1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্দির-মসজিদ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৪ নভেম্বর ২০১৯

বিচিত্র দেশ ভারত! বাবরি মসজিদের পক্ষে ক্ষুরধার সওয়াল করেছেন হিন্দু আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান৷ আর মসজিদের নিচে প্রাচীন মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে রিপোর্ট তৈরি করেছেন মুসলিম পুরাতত্ত্ব আধিকারিক কারিঙ্গামান্নু কুঝিয়ুল মুহাম্মদ৷

১৯৯০ সালের ২৯ অক্টোবর তোলা ছবিতে বাবরি মসজিদছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Walton

স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে অন্যতম বিতর্কিত বিষয় ছিল অযোধ্যা জমি মামলা৷ ১৩৪ বছরের পুরোনো মামলা৷ একটানা মাসাধিক কাল শুনানি করে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায় দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারকের সাংবিধানিক বেঞ্চ৷ অযোধ্যায় যে রাম মন্দির হবে, তা নিয়ে কারও মনে কোনও সংশয় নেই৷ পার্শ্ববর্তী কোনও জমিতে মসজিদ হবে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি৷ দেশে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এখনও পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ৷ কিন্তু, ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে বৈকি৷ মুসলমান সম্প্রদায়ের একাংশের মত, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে চূড়ান্ত রায় মেনে নিতে হলেও কোথাও মনের কোণে আশঙ্কার বুদবুদ রয়ে গেছে৷ এরমধ্যেও অন্যরকম কিছু মানুষ আছেন৷ যাঁরা নজির গড়ছেন৷

রাম মন্দির ও বাবরি মসজিদ নিয়ে পাঁচশো বছরের পুরোনো বিতর্কে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ১৩৪ বছর আগে৷ গত ৯ নভেম্বর তার অবসান ঘটিয়েছে ভারতের সর্বোচচ আদালত৷ পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, বিতর্কি জমিটি হিন্দুদের৷ অতএব সেখানে রাম মন্দির তৈরি হবে৷ মুসলমানদেরও  বঞ্চিত করেনি সর্বোচ্চ আদালত৷ রাম মন্দিরের বিতর্কিত জমিটি ২.৭৭ একর৷ মসজিদ তৈরির জন্য মুসলিম সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ডকে বিকল্প পাঁচ একর জমি দিতে বলা হয়েছে সরকারকে৷ মামলার অন্যতম পক্ষ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড আদালতের রায় মেনে নিয়েছে৷ আবার অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে চলেছে৷

উভয় সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট: সুজিত রায়

This browser does not support the audio element.

'৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অনেক আগেই ভয়াবহ কিছু ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করে অযোধ্যা থেকে প্রতিবেদন লিখেছিলেন সুজিত রায়৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, ‘‘অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে যে রাম মন্দির হচ্ছেই, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই৷ এখন পরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে হিন্দুদেরই৷ কারণ তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷ যদিও উভয় সম্প্রদায়কে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছে সুপ্রিম কোর্ট৷ তা সত্ত্বেও পাঁচ একর জমি আদৌ মুসলিমরা নেবেন কিনা, নিলেও সেখানে মসজিদ হবে নাকি স্কুল, কলেজ বা হাসপাতাল হবে, তা স্পষ্ট নয়৷ ফলে সরকারি ভাবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময় আসেনি৷’’

অযোধ্যা মামলার জেরে ১৯৭৬ সাল থেকে বাবরি মসজিদ চত্ত্বরে খনন শুরু করেছিল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া৷ আগে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক বি বি লালের অধীনে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য স্নাতক মুহাম্মদ৷ পরে মুহাম্মদই ধ্বংস হওয়া বাবরি মসজিদ চত্বরে খুঁজে পেয়েছিলেন ‘মন্দির প্রণালী', ‘মগর প্রণালী'ইত্যাদির মতো কিছু চিহ্ন৷ এখন সুপ্রিম কোর্ট হিন্দু মন্দির নির্মাণের পক্ষে যে রায় দিয়েছে তার ভিত্তি লুকিয়ে রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার এক রিপোর্টে৷ যে রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন কেরলের কালিকটের বাসিন্দা এআসআই-এর আঞ্চলিক অধিকর্তা কে কে মুহাম্মদ৷

ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ‘‘বহু পুরনো অ-মুসলিম কোনও কাঠামোর উপর তৈরি হয়েছিল বাবরি মসজিদ৷''ওদিকে, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী হিসেবে আগাগোড়া বাবরি মসজিদের জমির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করে এসেছেন দুঁদে আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান৷ শেষ পর্যন্ত তিনি না জিতলেও হিন্দু হয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে মসজিদের দাবিতে তাঁর এই লড়াইয়ে কুর্ণিশ জানাচ্ছে আম জনতা৷

যদিও সুপ্রিম-রায় নিয়ে অসন্তোষ শোনা যাচ্ছে অনেকের গলায়৷ কেউ কেউ রায়ের নানা অংশের চুলচেরা বিশ্লেষণে বহু খামতি খুঁজে পাচ্ছেন৷

সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেওয়া মানেই সন্তুষ্টি নয়: মামুদ হোসেন

This browser does not support the audio element.

পশ্চিমবঙ্গের বনমালীচট্টা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মামুদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে নেওয়া মানেই সন্তুষ্টি নয়৷ বিতর্ক ছিল উভয় পক্ষের অধিকার নিয়ে৷ আদালত দু-পক্ষের অধিকার নিশ্চিত করেছে দুটি ভিন্ন স্থানে৷ রায় শোনার পর মুসলিমরা নীরব৷ এই নীরবতা এক অজানা আতঙ্কের কারণে৷ কেউ ভাবছেন, এরপর অন্য কোনও ধর্মস্থান বা মসজিদ জবরদখল করে ভেঙে দিয়ে মন্দির গড়া হবে কিনা৷’’ প্রশ্ন উঠেছে মন্দির নির্মাণে সরকারের এগিয়ে সে ট্রাস্ট গঠনের উদ্যোগ নিয়ে৷ ধর্মনিরপেক্ষ দেশে বিশেষ কোনও ধর্মের উপাসনাগৃহ নির্মাণ করা সরকারের কাজ নয়৷ কিন্তু, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর একদিকে যেমন রাম মন্দির নির্মাণে ট্রাস্ট গঠন করতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, তেমনই মসজিদ নির্মাণে পাঁচ একর জমি দেওয়ার তোড়জোড় করা হচ্ছে৷

মুসলমান প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘‘ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোনও সরকার সরাসরি মন্দির, মসজিদ নির্মাণে অংশ না নেওয়াই কাম্য৷ কিন্তু, ভারত সরকার মন্দির নির্মাণে ট্রাস্ট গড়ছে৷ মসজিদ নির্মাণে জমি দিতে চাইছে৷ সরকারের উচিত এসব থেকে দূরে থাকা৷ তাছাড়া মসজিদের জন্য সরকার সরযূ নদীর ওপারে জমি দিতে চাইছে৷ কিন্তু, অধিগৃহীত ৬৭ একর জমির মধ্যেই পাঁচ  একর জমি দেওয়া হোক৷’’ তবে, এত সত্ত্বেও বাবরি মসজিদ এবং রাম মন্দিরের দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের সমাপ্তি পর্বে পরস্পরের প্রতি সদ্ভাবনা বজায় রাখার আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন উভয় ধর্মের মানুষ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