর রশীদ স্বপন
২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা হলো সঞ্চয়পত্র৷ কিন্তু সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার দিন দিন কমতে থাকায় তারা অনেকটা হতাশ৷ নিরাপদ বিকল্প বিনিয়োগেরও কোনো জায়গা নেই৷

Symbolbild Bangladesch Korruption Banknoten Geld Bestechung
ছবি: DW


রিনি রেজা একজন গৃহিণী৷ তিনি অনেক দিন ধরেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন৷ তার কথা এটা পেনশনের মত নিরাপদ৷ মাস শেষে বা তিন মাস পর পর লভ্যাংশ ব্যাংকেই জমা হয়৷ আর এটা দিয়ে তার সংসার খরচের বড় একটি অংশ মেটানো হয়৷ স্বামীর জমানো ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে তিনি এই স্কিম খুলেছেন ৷ তবে এখন সুদের হার কমে যাওয়ায় তিনি বিচলিত৷ কারণ ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন শতকরা ছয় ভাগের বেশি সুদ পাওয়া যায় না৷
আরিফুর রহমান অপু একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা৷ তার সঞ্চয়পত্র আছে৷ পরিকল্পনা ছিল অবসরে যাওয়ার সময় এককালীন যে টাকা পাবেন তা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন৷ তার হিসেবে তিনি দেড় কোটি টাকার মত এককালীন পাবেন৷ এটা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলে তাকে সংসার খরচের কথা আর ভাবতে হত না৷
তিনি বলেন," শেয়ার বাজারে রিটার্ন বেশি৷ কিন্তু আস্থার সংকটের কারণে আমরা সাহস পাই না৷ আবার ব্যাংকও শতকরা ৬ ভাগের বেশি সুদ দেয় না৷ আর তেমন কোনো বিনিয়োগের জায়গা নেই৷ আমরা তো আর সরাসরি ব্যবসা করতে পারব না৷”
সঞ্চয়পত্রে আরেকজন প্রবীণ বিনিয়োগকারী আলমগীর রেজা চৌধুরী বলেন," সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমার কারণে প্রতারকেরা সুযোগ নেয়৷ তারা নানা ধরনের অফার দিয়ে, বেশি লাভের কথা বলে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়৷”
সরকার বাংলাদেশের পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ বাংলাদেশে যে সঞ্চয়পত্রগুলো আছে তারমধ্যে রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র৷
প্রত্যেক সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই কমানো হয়েছে৷ যেমন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়৷ এখন নতুন নিয়মে যাদের এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হারে৷ আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ৷ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে চলতি মুনাফাই বহাল থাকছে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন,"১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ হলে তো আগের মতই মুনাফা দেবে সরকার৷ কিন্তু এর বেশি হলে মুনাফা কমবে৷ তারপরও ব্যাংক রেট দেখলে সঞ্চয়পত্রই এখনো বিনিয়োগের লাভজনক ও নিরাপদ জায়গা৷ শেয়ারবাজার আরেকটি ভালো জায়গা হতে পারত৷ এখানে মুনাফাও বেশি৷ কিন্তু অনিশ্চিত৷ শেয়ার বাজারে বার বার নানা ঘটনা ঘটায় মধ্যবিত্ত পুঁজি হারানোর ভয়ে সেখানে বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছে না৷”
বাংলাদেশে বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়৷ প্রবাসীদের জন্য বন্ডে সীমাহীন বিনিয়োগের সুযোগ আছে৷ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শরিয়াহ বন্ডে বিনিয়োগের ব্যবস্থা আছে৷ এইসব বিনিয়োগে ব্যাংক রেটের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়৷
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে৷ তবে তারা এখনো সাধারণ মানুষের অর্থ নেয়ার অনুমতি পায়নি সরকারের কাছ থেকে৷ ড. আতিউর রহমান বলেন,"সরকারকে নিশ্চয়ই বিকল্প বিনিয়োগের পথ তৈরি করে দিতে হবে৷ সরকার গ্রিন বন্ড ছাড়তে পারে৷ তবে শেয়ার বাজার যদি সঠিক মনিটরিং-এর আওতায় আসে এবং আস্থা ফিরে পায় তাহলে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র৷”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন মনে করেন,"সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে দেবে৷ বিনিয়োগের খাত তৈরি করা তার কাজ নয়৷ শেয়ার বাজার ঠিকমত কাজ করলে ব্যাংকের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা হতো৷ মানুষ বেশি মুনাফার জন্য শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করত৷ ব্যাংক রেটও তখন বাড়ত৷ এখন মানুষ নিরাপত্তার জন্য কম রেটে ব্যাংকে টাকা রাখতে বাধ্য হচ্ছে৷ শেয়ার বাজারের মিউচুয়্যাল ফান্ডও বিনিয়োগের একটি বড় জায়গা হতো৷ কিন্তু তা হয়নি৷”
তার কথা," করোনার কারণে সরকার আর্থিক চাপে আছে ৷ তাই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমানো হয়েছে৷ এর একটি যুক্তিও আছে৷ যারা এই করোনার সময়ও ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকা সঞ্চয়পত্রে রাখতে পারেন তাদের সরকার কেন সাবসিডি দেবে৷ সরকার সঞ্চয় পত্রে যে উচ্চ হারে সুদ দেয় তা তো সাবসিডি৷”
তারপরও যাদের কম বিনিয়োগ বা যারা এটার ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ তার মতে,"বয়ষ্ক বা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য একটি সিলিং বেধে দিয়ে তাদের উচ্চহারে মুনাফা দেয়া যেতে পারে৷ কিন্তু সবার জন্য নয়৷ সমস্যা হলো সেটা চিহ্নিত করা হবে কীভাবে?”
বিনিয়োগের জায়গাগুলো সংকুচিত হওয়ায় প্রতারকেরা নানা ধরনের লোভনীয় অফার দেয়৷ ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করে৷ অনেক বেশি মুনাফার লোভে মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেয়৷ তবে ড. আতিউর মনে করেন," লোভের কারণেই মানুষ বেশি প্রতারিত হয়৷ তাদের তো বোঝা উচিত অল্প সময়ে দুই-তিনগুণ মুনাফা পাওয়া যায় না৷ আর উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে কীভাবে একটি পণ্য বিক্রি হয়!”

ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন

This browser does not support the audio element.

ড. আতিউর রহমান

This browser does not support the audio element.

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