শাহবাগ এখন সর্বত্র৷ সর্বত্র বলতে দুনিয়ার যেখানেই বাংলাদেশিরা আছেন, বাঙালিদের বাস৷ কাজেই লন্ডন শহর যে বাদ যাবে না, সেটা স্বাভাবিক৷ তবে আন্দোলনের বিরোধীরাও রয়েছে৷ তফাতটা এই যে, তারা তুর্কি থেকে সোমালি, সব কিছু হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
কথাটা বলছিলেন লন্ডনবাসী বাংলাদেশি, ‘আমার ব্লগ'এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুশান্ত দাশগুপ্ত৷ গোড়ায় তিনি অবশ্য বললেন, ‘‘লন্ডনে, মনে করেন, এটা একটা সেকেন্ড শাহবাগ৷'' লন্ডনে বহু বাংলাদেশির বাস৷ তাদের অধিকাংশই শাহবাগের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, বললেন সুশান্ত, ‘‘এক জামাতি বাদ দিলে৷'' এবং শাহবাগের সঙ্গে মিল রেখেই তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ লন্ডনে বাংলাদেশিদের যে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন আছে, তারা নিজের নিজের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে৷
জেগে আছে প্রজন্ম চত্বর
মূল দাবি একটাই, ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’৷ এই দাবি নিয়ে পাঁচই ফেব্রুয়ারি থেকে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান করছে তরুণ প্রজন্ম৷ তাদের সমর্থন জানাচ্ছে সবশ্রেণির মানুষ৷ ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকদিন৷ কিন্তু এক চুল নড়েনি তারা৷
ছবি: Reuters
লাগাতার আন্দোলন
শাহবাগে অবস্থান নেওয়া তরুণ প্রজন্ম গত পাঁচ ফেব্রুয়ারি ধরে লাগাতার তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় তারা৷ ডয়চে ভেলের ওয়েবসাইটে নিয়মিত সেখানকার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাতীয় দলের আগমন
রবিবার প্রজন্ম চত্বরে এক টুকরো আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে এসেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা৷ আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল, শাহবাগে অবস্থান নেওয়া ব্লগার, তরুণ সমাজের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আসছেন তাঁরা৷ রবিবার সেই খবরের সত্যতা প্রকাশ পেলো৷
ছবি: REUTERS
টুইটার লড়াই
হ্যাশট্যাগ #shahbag, কেউ কেউ ব্যবহার করছেন #shahbagh - আসলে শাহবাগের ইংরেজি বানান নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে৷ উইকিপিডিয়া শেষের এইচটি বাদ দিলেও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সেটি ধরে রেখেছে৷ এই বিভ্রান্তি অবশ্য টুইটার লড়াইকে পেছনে ফেলেনি৷ বরং সমানতালে দু’টি হ্যাশটাগ দিয়েই জানানো হচ্ছে আন্দোলনের অগ্রগতি৷
ছবি: REUTERS
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ‘শোধরানোর’ চেষ্টা
শাহবাগের প্রতিবাদ কি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে না ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে? বিবিসি ইংরেজি বিভাগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের শিরোনামে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল৷ টুইটারে আন্দোলনকারীদের অব্যাহত দাবির পর সেই শিরোনামে বদল এসেছে৷ ইসলামপন্থী বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধ শব্দটি জোড়া হয়েছে সেখানে৷ এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আমারব্লগ৷
ছবি: amarblog.com
‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’
প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান করছেন ‘শাহবাগ সাইবার যুদ্ধ’ দলের অনেক সদস্য৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ সাইট ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির দাবিকে আরো সোচ্চার করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা৷ পাশাপাশি প্রজন্ম চত্বরের সর্বশেষ পরিস্থিতিও ইন্টারনেটে তুলে ধরা হচ্ছে এদের মাধ্যমে৷
ছবি: REUTERS
‘আপনার সহায়তা প্রয়োজন’
ডয়চে ভেলের টুইটার পাতাতে আন্দোলনকারীদের কিছু বার্তা আমরা পেয়েছি৷ জিন্নাত গোনিম নামক ঢাকার এক বাসিন্দা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা কোন রাজনৈতিক দল, ধর্ম বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি নই৷ আমরা বাংলাদেশি৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাচ্ছি, আমার মায়ের হত্যাকারীর, বোনের ধর্ষকের বিচার চাচ্ছি৷ আমাদের আপনার সহায়তা প্রয়োজন৷’’
