মন্দা কাটাতে খিচুড়ি বিক্রি করবে মাল্টিপ্লেক্স
২৭ জুন ২০২০করোনা সংক্রমণ রুখতে জারি লকডাউন এখনো পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি৷ ইতিমধ্যে ভারতের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এই বন্ধ্যা দশা৷ ব্যাপক হারে কর্মী সংকোচন চলছে, বাতিল হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প৷ ব্যবসা বাঁচাতে অনেক সংস্থা তাদের পরিকাঠামো ব্যবহার করছে একেবারে ভিন্ন ধরনের কাজে৷ এক্ষেত্রে ভারতে পথ দেখাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মাল্টিপ্লেক্স সংস্থা কার্নিভাল৷ দেশের ১২০টি শহরে ৪৭০টি স্ক্রিন রয়েছে তৃতীয় বৃহত্তম এই মাল্টিপ্লেক্স সংস্থার৷ তারা লকডাউনে এতটাই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে যে খাবারের ব্যবসায় নেমে পড়ছে৷ অর্থাৎ মূল ব্যবসার চরিত্রই বদলে যাচ্ছে।
লকডাউনের আগে থেকেই আর্থিক সংকটের মধ্যে ছিল কার্নিভাল৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য ছবির প্রদর্শন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই সংস্থার সংকট চরমে পৌঁছয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সিনেমার টিকিট ছাড়াও আনুষঙ্গিক পরিষেবা বাবদ কিংবা বিজ্ঞাপন খাতে যে আয় মাল্টিপ্লেক্স সংস্থার হয়, তা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে কার্নিভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিভিন্ন শহরের সিনেমা হলগুলিকে ক্লাউড কিচেনে পরিণত করে বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহ করা হবে৷ মেনুতে থাকছে খিচুড়ি, পোলাও, পরোটা, কারি, সাম্বার ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় খাবার৷ এজন্য তারা খাবার সরবরাহকারী সংস্থা ‘সুইগি’,‘জোম্যাটো’-র সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে৷
ক্লাউড কিচেন এক ধরনের বাণিজ্যিক হেঁশেল যেখানে শুধু অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়৷রেস্তোরাঁর মতো এখানে বসে খাওয়ার অবকাশ নেই।
কার্নিভাল-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত ভাসি জানিয়েছেন, তাঁরা বন্ধ থাকা হলগুলিকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন যাতে আর্থিক ক্ষতি পোষানো যায়৷খাবারের ব্যবসায় কখনো মন্দা দেখা দেবে না, তাই সিনেমা প্রদর্শনের মূল ব্যবসা থেকে কিছুটা সরে যাচ্ছে কার্নিভাল৷ ডমিনোজ এবং ম্যাকডোনাল্ডসের মতো বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে চলেছে তারা।
এই সংস্থার সদরদপ্তর মহারাষ্ট্রে৷ মুম্বই, বেঙ্গালুরু, কেরল, যোধপুর, বারাণসী-সহ কয়েকটি শহরে তারা ইতিমধ্যেই ক্লাউড কিচেন খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ কলকাতার সল্টলেকে কার্নিভালের একটি শাখা রয়েছে৷ সেখানে হেঁশেল খোলার ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সংস্থাটি৷ এমনই দাবি কার্নিভালের কলকাতা শাখার সিনিয়র ম্যানেজার কুন্তল ঘোষের৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে দশটা জায়গায় কিচেন খোলা হবে৷ আগামী দুই বছরে মোট ১০০টি কিচেন খোলার পরিকল্পনা রয়েছে৷ তবে কলকাতায় এই কিচেন খোলার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ এই কারণে কলকাতায় লকডাউনের পর সিনেমা প্রদর্শনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷’’ কুন্তলের বক্তব্য, ‘‘কলকাতায় মানুষ সিনেমা দেখতে আসবে৷ সেজন্য আমরা ইতিমধ্যেই নিয়মনীতি তৈরি করে ফেলেছি৷ হল খোলার ১৫ দিন আগে থেকে আয়োজন শুরু হবে৷ স্যানিটাইজ করা হবে প্রেক্ষাগৃহ৷ সামাজিক দূরত্ব মেনে দূরে দূরে দর্শকদের বসার ব্যবস্থা করা হবে।’’
কলকাতার আরো দুই শীর্ষস্থানীয় মাল্টিপ্লেক্স সংস্থা আইনক্স এবং পিভিআর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে৷সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ থাকলেও তারা মূল ব্যবসা বদল করার কথা ভাবছে না৷ বরং ব্যবসার চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে অন্যান্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে চাইছে৷ কলকাতায় আইনক্সের ১১টি হল রয়েছে৷ আইনক্স লেজার লিমিটেড-এর সিইও অলোক ট্যান্ডন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এজন্য জোর দেয়া হবে প্রাইভেট স্ক্রিনিং-এ৷ অর্থাৎ কোনো একটি সংস্থা বা পরিবার আইনক্স ভাড়া নিতে পারবে সিনেমা দেখানোর জন্য৷ এছাড়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর সঙ্গে বোঝাপড়ায় ছেলেমেয়েদের জন্য স্পেশাল শো হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কনসার্ট ও খেলার ইভেন্ট আয়োজনের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি৷ইতিমধ্যেই এনবিএ, পিবিএল, রাজস্থান রয়্যালস-এর সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে৷’’
মাল্টিপ্লেক্স সংস্থা পিভিআরের ভারতের ৭১টি শহরে ৮৪৫টি স্ক্রিন রয়েছে৷ তারাও আইনক্সের মতো সিনেমার ব্যবসাকেই আঁকড়ে রাখতে চাইছে৷লকডাউনের পরে নয়টি নতুন হলিউড ছবি দেখানোর প্রস্তুতি তারা ইতিমধ্যে সেরে ফেলেছে৷
চলচ্চিত্র সাংবাদিক নির্মল ধর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্যবসার পরিবর্তন হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কারণ, প্রত্যেকের ব্যবসাই সংকটে৷ সিনেমা হল খুললেও করোনা সুরক্ষাবিধি মানতে হবে৷ হল চালানোর জন্য সরকার কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি ঠিক করে দেয়, সে দিকে নজর রাখছে হল কর্তৃপক্ষ৷ তারপরেই বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে দাঁড়াবে।’’
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন...