শরীরের মতো মনের অসুখ করাটাও স্বাভাবিক৷ ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘ডিপ্রেশন'৷ কিন্তু শরীর খরাপ করলে আমরা যেভাবে খোলাখুলি আলোচনা করি, মনের অসুখ করলে তেমনটা করি না৷ তাই তো সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে একটি নতুন প্রচারণা৷
বিজ্ঞাপন
Follow the Hashtag: #ItsOkToTalk
02:47
হ্যাশট্যাগ ইট্স-ওকে-টু-টক (#ItsOkToTalk) জানান দিচ্ছে যে মন খারাপ হলে তা নিয়ে কথা বলাই শ্রেয়৷ বলছে, অবসাদ নিয়ে কথা বলা খারাপ কিছু নয়৷ বরং দিনের পর দিন মনের মধ্যে কষ্ট পুষে রাখলে তার ফল হতে পারে মারাত্মক৷ বিষণ্ণতা, হতাশা, ব্যর্থতার অনুভূতি, বিরক্তি, আনন্দহীনতা, অশান্তি, ইচ্ছাহীনতা, ক্লান্তি, যৌনতায় উৎসাহহীনতা, এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাও আসে মানসিক অবসাদ থেকে৷
সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সমস্ত তরুণরা আত্মহত্যা করছে বা আত্মহত্যার চেষ্টা করছে – তাদের অধিকাংশই ডিপ্রেশনের শিকার৷ শুধুমাত্র কারুর সঙ্গে সেই কষ্ট, সেই বেদনা নিয়ে কথা বলতে না পারার কারণেই তারা হারিয়ে যাচ্ছে৷
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকাই সঠিক সিদ্ধান্ত
চরম অবসাদ, অপমান, গ্লানি, অবহেলা – একাধিক কারণে বেঁচে থাকার ইচ্ছা লোপ পেতে পারে৷ কিন্তু দুর্বল মুহূর্তের সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেললে ফিরে আসার আর কোনো উপায় থাকে না৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
জীবন-মৃত্যুর প্রান্তে
সামনে শূন্যতা৷ ঝাঁপ দিলেই সব শেষ৷ মত বদলের কোনো অবকাশ নেই৷ কিন্তু মনের কোণে সামান্য সংশয় তো থেকেই যায়৷ বেঁচে না থাকলে সেই সংশয় যাচাই করার কোনো উপায় আছে কি?
ছবি: picture-alliance/dpa
আবেগ নয়, চাই যুক্তি
পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও সেটি দ্রুত কার্যকর না করাই বুদ্ধিমানের কাজ৷ নেতিবাচক আবেগের কালো মেঘ কেটে গিয়ে যুক্তির খুঁটি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত মন থেকে দূর করতে পারে৷
ছবি: Fotolia/Chlorophylle
চরম কষ্টের তাড়না
আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের পেছনে থাকে চরম বেদনা, হতাশা বা গ্লানি৷ সেই কষ্ট সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায়৷ দিশাহারা অবস্থায় মনে হয়, সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে৷ অথচ সেই কষ্ট কম করা, তা নিয়ে চলতে পারাও কিন্তু সম্ভব৷
ছবি: vkara - Fotolia.com
‘এই জগতে আমাদের ঠাঁই নেই’
একা নয়, প্রিয় মানুষটিকে সঙ্গে নিয়ে পার্থিব জগত ছেড়ে চলে যাবার কঠিন সিদ্ধান্তও নেন কেউ কেউ৷ সমাজ, ধর্ম, সম্প্রদায় বা রাষ্ট্র তাদের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় কোণঠাসা হয়ে মৃত্যুই একমাত্র পথ বলে মনে হয়৷ অথচ বিকল্প কি একেবারেই থাকে না?
ছবি: Getty Images/AFP
অন্যের প্রতি দায়িত্ববোধ
জগতটা শুধু নিজেকে নিয়ে নয়৷ নিজের দুঃখ, কষ্ট, কঠিন সমস্যার গণ্ডির বাইরেও আছে এক বৃহত্তর পৃথিবী৷ অন্যরাও সেখানে পুরোপুরি সুখি নয়৷ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ, সম্ভব হলে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে নিজের মনও শান্ত হতে পারে৷ অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের জগত দেখলে নতুন উপলব্ধি জাগতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নিঃসঙ্গতা থেকে আত্মহত্যার হাতছানি
নিঃসঙ্গতা, চরম একাকিত্ববোধ থেকেও আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসে৷ অথচ নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার বদলে চারিদিকে তাকালে কাউকে না কাউকে ঠিকই পাওয়া যাবে৷ পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী বা অন্য কোনো বৃত্তের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব, যে দুঃখ-বেদনার কথা শুনতে প্রস্তুত৷ মন হালকা হলে আত্মহত্যার হাতছানিও উধাও হয়ে যাবে৷
ছবি: Fotolia/ lassedesignen
6 ছবি1 | 6
অথচ শরীরের মতোই মনের অসুখ সারিয়ে তোলার জন্যও রয়েছে বিশেষ ডাক্তার, যাঁদের বলা হয় মনস্তাত্ত্বিক৷ তাঁদের কেউ কেউ এই অসুখ সারাতে ওষুধ-পত্রও ব্যবহার করেন৷ কেউ আবার শুধু কথা বলেই সারিয়ে ফেলতে পারেন এ ধরনের অসুখ৷
তাই মানসিক অবসাদ নিয়ে কথা বলতে হবে৷ কথা বলতে হবে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে, ডাক্তারের সঙ্গে৷ আর এতে যদি কেউ কুন্ঠা বোধ করেন, তাহলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তো রইলোই৷ আসলে সবচেয়ে প্রথমে এটাই বুঝতে হবে যে ‘ইটস ওকে টু টক'৷ আর সে জন্যই তো এই হ্যাশট্যাগ৷
ডিজি/এসিবি
