‘মব সন্ত্রাস' ও বিএনপির নোটিশের বিষয়ে যা বললেন ফজলুর রহমান
২৫ আগস্ট ২০২৫
দেশের স্বাধীনতার জন্য ৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করার কথা উল্লেখ করে দেশবাসীর কাছে মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান জানতে চেয়েছেন, এই দেশে (বাংলাদেশ) তার বেঁচে থাকার অধিকার আছে কিনা।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP
বিজ্ঞাপন
মব সৃষ্টি করে তার ওপর হামলা চলতে পারে কি না। তিনি বলেন, এগুলোর উত্তর যদি ‘না' হয়, তাহলে এসবের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি৷
ফজলুর রহমান বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো জানায়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য' দেওয়ার অভিযোগে গতকাল রোববার তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। এরপর মধ্যরাত থেকে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফজলুর রহমানের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন একদল ব্যক্তি।
এ পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলুর রহমান আজ সোমবার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। নিজের ও স্ত্রী–সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘হে বাংলাদেশের মানুষ, আমি তো আজ থেকে ৫৪ বছর আগে আপনাদের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। আজকে যে সন্তানেরা আমার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়, তোমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করার জন্য আমি যুদ্ধ করেছিলাম। তোমাদের কাছ থেকে কি অপমৃত্যুটা আমার কাম্য?''
ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘যদি আমার কোনো কথায় তোমরা মনে করো, আমি দেশের বিরুদ্ধে কথা বলছি বা তোমাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলছি, আমার বিরুদ্ধে মামলা করো, আমাকে গ্রেপ্তার করো, আমাকে শাস্তি দাও। কিন্তু আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বাসা পর্যন্ত মব সৃষ্টি করো গিয়া, যেটা গত এক বছর যাবৎ বাংলাদেশে (চলছে), এই পৃথিবীতে এবং বাংলাদেশে সবচেয়ে কুখ্যাত নাম মব, সেই মব জাস্টিস আমার ওপর চলতে পারে কিনা এবং চলবে কিনা, সেটা আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করতে চাই।''
এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে অবস্থিত ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ফজলুর রহমান। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও ছেলেও উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।…আমি একজন মানুষ। আমার অধিকার আছে বেঁচে থাকার।''
বিএনপির চার দশক
৪৬ বছরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত আছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷ এত বছরে কী ছিল দলটির পথচলা?
ছবি: Getty Images/Keystone
প্রেক্ষাপট
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হন৷ এরপর প্রায় তিন বছর বাংলাদেশে ছিল অনির্বাচিত সরকার৷ সে সময় দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান৷ পরে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে রাজনৈতিক দল গঠন করেন৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিষ্ঠা
বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছিল৷ পরে তা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি৷ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোরাঁয় আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করে দলের যাত্রা করেন জিয়াউর রহমান৷
ছবি: imago/United Archives International
নির্বাচন ও মৃত্যু
জিয়া রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে বিএনপি ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে৷ তখন মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জেতে৷ নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেবার মাত্র দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন৷
ছবি: Getty Images/Keystone
খালেদার রাজনীতিতে আসা
জিয়ার মৃত্যুর পর নেতাকর্মীদের আহ্ববানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন৷ ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন৷ ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন৷ ১৯৮৪ সালের ১০মে পার্টির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷
ছবি: AP
এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও খালেদা জিয়া
জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন৷ তবে তাঁকে হটিয়ে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন৷ বিএনপি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই আন্দোলনে বেগম জিয়া ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দু’জনই ছিলেন, যদিও আপোষহীনতার কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
সরকার গঠন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ এ নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রশ্নবিদ্ধ আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে৷ কিন্তু আওয়ামী লীগসহ বিরোধী দলগুলোর প্রতিবাদে মাত্র ৪৫ দিন টিকতে পারে সেই সরকার৷
ছবি: AP
শেষবার সরকারে
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে জিতে আবারো সরকার গঠন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট৷এই সরকারই ছিল বিএনপির শেষ সরকার৷ এই সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর নানা বিতর্ক ও ঘটনার প্রেক্ষাপটে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল প্রায় দুই বছর৷ সে সময় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা উভয়কেই জেলে যেতেও হয়েছিল৷ পরে অবশ্য দু’জনই ছাড়া পান৷
ছবি: Getty Images
জোটের রাজনীতি
বিএনপি এ পর্যন্ত বারবার জোট করেছে৷ প্রথম সাতদলীয় জোট করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে৷ এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ গড়ে চারদলীয় জোট৷ পরবর্তীতে জোটে দলের সংখ্যা বাড়তে থাকে৷ সেটি ঠেকে বিশ দলীয় জোটে৷
ছবি: bdnews24.com
রাজনৈতিক ভুল ও কারাগারে খালেদা
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পর আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট৷ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়াকে অনেকেই রাজনৈতিক ভুল বলে মনে করেন৷ তাঁর বিরুদ্ধে থাকা নানা মামলার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
বিদেশে তারেক রহমান
মানি লন্ডারিংসহ নানা মামলার কারণে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন জিয়াপুত্র ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন কিনা= এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘জিডি করবো না, মাইরা ফেললেও… জিডি–টিডি কিছুই করবো না।''
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আমার প্রধান কাজ হলো, রাজনীতি করা। আর নিজের জীবন–জীবিকা নির্বাহের জন্য আমি ওকালিত করি।…গতকালকে একটা ঘটনা ঘটেছে। আমি পাঁচটার দিকে শুনতে পেলাম যে, আমাকে দল একটা শোকজ নোটিশ দিয়েছে আমার দল জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। রাত নয়টায় দলের একটা কাগজও পেলাম।…দেখলাম, আমার নামে দল কিছু কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তার জন্য শোকজ নোটিশ করেছে, উত্তর দেওয়ার জন্য। এটা খুবই একটা স্বাভাবিক ঘটনা। একটা রাজনৈতিক দলের একজন কর্মীর প্রতি তাঁর দল যদি মনে করে, কর্মীর বোধ হয় কিছু ক্রটি–বিচ্যুতি আছে, তাকে শোকজ করতেই পারে। আমাকেও করেছে। নির্দিষ্টভাবেই আমি বলতে চাই, আমি তার উত্তর দলকে দেবো। দল যা জানতে চায়, তা–ও আমি বলবো। তারপরে দল আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেবে। এখন পর্যন্ত কিন্তু আমি দলের মধ্যেই আছি, এখন পর্যন্ত আমি দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা।''
শোকজের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো লিঙ্ক (যোগসূত্র) খুঁজে পাচ্ছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘শোকজের সঙ্গে লিঙ্ক খুঁজে পাচ্ছি, এটি এখনো বলবো না। তবে তারা আগে থেকে অনেক মানুষের…আমি তো ফজলুর রহমান, সামান্য মানুষ; কত মহান মানুষের গালে তারা জুতা মারছে।…আমার কথা হলো জুতা মারে, কথা বলে, সেটা তো বলবেই। তাদের ব্যাপারে মানুষ বিচার করবে। কিন্তু আমার বাসার সামনে গিয়া আমাকে হত্যা করার জন্য বা আমার মৌলিক অধিকারকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য; কথাটা জাতির সামনে জানিয়ে গেলাম। তারা আমাকে জুতা মারবে না মিছিল করবে- এটা করুক গিয়ে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলে থাকলে তারা গিয়া মামলা করুক আমার বিরুদ্ধে।''
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আমার জীবনের নিরাপত্তার ব্যাপার বলে গেলাম। আমার এ দেশে বাঁচার অধিকার আছে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।…এখন আমার বাসার সামনে গিয়ে যেগুলো হচ্ছে, আপনাদের মাধ্যমে জাতিকে, দেশকে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়ে গেলাম।''
