1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্দা সত্ত্বেও সাফল্যের মুখ দেখছে লুফটহানসা

১৬ সেপ্টেম্বর ২০০৯

জার্মানিতে যেসব প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক সঙ্কটের ঝড়-ঝাপটা সামলে উঠে টিকে রয়েছে, তার মধ্যে লুফটহানসা অন্যতম৷

লুফটহানসা’র সাফল্য নজর কাড়ার মতছবি: AP

বিমান চলাচল ক্ষেত্রে সঙ্কট

প্রায় ১ বছর আগে লিমান ব্রাদার্সের পতন ও তার জের ধরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে যেসব শিল্পক্ষেত্র সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল অন্যতম৷ সঙ্কটের ঠিক আগে পেট্রোলিয়ামের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় বিমান চলাচলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল৷ সঙ্কটের ফলে তেলের দাম কমে গেলেও যাত্রীসংখ্যা আচমকা কমে যায় – বিশেষ করে সেই সব যাত্রী, যারা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বিলাসবহুল ফার্স্ট বা বিজনেস ক্লাসে যাতায়াত করেন৷

বিলাসবহুল বিজনেস ক্লাস’এ যাত্রীরা বাড়তি আরাম ও পরিষেবার স্বাদ পানছবি: PA/dpa

লুফটহানসা’র কৌশল

জার্মানির বিমান সংস্থা লুফটহানসা এই সঙ্কট সত্ত্বেও গত এক বছরে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে৷ এমনকি ব্রিটিশ মিডল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্স অধিগ্রহণের ফলে লুফটহানসা এখন ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থা৷ তাছাড়া গোটা বিশ্বে বিমান সংস্থাগুলির সবচেয়ে বড় নেটওয়ার্ক ‘স্টার অ্যালায়েন্সে’এরও অংশ এই সংস্থা৷ লুফটহানসার মূল সাফল্যের রহস্য এখানেই৷ বিমান সংস্থা হিসেবে শুধু যাত্রী বা পণ্য পরিবহনের মধ্যেই কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ রাখে নি এই সংস্থা৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট ও মিউনিখ বিমানবন্দরে বিশাল পরিকাঠামো গড়ে তুলে অন্যান্য বিমান সংস্থাগুলিকেও পরিষেবা দিয়ে বাড়তি অর্থ উপার্জন করে থাকে লুফটহানসা৷ পাইলট, এয়ার হোস্টেস, যন্ত্রকুশলী থেকে শুরু করে সব রকম বিমান কর্মীদের প্রশিক্ষণ, দূরপাল্লার বিমানযাত্রার জন্য খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ – এমন অনেক ক্ষেত্রেই লুফটহানসা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে৷

অন্য অনেক বিমান সংস্থার পাইলট, এয়ার হোস্টেস ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয় লুফটহানসাছবি: AP

ব্যয়-সঙ্কোচের উদ্যোগ

এই সাফল্য সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে লুফটহানসাকে যথেষ্ট আর্থিক চাপ সামলাতে হচ্ছে৷ এই চ্যালেঞ্জের মুখে ঐ সংস্থা ব্যয় সঙ্কোচনের এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার আওতায় আগামী ২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০০ কোটি ইউরো ব্যয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ মূলত ব্যবস্থাপনার পর্যায়ে উন্নতি ঘটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়িয়ে এই কাজ করতে চায় লুফটহানসা৷ তবে কোনো রুটেই বিমান চলাচল বন্ধ করতে চায় না ঐ সংস্থা৷ বিশেষ করে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বিমান সংস্থাগুলির বেড়ে চলা সাফল্যের ফলে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তার মুখে লুফটহানসা বাজারে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে চায়৷

ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরের গুরুত্ব

ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরই লুফটহানসার প্রাণকেন্দ্র৷ গোটা বিশ্বে বিশাল নেটওয়ার্ক চালু রাখা, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ করা, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিমানগুলিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা – এই সবই পরিচালনা করা হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে৷ এই বিশাল কর্মযজ্ঞের দায়িত্ব পালন করছেন ড.কার্ল রুডলফ রুপরেশ্ট৷ অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে লুফটহানসা যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তার মোকাবিলা করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, তার একটা রূপরেখা তিনি তুলে ধরলেন৷

লুফটহানসার প্রাণকেন্দ্র ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দরছবি: AP

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার সূচনাপর্বে জার্মানিতে বিমান চলাচল কতটা বড় ধাক্কা খেয়েছিল, তার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘আমাদের আকার বেড়ে গেছে, আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছি – বিশেষ করে যাঁরা ব্যবসা বা কাজের সূত্রে বিমানে করে যাতায়াত করেন, তাঁদের জন্য৷ জার্মানির অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি ক্ষেত্র – অর্থাৎ গাড়ি তৈরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, অর্থনৈতিক মন্দার সময় তাদের প্রতিনিধিরা আচমকা বিমান যাত্রা নাটকীয় মাত্রায় কমিয়ে দিলেন৷ বাকিরা, যাদের সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিমান যাত্রা করতেই হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে বিলাসবহুল ফার্স্ট বা বিজনেস ক্লাসের বদলে সাধারণ মানুষের মত ইকনমি ক্লাসে যাতায়াত করতে বাধ্য করা হল৷ এর ফলে আমাদের গড় আয় হঠাৎ করে কমে গেল৷’’

লুফটহানসা’র শক্তি

শুধু লুফটহানসা নয় – প্রায় সব বিমান সংস্থাকেই এই সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে৷ তবে লুফটহানসা এই সাময়িক সঙ্কটের মুখে পড়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাতিল করে নি৷ রুপরেশ্ট জানালেন, অতীতের তুলনায় বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের সংখ্যা হয়তো আপাতত কমে গেছে, কিন্তু যাঁরা দূরপাল্লার সফর করবেন, তাঁরা আবার বিজনেস ক্লাসেই ফিরে আসবেন৷ ২-৩ ঘন্টার ফ্লাইটে হয়ত বিজনেস ক্লাসে চড়ার তেমন চাহিদা থাকবে না৷ রুপরেশ্টের মতে, লুফটহানসার আসল শক্তি হল বিশ্বব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক৷ তিনি বললেন, ‘‘আমাদের মূল পারদর্শিতা হচ্ছে ইউরোপের মানুষের সামনে এমন একটা সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তারা ফ্রাঙ্কফুর্টের মাধ্যমে সহজেই কোন আন্তর্জাতিক গন্তব্য বেছে নিতে পারেন৷ এশিয়া ও উত্তর অ্যাটলান্টিক এলাকা ছাড়া আফ্রিকার গুরুত্বও দিনে দিনে বেড়ে চলেছে৷’’

যাত্রীদের সুবিধা

শুধু ইউরোপের যাত্রী নয়, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে যাঁরা ইউরোপে আসছেন, তাঁদের জন্যও লুফটহানসার বিশাল নেটওয়ার্ক অত্যন্ত আকর্ষণীয়৷ কলকাতা থেকে যদি কেউ পোল্যান্ডের গেডানস্ক শহরে যেতে চান, তাকে শুধু ফ্রাঙ্কফুর্টে এক বার বিমান বদল করতে হবে৷ রুপরেশ্ট এই নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানালেন, ‘‘এশিয়া থেকে কোন যাত্রী এখানে এলে, তাঁর চূড়ান্ত গন্তব্য সাধারণত ফ্রাঙ্কফুর্ট হয় না – তিনি ইউরোপের অন্য কোন শহরে যেতে চান৷ ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে তিনি ইউরোপের প্রায় ১০০টি শহরে যথেষ্ট দ্রুত গতিতে পৌঁছতে পারেন৷ লন্ডনের মত শহরের উদ্দেশ্যে দিনে লুফটহানসার ১৫টি ফ্লাইট রয়েছে৷’’

ফ্রাঙ্কফুর্ট লুফটহানসার বিশাল নেটওয়ার্কের প্রাণকেন্দ্রছবি: AP

এত বিশাল নেটওয়ার্ক চালু রাখতে হলে যে কোন বিমান সংস্থাকেই নিজেদের বিমানগুলিকে অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে ব্যবহার করতে হয়, যাতে সেগুলিকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানো যায়৷ রুপরেশ্ট বললেন, ‘‘আন্তর্জাতিক রুটের ৭০টি এবং ইউরোপের রুটের ১০০টি বিমানের মূল ঘাঁটি ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত৷ এভাবে আমরা পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি৷ অর্থাৎ প্রত্যেকটি বিমান শেষ পর্যন্ত ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিরে আসে৷’’

যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ

আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে সময় একটা বড় বিষয়৷ যাত্রীরা অযথা বিলম্ব পছন্দ করেন না৷ তাঁরা ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে চান৷ অথবা তাঁদের যদি মাঝপথে বিমান বদলাতে হয়, সেক্ষেত্রেও সময় অনুযায়ী চলা অত্যন্ত জরুরি৷ তা না হলে পরের বিমান তাদের ছেড়ে উড়ে যাবে৷ রুপরেশ্ট এক্ষেত্রে লুফটহানসার সাফল্যের রহস্য সম্পর্কে বললেন, ‘‘বিমানগুলি শেষ পর্যন্ত ফ্রাঙ্কফুর্টে ফিরে আসে – ফলে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয় নিয়ে ভাবতে হয় না৷ এভাবে জানা যায়, কোন বিমান যে কোন মুহূর্তে ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে৷ এর ফলে আমরা যাত্রীদের প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, যে তাঁরা ঠিক সময়ে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছবেন৷ এক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য৷’’

টিকে থাকার রহস্য

অর্থনৈতিক মন্দা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, যে বাজারের পরিস্থিতি কত তাড়াতাড়ি বদলে যেতে পারে৷ ফলে কোন বিমান সংস্থার পক্ষে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে, ব্যবস্থাপনার উন্নত কাঠামো গড়ে তুলে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকা সম্ভব নয় – পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের অনেক কিছুই বদলাতে হয়৷ এক্ষেত্রে লুফটহানসার মূলমন্ত্র সম্পর্কে রুপরেশ্ট বললেন, ‘‘উচ্চ মান, বিশ্বাসযোগ্যতা, উদ্ভাবনী শক্তি – এসব বজায় রাখতে আমাদের সর্বদা পরিবর্তনের এক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়, নতুন কিছু করে দেখাতে হয়৷ তাছাড়া বাজারে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা বজায় রাখার উচ্চাভিলাষও অত্যন্ত জরুরি বৈকি৷ প্রতিযোগিতার বাজারে বাকিদের থেকে স্বতন্ত্র থাকতে হলে এই ধরনের মনোভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷’’

মন্দা কোন না কোন সময়ে পুরোপুরি কেটে যাবে৷ যেসব শিল্প-বাণিজ্য সংস্থা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার ভিত্তিতে বাজারে সক্রিয় রয়েছে, তাদের মধ্যে বেশীরভাগই সাময়িক ধাক্কা সামলে উঠে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবে৷ সঙ্কট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তারা হয়ত আগামী সঙ্কটের জন্য নিজেদের আরও ভালভাবে প্রস্তুত করে তুলতে পারবে৷ জার্মানির লুফটহানসা বিমান সংস্থা তাদের মধ্যে অন্যতম৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