1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

মন্দা ঠেকাতে চাই সঠিক ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অপচয় রোধ

৭ অক্টোবর ২০২২

২০২৩ সাল হতে পারে বিশ্ব মন্দার বছর৷ মন্দা চলতে পারে ২০২৪ সাল পর্যন্ত৷ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তোরণের বছর ২০২৬৷ বাংলাদেশ কি পারবে বিশ্ব মন্দার কাল কাটিয়ে এগিয়ে যেতে?প্রস্তুতি কেমন?

Bangladesch | Waren für Bazar in Dhaka
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance

বাংলাদেশে এখন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে৷ গত ১১ বছরের মধ্যে মুল্যস্ফীতি এখন সবচেয়ে বেশি৷ এটাকে অর্থনীতিবদরা মন্দার প্রথম লক্ষণ মনে করছেন৷ তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দেয়৷ ক্রয় ক্ষমতা কমে যায় সাধারণ মানুষের৷ তারা টিকে থাকার জন্য কম খায়, কম কেনে৷ এর প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে৷ বাজারে চাহিদা কমে যায়৷ ফলে সরবরাহও এক পর্যায়ে কমে যায়৷ কমে যায় উৎপাদন৷ অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে যায়৷ আমদানি কমলে রপ্তানিও কমে৷ কাঁচামালের আমদানি কমলে উৎপাদনও কমে৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ যে হিসাব প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ১১ বছর তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে৷ আগস্ট মাসে তারা মূল্যস্ফীতির হিসাব করেছে ৯.৮৬ শতাংশ৷ অবশ্য সেপ্টেম্বর মাসে একটু কমে তা হয়েছে ৯.১ শতাংশ৷ আর খাদ্যপণ্যের  মূল্যস্ফীতি শতকরা ১০ ভাগের ওপর৷ আবার গ্রামে শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেশি৷

বাংলাদেশে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১০.২ শতাংশ৷ এরপর মূল্যস্ফীতি আর কখনোই ৯ ভাগ ছাড়ায়নি৷ চলতি আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে তা ছাড়িয়ে গেল৷

মন্দার অন্তত একটি ইনডিকেটর স্পষ্ট: ড. নাজনীন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতা এবং কর্মসংস্থান এই দুইটি সূচক দিয়ে মন্দা পরিস্থিতি বোঝা যায়৷ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যদি কমে যায় আর কর্মসংস্থান যদি না বাড়ে, তাহলে মন্দা তৈরি হয়৷ আমাদের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে৷ আর কর্মসংস্থান হলেও তা কাঙ্খিত মাত্রায় নয়৷ গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷ আবার প্রবৃদ্ধিও চাপের মুখে৷ আমাদের রেমিট্যান্স ওঠা-নামা করছে৷ রপ্তানি আয়ও স্থিতিশীল নয়৷ ফলে আমাদের অর্থনীতি চাপের মুখে আছে৷  মন্দার অন্তত একটি ইনডিকেটর স্পষ্ট৷”

সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় দুটিই কমেছে৷ রপ্তানি ৬.২৫ এবং রেমিট্যান্স ১০ শতাংশ কমেছে৷ রেমিট্যান্স গত সাত মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন৷ যে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয়ের ৮২ ভাগ আসে, সেখানে কমেছে ৭ শতাংশ৷

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘উন্নত বিশ্বে তো মন্দার আশঙ্কা সবাই করছেন৷ ইউরোপ-অ্যামেরিকায় তো মন্দা নিয়ে এখনই হইচই শুরু হয়ে গেছে৷ তাই যদি হয়, তাহলে আমরা রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক কোথায় রপ্তানি করবো? তবে রেমিট্যান্স প্রবাহে হয়ত অতটা ধস নামবে না৷ কিন্তু আমাদের বিদেশি বিনিয়োগ নেই৷ অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগও হচ্ছে না৷ ব্যাংক রেট যা, তাতে তো মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখবে না৷ তাহলে কর্ম সংস্থান বাড়বে কীভাবে?’’