‘মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে বলেছি, বলবো'
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘ছেলেরা বা ছাত্ররা যদি মনে করে, অন্য দলের লোকেরা যদি মনে করে, আমি জামায়াত–শিবির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী লোকজনের বিরুদ্ধে আমি কথা বলেছি, এটা আমি বলবো। এতে যদি কোনো ধরনের আমার কথার মধ্যে কারো প্রতি অসম্মান করে থাকি, আঘাত করে থাকি, তারা মনে করে, তাহলে তারা রাজনৈতিকভাবে এটার জবাব দেবে৷ আমি তাদের জবাব দেবো। এটার জন্য তো পরস্পরকে হত্যা করার ব্যাপার নাই। বাসার সামনে মব করার তো দরকার নাই।''
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আজকে (সোমবার) হঠাৎ করে যেটি দুর্ভাগ্যজনক, আমার বাসার সামনে কিছু মিছিলের শব্দ পাইলাম। সেই শব্দগুলো বলাটাও আমার কাছে মনে হইলো, কিছু ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে আমার সন্তানের সমান, এরা কারা, আমি চিনিও না। এরা স্লোগান আমার নামে দিলো, ফজু পাগলাকে গ্রপ্তার করো...ইত্যাদি ইত্যাদি। ফজু পাগলা মানে আমি বাংলাদেশে এখন ফজু পাগলা হয়ে গেছি। এই নামটা আমাকে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতে ইসলামী—আমি নাকি ফজু পাগলা। প্রথম এই কথাটা বলেছে, মুফতি আমির হামজা নামে একজন লোক।…এই ছেলেপেলেরাও আমার নামে ফজু পাগলা স্লোগান দিয়েছে, আমি বাংলাদেশের একজন পাগলা। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তারা আমাকে হত্যা করতে চায়। আমাকে মারতে চায়, তারা আমার বাসার সামনে যেভাবে গিয়ে মব সৃষ্টি করেছে... আমি দেখছি, গত এক বছর যাবৎ ৫ই আগস্টের পর থেকে আমাদের কিছু সন্তান মব সৃষ্টি করে তাদের দাবি-দাওয়া বলেন, আর যা–ই বলেন, আদায় করতে চায়।…কিন্তু আমার মতো একজন সিনিয়র মানুষ, যে দেশটার জন্য যুদ্ধ করেছি, আমি যুদ্ধ না করলে বা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ না করলে এই সন্তানেরা তো বাংলাদেশের সন্তান হইতো না, এরা হইতো পাকিস্তানের সন্তান। আমাদেরকে হত্যা করা বা আমাদের নামে বিশ্রী স্লোগান দেওয়া বা আমি একটা ভাড়া বাসায় (সেগুনবাগিচাস্থ কনকর্ড টাওয়ার) থাকি, এটা নিজের কোনো বাসা না।''
‘আমাদের নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়েছে’
05:44
This browser does not support the video element.
ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘আমি মনে করতাছি, আমি যে ভাড়া বাসায় আছি, যেভাবে গিয়ে আমার সঙ্গে মব সৃষ্টি করা হইছে, বাসায় আমাকে থাকতে দেবে কি না...মালিক বলতে পারে, ভাই, আপনাকে বাসা ভাড়া দিলে আমার বাড়ি-ঘর পুইড়া ফেলবে, যেইটা করতাছে মব। আমি আমার জীবন নিয়ে চিন্তিত যতটা, তার চেয়ে আমার স্ত্রী দেখেন বসে আছে। আমার সন্তানেরাও ওখানে থাকে। দুই সন্তান আমার সাথে থাকে। তাদের তো কোনো অপরাধ নাই। একজনের বাসা পর্যন্ত গিয়া মব সৃষ্টি করা, যেটি বাংলাদেশে হচ্ছে, সেটি ন্যায়ভিত্তিক মনে করেন কি না?''
‘অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি লজ্জাজনক'
বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান আরো বলেন, ‘‘আমি আমার জীবন, আমি কোনো ভয় করি না। মৃত্যুকে আমি কোনো দিন ভয় করি না। কিন্তু অপমৃত্যু আমার কাছে সবচেয়ে বেশি লজ্জাজনক। আমার কাছে মনে হচ্ছে, দেশ–বিদেশ থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির যারা ইউটিউবার এবং যারা তাদের পক্ষে সাংবাদিকতা করে, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির পক্ষে দেশ–বিদেশে থেকে বেশ কয়েক দিন যাবৎ প্রথম বলছে, ফজলুর রহমানকে মব জাস্টিস করো, তার ওপর মব জাস্টিস এখন প্রযোজ্য।…ফান্স থেকে দুজন সাংবাদিক বলেছে, তাকে হত্যা করাই দরকার।…জামায়াতের একজন ইউটিউবার বলেছে, ফজলু পাগলাকে জবাই করেই হত্যা করতে হবে। এই যে অবস্থা, এই অবস্থাটা জানানোর জন্য আমি আপনাদের কাছে এসেছি। তার রেজাল্ট দেখছি, আমার বাড়ির সামনে সাত–আট বা নয়জন ছেলে-মেয়ে, তারা কারা, কোন দলের; আমি চিনি না।''
বিজ্ঞাপন
‘আমার বাঁচার অধিকার এ দেশে আছে'