আপনিও কি অবসাদে ভুগছেন? তাহলে #ItsOkToTalk ব্যবহার করে লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
বলিউডের যে তারকারা অবসাদের শিকার
তারকাদের ঝলমলে জীবন দেখে মনে হতে পারে, তাদের জীবনে কোনো অবসাদ বা ডিপ্রেশন নেই৷ বলিউডের অবসাদগ্রস্ত তারকাদের অনেকে এই মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও কেউ কেউ সমাধান হিসেবে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
দীপিকা পাড়ুকোন
দীপিকা ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন একথা নিজেই স্বীকার করেছেন একটি সাক্ষাৎকারে৷ তিনি বলেছেন, ‘‘একটা সময় আমার মনে হত আমি কি করব? কোথায় যাবো? আমি কেবল কাঁদতাম৷’’ দীপিকা নিজের অবসাদের ব্যাপারটি যে বুঝতে পেরেছেন এ কারণে বিশেষজ্ঞরা তাঁকে সাহসী বলেছেন৷
ছবি: DW/P. M. Tewari
আনুষ্কা শর্মা
দীপিকার পর আনুষ্কাও তাঁর অবসাদের কথা জানিয়েছেন৷ তিনি এ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক করেছেন৷ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘যখন আপনার পেটে ব্যথা হয় তখন কি আপনি চিকিৎসকের কাছে যান না? এটাও সেরকমই একটি ব্যাপার৷’’ আনুষ্কা জানিয়েছিলেন তাঁর অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার রয়েছে আর সেটার চিকিৎসা চলছে৷
ছবি: AP
পারভীন ববি
২০০৫ সালে পারভীন ববিকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছিল, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল মৃতদেহ উদ্ধারের ৭২ ঘণ্টা আগে৷ প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি বেশ কিছুদিন ধরে না খেয়ে ছিলেন৷ পারভীন ডিপ্রেশন এবং সিজোফ্রেনিয়ার শিকার ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সিল্ক স্মিতা
দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার জীবনী নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিদ্যা বালন অভিনীত ডার্টি পিকচার মুভিটি৷ নাম, যশ, খ্যাতির শিখরে থেকে একসময় তিনি মানসিক স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলেছিলেন৷ ১৯৯৬ সালে নিজের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি৷
ছবি: ALT Entertainment/Balaji Motion Pictures
জিয়া খান
২০১৩ সালে জিয়ার আত্মহত্যা বলিউডে তোলপাড় তুলেছিল৷ মাত্র ২৫ বছরের জিয়া নিজের ঘরে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছিলো৷ ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তাই তাঁর আত্মহত্যার কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মনীষা কৈরালা
গর্ভাশয়ে ক্যান্সারের কারণে মনীষা অবসাদে ভুগছিলেন৷ কিন্তু এসময় পরিবার ও বন্ধুরা তাঁকে সঙ্গ ও সাহস দেয়ায় তিনি সেই অবসাদ থেকে ফিরে এসেছেন৷ মনীষা বলেন তিনি নিরাশাবাদী নন, তাই ডিপ্রেশনের সাথে লড়াই করে জিতেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শাহরুখ খান
বলিউডের বাদশাহ বলা হয় তাঁকে৷ কিন্তু তিনিও ডিপ্রেশনের শিকার৷ এটা শুনতে অস্বাভাবিক লাগতে পারে৷ কেননা জীবনে নাম, যশ, খ্যাতি কোনোটারই অভাব নেই তাঁর৷ কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ বলেছিলেন, কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর বেশ অনেকটা সময় তিনি অবসাদে ভুগছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP
অমিতাভ বচ্চন
অ্যাংরি ইয়াং ম্যান হিসেবে পরিচিত অমিতাভ বচ্চন বরাবরই কঠিন সব ভূমিকায় অভিনয় করেন৷ ৯০ এর দশকে নির্মাতা হিসেবে নিজের প্রতিষ্ঠান শুরু করেছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেই কোম্পানি পরিবেশিত মুভিগুলো ফ্লপ হওয়ায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছিলেন৷ সেই সময় তিনি গভীর অবসাদে ভুগছিলেন৷ তাই মানসিক অসুস্থতার কারণে শারীরিক কিছু অসুস্থতাও দেখা দিয়েছিল তাঁর৷
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images
ধর্মেন্দ্র
এক, দুই না টানা ১৫ বছর ধরে অবসাদে ভুগেছিলেন বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র৷ ডিপ্রেশনের কারণে তিনি মদ্যপান শুরু করেন এবং এতে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েন যে সংসারে অশান্তি শুরু হয়৷ কিন্তু বর্তমানে তিনি এসব পেছনে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন৷
ছবি: Mskadu
গুরু দত্ত
১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর নিজের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম সৃজনশীল পরিচালক গুরু দত্তকে৷ বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন৷ প্রতি রাতে মদ্যপান এবং ঘুমের ওষুধ ছিল তাঁর সঙ্গী৷ যেদিন মারা যান সেদিনও একসাথে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন৷