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলার৷  কোনোভাবেই ৪০ বিলিয়ন ডলারের উপরে যেতে পারছে না৷ ডলার নিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না৷ ফলে টাকার দাম কমছে৷ এর মধ্যে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের বাজারকে অস্থির করছে৷ এই পরিস্থিতির মধ্যে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন করবে৷ কিন্তু মন্দা যদি আঘাত হানে তার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি কি আছে? ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘প্রস্তুতি বলতে আমরা সবাই এটা নিয়ে আলোচনা করছি৷ কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন করে অভ্যন্তরীণভাবে অর্থনীতিকে শক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ দাম বাড়লেও অসুবিধা নেই, যদি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে৷ সেটা তো হচ্ছে না৷’’

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চাপের মুখে আছে৷ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে৷ এর প্রভাব শিল্প ও কৃষিখাতে পড়ছে সরাসরি৷ উৎপাদন ব্যয় বাড়ার সাথে সাথে উৎপাদনও কমেছে৷ গড়ে উৎপাদন কমেছে শতকরা ২০ ভাগ৷ পোশাক খাতেও একই হারে উৎপাদন কমেছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘‘আমদানি কমলে হয়ত ডলার বাঁচবে, কিন্তু আমদানির বড় অংশই হলো কাঁচামাল ও মেশিনারিজ৷ এখানে আমদানি কমলে শিল্পের ক্ষতি হবে৷ তাতে আসলে রপ্তানিও কমবে৷ ভোগ, আমদানি, রপ্তানি কোনোটা কমাই অর্থনীতির জন্য ভালো নয়৷ এটা হলে অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ে৷ সেটাই তো মন্দা ডেকে আনে৷”

ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, ‘‘মন্দার সেকেন্ডারি প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে৷ সেটা সামলানোর যথাযথ প্রস্তুতি এখনই নেয়া উচিত৷ যদি এখন না নিয়ে পরে নেয়া হয় তাহলে সেটা হয়ত কার্যকর করার সময় থাকবে না৷ ডলারের একাধিক রেট, ব্যাংকের সূদের হার এগুলো এখনই ঠিক করা দরকার৷ আর মূল্যস্ফীতি অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যবস্থা করতে হবে৷ এটা দেশে বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে চরম চাপে ফেলছে৷ বৈষম্যও তৈরি করছে৷ মানুষ তার আয় হারিয়ে ফেলছে৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশ একটি সংকোচনমূলক অর্থনীতির দিকে চলে যাচ্ছে৷  সেটা অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো না৷ আমদানি নিয়ন্ত্রণ করলে রপ্তানি নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়৷ তার একটি চেইন এফেক্ট আছে৷ এতে উৎপাদন, আয়- ব্যয়, রপ্তানি, আমদানি সবই কমে যায়৷ আর রেমিট্যান্স প্রবাহ কমলে ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগ এবং ভোগও কমে যায়, যেটা অর্থনীতিকে স্থবির করে দেয়৷ ফলে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যায়৷”

‘বাংলাদেশ একটি সংকোচনমূলক অর্থনীতির দিকে যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

চলতি বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭. ৫ ধরা হলেও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) বলছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি হতে পারে সর্বোচ্চ ৬.৬ শতাংশ৷ এটাকেও অবশ্য এডিবি ভালো প্রবৃদ্ধি মনে করে৷
বাংলাদেশে জিডিপির প্রধান তিনটি খাত কৃষি, শিল্প এবং সেবা ঝুঁকির মধ্যে আছে৷ সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, "অর্থনীতির এই অবস্থার পিছনে এখন নেগেটিভ চেইন এফেক্ট কাজ বরছে৷ বাইরে থেকে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে৷ এখন অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এর বিকল্প হতে পারে৷ কিন্তু তার সম্ভাবনাও কম৷ রিজার্ভ কমে যাওয়া এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এই দুইটি আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্য, বিশেষ করে আমদানিকে ব্যয়বহুল করে তুলছে৷ এই ধরনের পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে রপ্তানিমুখী খাতে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না৷ আর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন শুধু বাধাগ্রস্ত হয় না, নতুন বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হয়৷”

অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘আমি মনে করি, সামগ্রিক যে পরিস্থিতি, বিশ্ব অর্থনীতিতে যে সংকট চলছে, তা আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন৷ তাই এর প্রভাব দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়তে পারে৷ সামষ্টিক অর্থনীতি, মুদ্রাবাজার, বাজার সবখানে পড়তে পারে৷ তাই একটি সামগ্রিক পর্যালোচনা দরকার৷ আর সেখান থেকে এখনই পরিকল্পনা করে তার বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন৷”

তিনি মনে করেন, ‘‘এত কিছুর মধ্যেও আর্থিক ব্যবস্থাপনা যদি ঠিক করা যায়, দুর্নীতি যদি দূর করা যায়, অপচয় যদি রোধ করা যায় তাহলে হয়ত পরিস্থিতি সামলানো যাবে৷”

২৫ সেপ্টেম্বরের ছবিঘর দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