‘‘এই যে অবস্থা, এই অবস্থাতে আমি তো বাংলাদেশের একজন নাগরিক; আমার তো বাঁচার অধিকার আছে'', উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘প্রথমে বাংলাদেশের জনগণের কাছে হাত জোড় করে আহ্বান জানাবো, আমি বাংলাদেশের ফজলুর রহমান। আমি হাত জোড় করে জানাবো, আমি একজন মানুষ। আমি হাত জোড় করে আপনাদের কাছে, জনগণের কাছে বলতে চাই, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার বাঁচার অধিকার এ দেশে আছে, এটা আমি মনে করি। এটা আপনারা মনে করেন কিনা? কিন্তু আপনারা কি মনে করেন, এভাবে আমাকে হত্যা করলে পরে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের যে অবস্থা, সে অবস্থাটা কি এ রকমই থাকবে? আমাকে হত্যা করা উচিত বলেই কি আপনারা মনে করেন? আর আমার দলকে আমি বলবো এই কথাটা- দল আমাকে একটা শোকজ করতেই পারে, আমি উত্তর দেবো। এটা দলের সঙ্গে আমার ব্যাপার, তখন দেখা যাবে। কিন্তু আমাকে হত্যা করার জন্য যারা আসলো, আমি তাদেরকে চিনি না, জানি না। তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নাই। তাদের সঙ্গে আমার শত্রুতাও নাই। আমার কোনো মিত্রতাও নাই। কিন্তু এই যে মব একটা সিচুয়েশন সৃষ্টি হইয়া আমাকে যে হত্যা করার জন্য বা আমার ছেলে-মেয়েদের সর্বনাশ করার জন্য, আমার পরিবারকে সর্বনাশ করার জন্য, আমি একটা ভাড়া বাসায় থাকি, এর মধ্য দিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে যে, এই দেশে আমার বাঁচার অধিকার আছে কি নাই, এটা জনগণকে জানানো উচিত।''
বিজয়ের পতাকা যেভাবে পেলো বাংলাদেশ
লাল-সবুজের এই পতাকা শুধু দেশমাতৃকার পরিচয় নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ও চেতনা৷ ছবিতে তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার গৌরবোজ্জ্বল পথ পরিক্রমা৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
প্রথম জাতীয় পতাকা
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের প্রতীক গাঢ় সবুজ রঙ, তার মাঝে বিপ্লবের প্রতীক লাল সূর্য৷ সূর্যের মাঝখানে সোনালি বাংলাদেশের প্রতীক সোনালি মানচিত্র– বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকার নকশা ছিল এমন৷ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তা সাত কোটি মানুষকে সাহস জুগিয়েছে৷ ছবি: মুক্তির গান৷
ছবি: AudioVision
পতাকার জন্মকথা
১৯৭০ সালের ৭জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে আসবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) একটি কক্ষে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ সংগঠনের কয়েকজন কর্মী এবং ছাত্রনেতারা পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন৷ ঢাকার নিউমার্কেট থেকে সবুজ কাপড় কিনে তাতে লাল একটি বৃত্ত সেলাই করে আনা হয়৷ লাল বৃত্তের মাঝে মানচিত্র আঁকেন শিবনারায়ণ দাস৷
ছবি: AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন
১৯৭১ সালের ২মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-র তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব৷ তার সঙ্গে পতাকাটির নকশা চূড়ান্তে আরো ছিলেন ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ, কামরুল আলম খান (খসরু) প্রমুখ৷
ছবি: Rajib Paul
বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে পতাকা
বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে নিজ বাসভবনে প্রথমবার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ থেকে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এই পতাকা ব্যবহৃত হয়৷ ছবি: ১৯৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় বিধ্বস্ত শহিদ মিনারের সামনে বাংলাদেশের তখনকার পতাকা হাতে জনতা৷
ছবি: Journey/A. Hoque
পরিমার্জিত পতাকা
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ ১৯৭২ সালে চিত্রকর কামরুল হাসানকে পতাকার মাঝের মানচিত্র বাদ দিয়ে মাপ ও রঙসহ নতুন নকশা এবং এর ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেন বঙ্গবন্ধু৷ সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝে লাল বৃত্ত রেখে পতাকা পরিমার্জন করেন কামরুল হাসান৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
মানচিত্র সরিয়ে লাল-সবুজ
১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি জাতীয় পতাকা থেকে সোনালি মানচিত্র সরিয়ে ফেলা হয়৷ এরপর ১৭ জানুয়ারি এই নতুন রূপ সরকারিভাবে গৃহীত হয়৷ সবুজ রং বাংলার প্রকৃতি ও চিরতারুণ্যের প্রতীক৷ বৃত্তের লাল রঙ উদীয়মান সূর্য এবং মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতীক৷
ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS
জাতীয় পতাকার মাপ
১৯৭২ সালে জাতীয় পতাকা বিধিমালা জারি করা হয়৷ তিন নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও প্রস্থ হবে ছয় ফুট৷ লাল বৃত্ত পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ ব্যাসার্ধ, অর্থাৎ দুই ফুট৷ পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে চার ফুট ওপরে প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদবিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্র৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকার রং
