নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ''নিচু পর্যায়ের ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি আদর্শ আচরণবিধি ভেঙেছেন। তাই তিনি মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না।''
গত ১৬ মে তৃণমূল কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানায়। ১৫ মে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় হলদিয়ার এক জনসভায় বলেছিলেন, ''মমতা ব্যানার্জি তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার রেট ১০ লাখ টাকা কেন? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখে মেক আপ করাও বলে? মমতা ব্যানার্জি মহিলা তো? আমার মনে প্রশ্ন জাগে মাঝেমধ্যে।''
নির্বাচন কমিশন তার নির্দেশে বলেছে, তারা অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওই আচরণের নিন্দা করছে, তিনি ২১ মে বিকেল পাঁচটা থেকে ২২ মে বিকেল পর্যন্ত প্রচার করতে পারবেন না। কমিশন তাকে কড়াভাবে জানাচ্ছে, তিনি যেন ভবিষ্যতে সতর্ক থাকেন এবং আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলেন।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় নিয়ে কে কী বললেন?
বিচারপতির পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার সিদ্ধান্তের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw
বিজেপি-তে যোগ দিলেন
তার কার্যকালের মেয়াদ শেষ হতে আরো পাঁচমাস বাকি ছিল। সম্ভবত লোকসভা নির্বাচন আসন্ন বলে সেই কার্যকাল পুরো না করে ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। বহস্পতিবার তিনি বিজেপি-র সদস্যপদ নিয়েছেন। তাকে বিজেপি-তে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
ছবি: Satyajit Shaw
কোনো কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন না
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে স্বাগত জানাতে বিজেপি-র কোনো কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন না। একসময় মিডিয়ায় জল্পনা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর সামনে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দেবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দূরস্থান, তার যোগদানে রাজ্য নেতাদের বাইরে কোনো কেন্দ্রীয় নেতাকে দেখা যায়নি।
ছবি: Satyajit Shaw
অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''যে কোনো বিচারপতি ইস্তফা দিয়ে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারেন। এটা বেআইনি নয়। তবে এটাও সত্য, বিচারপতির একটি অতীত থাকে। তার দেয়া রায় বিচারপতির ভাবমূর্তি তৈরি করে। রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে, সেই ভাবমূর্তিতে আঘাত লাগে। অভিজিতবাবু বলেছেন, বিজেপি দুর্নীতিমুক্ত, তাই তিনি যোগ দিয়েছেন। আদালতের সাম্প্রতিক কিছু রায় একথাকে মান্যতা দেয় না।''
ছবি: Privat
কী বলছে বিজেপি?
রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, ''পিসি-ভাইপোর দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে অভিজিতবাবু বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। গোটা বাংলা তাকে স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তির জন্য চেনে।''
ছবি: Satyajit Shaw
অধীরের প্রতিক্রিয়া
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, ''বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আগেই জানিয়েছিলেন, বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। রাজনীতিতে কে কী করবেন তা আমরা কী করে বলব? এটুকু বলতে পারি, তিনি ভুল করলেন। তবে বিচারপতি থাকার সময় তিনি যে রায় দিয়েছিলেন তা বাংলার মানুষের মধ্যে উৎসাহ ও আশা জুগিয়েছিল। বিশেষ করে যারা নির্যাতিত তাদের। তিনি তখন নিরপেক্ষভাবে কাজ করার চেষ্টা করেছেন।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
সিপিএমের বক্তব্য
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''যে কোনো মানুষের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার অধিকার আছে। যেভাবে রাজনীতি কলুষিত হচ্ছে, সেখানে পেশাদার মানুষ রাজনীতিতে যোগ দিলে তো ভালোই। চাকরিপ্রার্থী-সহ অনেকের লড়াই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কারণে গতি পাচ্ছিল। আমার একটাই কথা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই যেন ছেড়ে না দেন।''
ছবি: DW/P. Samanta
অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় যা বললেন
তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''তিনি একটা সত্যি কথা বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি বিজেপি-কে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম এবং বিজেপি আমাকে অ্যাপ্রোচ করেছিলা। তার মানে তিনি বলছেন, আমি বিচারপতির আসনে বসে যে রায় দিয়েছি বা আমার এজলাসে যে সমস্ত মামলার শুনানি হয়েছে, সেই সময় বিজপি-র সঙ্গে যোগাযোগে ছিল এবং আমি বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগে ছিলাম।'' বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিকাশরঞ্জনের মন্তব্য, অভিজিতের জবাব
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে তিনি গুরু মানেন। আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন বলেছেন, ''বিজেপি-তে যোগ দেয়ায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো।'' সেটা শুনে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছেন, ''যা হওয়ার আমার হয়েছে। তা নিয়ে বিকাশরঞ্জনকে ভাবতে হবে না।''
ছবি: Srijit Roy
বিকাশরঞ্জনের মন্তব্য, অভিজিতের জবাব
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে তিনি গুরু মানেন। আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন বলেছেন, ''বিজেপি-তে যোগ দেয়ায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হলো।'' সেটা শুনে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্য়ায় বলেছেন, ''যা হওয়ার আমার হয়েছে। তা নিয়ে বিকাশরঞ্জনকে ভাবতে হবে না।''
ছবি: Satyajit Shaw
9 ছবি1 | 9
গত ১৭ মে নির্বাচন কমিশন সাবেক বিচারপতিকে শো কজ করে। তিনি সোমবার তার শোকজের জবাব দেন।
কমিশন জানিয়েছে, ''সাবেক বিচারপতি ও বিজেপি প্রার্থী যা বলেছেন, তা মেয়েদের প্রতি মর্যাদা হানিকর। কোনো মেয়েকেই এই ধরনের কথা বলা যায় না। আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ওই কথাগুলো বলেছেন এক প্রবীণ রাজনৈতিক নেত্রী ও সাংবিধানিক পদে থাকা এক নারীর বিরুদ্ধে। তার শিক্ষা ও কাজের পটভূমি দেখার পর তাকে বেনিফিট অফ ডাউট দেয়া যায় না।''
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, ''সাবেক বিচারপতি বিজেপির ভদ্রলোক-মুখ হতে গেছিলেন। কিন্তু প্রথম নির্বাচনেই তাকে নিন্দার মুখে পড়তে হলো। এটাই বিজেপি-র ভবিতব্য। বিজেপির প্রত্যেকেই একজন শুভেন্দু অধিকারী, মুখ খুললেই শুধু আবর্জনা বের হয়। কারো আগে, কারো পরে।''