ছবি: twitter.com
এই প্রজন্মের নারী মুক্তিসেনাদের লড়াই
গত কয়েকদিন ধরেই গণমাধ্যমের শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছেন লাকি আক্তার৷ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী আন্দোলন শুরুর দিন থেকে রয়েছেন শাহবাগে৷ তাঁর মতো আরো কয়েকজন নারী মুহুর্মুহু শ্লোগানে কাপিয়ে তুলছেন প্রজন্ম চত্বর৷ বিভিন্ন স্কুলকলেজের ছাত্রীরা মাঝেমাঝে হাজির হচ্ছেন আন্দোলনে৷
ছবি: REUTERS
‘ফাঁসির মঞ্চ’ প্রস্তুত
‘রাজাকারের ফাঁসি চাই’ - এই হচ্ছে প্রজন্ম চত্বরে আন্দোলনরতদের মূল দাবি৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করলে তা প্রত্যাখ্যান করে তরুণ প্রজন্ম৷ তারা চায় ফাঁসির আদেশ৷ শাহবাগে প্রতীকী ‘ফাঁসির মঞ্চ’ তৈরি করে যুদ্ধাপরাধীদের চরম শাস্তির অপেক্ষায় আছে ব্লগাররা৷
ছবি: Reuters
সপরিবারের শাহবাগে
শাহবাগে অনেকেই হাজির হচ্ছেন সপরিবারে৷ ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাহিত্যিক, অধ্যাপক অনেকেই এসেছেন সপরিবারে৷ এই ছবিতে এক শিশুকে দেখা যাচ্ছে শাহবাগ চত্বরে, প্রতিবাদী ব্যানার মাথায় জড়িয়ে৷
ছবি: REUTERS
ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক
‘ট্র্যাইবুনালে কাদের মোল্লার প্রহসনের রায়ের বিরুদ্ধে মহাসমাবেশ’ - এই শিরোনামে পাঁচ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক৷ ব্লগারদের আহ্বানে সেদিন শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷ এখন এই আন্দোলন আমজনতার৷
ছবি: REUTERS
10 ছবি1 | 10
বিগত ৮ই জানুয়ারি আলতাব আলী পার্কের ভাষা শহীদ মিনার প্রাঙ্গণের সমাবেশে জামায়াত সমর্থকদের নিয়ে গোলযোগের কথা বললেন সুশান্ত৷ দৃশ্যত জামাত আগেভাগেই সমাবেশ করার অনুমতি নিয়ে বসে ছিল, যে কারণে বাকিরা সেখানে পৌঁছলে পুলিশ তাদের জানায়, তারা এখানে সমাবেশ করতে পারবে না৷ বিরোধ ও উত্তেজনার শুরু সেখান থেকেই৷ এবং সে'যাবৎ প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ও প্রত্যেকটি স্থানে একই কৌশল অবলম্বন করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীরা, জানালেন সুশান্ত দাশগুপ্ত৷
মঙ্গলবার ঐ আলতাব আলী পার্কের সামনেই তিন মিনিটের নীরবতা পালনের প্রচেষ্টায় তাদের ব্যাঘাত দেয় জামাত সমর্থক এবং যুক্তরাজ্যে ‘বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ' কিছু ছেলেরা, যারা সব সময়ে কাছাকাছিই থাকে৷ এই হল সুশান্তর বিবরণ৷ তারা নাকি ‘‘বিভিন্নভাবে মেসেজ দিচ্ছে, ইমেল দিচ্ছে, তোমাকে আমি দেখে নেব৷'' এই ভাবেই উত্তেজনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ বিরোধ শেষ অবধি সংঘর্ষের রূপ ধারণ করার ‘‘খুবই সম্ভাবনা আছে'', বললেন সুশান্ত দাশগুপ্ত৷ বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারি ঐ আলতাব আলী পার্কেই জমায়েত হবেন তারা – এবং জামাত ও তাদের সহচররা বাধা দিতে এলে, তারা সে বাধা মানবেন না, বলে ঘোষণা করলেন সুশান্ত৷ কাজেই সেদিন সংঘর্ষের বিশেষ আশঙ্কা থাকবে৷
বলতে কি, সুশান্তর মতো ‘অ্যাক্টিভিস্টরা' যে যার নিজের মতো করে পুলিশকে জানিয়েছেন তাদের প্রতি হুমকির কথা৷ পুলিশ দৃশ্যত বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে এবং পুলিশ মোতায়েন আছে৷
যুদ্ধাপরাধের বিচার বিরোধী এই মানুষগুলি কারা, এ'প্রশ্নের জবাবে সুশান্ত বলেন, অবশ্যই জামায়াতি ইসলামির সমর্থক, যারা বাংলাদেশি৷ সেই সঙ্গে এই দেশে জন্ম কিছু তরুণ-কিশোর, যারা ‘‘একদম ব্রেনওয়াশড৷'' তাদের বোঝানো হয়েছে, ‘‘সাঈদি'র বিরুদ্ধে যারা, তারা সবাই কাফের, তারা হিন্দু এবং তারা ইসলাম ধর্মের বিরোধী''৷
যুক্তরাজ্যে জন্ম এবং যুক্তরাজ্যে পালিত এই বিপক্ষ গোষ্ঠীতে শুধু বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরাই নয়, সেই সঙ্গে ‘‘ইরান আছে, ইরাক আছে, সৌদি আরব আছে, দুবাই আছে; বিশেষ করে তুরস্কের ছেলেমেয়ে আছে কিছু; তারপরে সোমালি৷'' এদের সকলেরই জন্ম যুক্তরাজ্যে, সেখানেই বড় হয়েছে৷ তারা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জানে না৷ ‘‘শুক্রবারে তারা কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞাসা করছিল, ‘আর ইউ হিন্দু? আর ইউ কাফির? হোয়াই আর ইউ হিয়ার?''