বিধি অনুযায়ী, গাঢ় সবুজ রঙের মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত থাকে৷ পতাকার সবুজ পটভূমি প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট গ্রিন এইচ-২ আর এস ৫০ পার্টস৷ লাল বৃত্তাকার অংশটি প্রতি হাজারে প্রোসিয়ন ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ এইচ-২ আর এস ৬০ পার্টস৷
ছবি: Rajib Paul
মানব পতাকার বিশ্বরেকর্ড
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ঢাকার শেরেবাংলা নগরের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭ হাজার ১১৭ জন মানুষ ‘মানব পতাকা’ গঠন করে বিশ্বরেকর্ড গড়ে৷ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই উদ্যোগ৷
ছবি: Reuters
যানবাহনে পতাকা
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মোটরযান, নৌযান এবং উড়োজাহাজে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা যায়৷ এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী বা একই পদমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ, চিফ হুইপ, জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কূটনৈতিক/কনস্যুলার/ মিশনের প্রধান ভ্রমণকালীন মোটরযান ও নৌযানে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করতে পারেন৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকা উত্তোলন দিবস
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, চিফ হুইপ ও পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসভবন, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়৷ ঐতিহাসিক দিবস, ঈদে মিলাদুন্নবী এবং বিশেষ দিবসে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়৷
ছবি: Rajib Paul
পতাকা অর্ধনমিত রাখা
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপিত বিশেষ দিবসে পতাকা অর্ধনমিত থাকে৷ এক্ষেত্রে খুঁটির ওপর থেকে পতাকার প্রস্থের সমান নীচে রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
বিদেশে প্রথম পতাকা উত্তোলন
১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতের কলকাতায় তৎকালীন পাকিস্তান উপ-হাইকমিশনে কর্মরত উপ-হাইকমিশনার এম হোসেন আলী প্রথমবার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ বিদেশের মাটিতে সেটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন৷ আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ ১০*৬ ইঞ্চি৷ ছবি: ২০১১ সালে স্বাধীনতা দিবসে বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পতাকা উত্তোলন৷
ছবি: Botschaft von Bangladesch, Berlin
জাতীয় দিবসে পতাকা সেলাইয়ের ধুম
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে জাতীয় পতাকার চাহিদা বাড়ে৷ ঢাকার মাতুয়াইলে বিভিন্ন কারখানায় দর্জিরা লাল-সবুজ কাপড় দিয়ে বুনতে থাকেন বিভিন্ন আকারের পতাকা৷ তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি৷
ছবি: Rajib Paul
মাস্কে পতাকা
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বানানো মাস্কেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে লাল-সবুজের আবেগ৷ স্বাধীনতার মাসে চোখে পড়েছে এমন দৃশ্য৷ এছাড়া বিভিন্ন বিপণি বিতানে ও রাস্তার ধারে ছোট-বড় সবার পোশাকে লাল-সবুজ রঙের প্রভাব দেখা যায়৷
ছবি: Rajib Paul
লাল-সবুজের বাংলাদেশ
স্বাধীনতা ও বিজয়ের মাসে পরম মমতায় জাতীয় পতাকা ওড়ান অনেকে৷ মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় লাল সবুজের বাংলাদেশ হয়ে থাক অপরূপ৷
ছবি: Rajib Paul
16 ছবি1 | 16
‘আমি একা একা দেশে চলতে পারবো না?'
সংবাদ সম্মেলনে ফজলুর রহমান আরো বলেন, ‘‘আমি বাংলাদেশের জনগণকে আবারও প্রশ্ন করতে চাই, এ দেশে আমার বাঁচার অধিকার আছে কি না? আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমার স্ত্রী যোগোযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ এসেছে। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। আমি শুনেছি আর্মিও এসেছে। তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু পুলিশ আর আর্মি আসাই কি আমার মতো একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আমার জন্য খুব সম্মানজনক ব্যাপার? যারা আমাকে বাঁচাইতে চাবে যে পুলিশ–আর্মি গার্ড করবে, আমি একা একা দেশে চলতে পারবো না?''
ফজলুর রহমান বলেন, ‘‘সারা জাতিকে জানাতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ, আপনারা জেনে রাখুন, আমার জীবন বড় শঙ্কায় আছে। আমি মুক্তিযুদ্ধ ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি।…আমি একজন মানুষ। আমার অধিকার আছে বেঁচে থাকার।''