মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শনিবার সৌদি আরবের দুটি তেল প্রক্রিয়াজাতকরণ স্থাপনায় হামলার জন্য ইরান দায়ী বলে মনে হচ্ছে৷ তবে তিনি যুদ্ধে যেতে চান না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
ঐ হামলার জন্য ইরান দায়ী কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে ‘এই মুহূর্তে সেটিই মনে হচ্ছে' বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প৷
রোববার ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আভাস দিয়েছিলেন৷ সোমবার তিনি জানান, যুদ্ধে যেতে তাঁর ‘তাড়াহুড়া নেই'৷ ‘‘আমি এমন একজন মানুষ যে যুদ্ধ করতে পছন্দ করে না,'' বলেন তিনি৷
এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও জ্বালানিমন্ত্রী রিক পেরি ইতিমধ্যে হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন৷
ইরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
সৌদি আরব বলছে, হামলায় ‘ইরানের অস্ত্র' ব্যবহৃত হয়েছে৷ তবে হামলার জন্য ইরান দায়ী কিনা, তা সরাসরি বলেনি৷
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়ে থাকে কে? উত্তরে আসতে পারে ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েল, জর্ডান বা মিসরের নাম৷ কিন্তু বিশ্বরাজনীতিতে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে মার্কিন বন্ধুত্ব একটু অন্যরকমই৷
ছবি: Bandar Algaloud/Courtesy of Saudi Royal Court/Handout/REUTERS
বিশেষ বন্ধুত্ব
১৯৪৫ সালে সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট৷ তখন থেকেই বিশেষ এক বন্ধুত্ব শুরু দুই দেশের৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলেও এই বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি৷ ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন সমর্থিত শাহের পতন ঘটলে সৌদি আরব পরিণত হয় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধুতে৷
ছবি: picture alliance/akg-images
ইরানে ইসলামী বিপ্লব
১৯৭৯ সালে শাহকে সরিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানের ক্ষমতায় আসেন৷ অ্যামেরিকাকে ‘গ্রেট শয়তান’ আখ্যা দেন খোমেনি৷ তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতার ফলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি৷ আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় বরাবরই ইরানের বিপক্ষে সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/Christian Ohde
কুয়েত আক্রমণ
১৯৯০ সালের আগস্টে কুয়েত দখল করে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক৷ সে সময় কুয়েতের রাজপরিবারকে আশ্রয় দেয় সৌদি আরব৷ যুক্তরাষ্ট্র কুয়েতকে ইরাকি বাহিনীর দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায়৷ সে সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Guyot
টুইন টাওয়ার হামলা
সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং পরবর্তীতে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের৷ ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর পরও এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি৷ ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর ইরাক আক্রমণেও সহায়তা করে সৌদি আরব৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
ইয়েমেন সংকট
হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলা শুরু করে৷ তিন বছর ধরে চলা এ হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও উঠেছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
কাতার
আরব বসন্তের পর থেকে এক সময়ের বন্ধু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হয় কাতারের৷ অনেকটা বিপ্লবীদের পক্ষে কাতারের অবস্থান থাকলেও সৌদি আরব অবস্থান নেয় বিপক্ষে৷ তবে দুই দেশই বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় বিরোধে পক্ষ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে কাতারকে একঘরে করে দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পায় সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance
খাশগজি
তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার অভিযোগে বেশ বিপাকে পড়েছে সৌদি আরব৷ আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে এবং খাশগজি যুক্তরাষ্ট্রেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় বন্ধুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্রও৷ তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবকে এ বিপদ থেকেও উদ্ধারচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে৷ কোন প্রমাণ ছাড়াই খাশগজি ‘দুর্বৃত্তের’ হাতে নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/V. Mayo
7 ছবি1 | 7
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, হুতি আন্দোলনের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলার প্রতিশোধ নিতে ‘ইয়েমেনের মানুষরা' সৌদি আরবে হামলা করেছে৷
‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা নয়'
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগের নীতি মূল্যহীন৷ ইরানের কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন না যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে৷''
আগামী সপ্তাহে নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় ইরানের প্রেসিডেন্টে হাসান রুহানির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা জানিয়ে দিলেন যে, তা সম্ভব নয়৷
ডনাল্ড ট্রাম্প ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে৷ চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়া ছাড়াও ইরানের উপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও একের পর এক চুক্তি ভঙ্গের কাজ করে চলেছে৷
এভাবে ইরানের উপর ‘সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগ করে দেশটির সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে চান ট্রাম্প৷