দুর্গাপুজোয় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে শাড়ি এবং মিষ্টি উপহার পাঠালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পৌঁছল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। দুর্গা পুজো উপলক্ষে হাসিনা চারটি শাড়ি এবং ১০ কেজি মিষ্টি পাঠিয়েছেন মমতাকে।
নতুন কিছু নয়। প্রতি বছরই শেখ হাসিনা পুজোয় উপহার পাঠান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। এ বছরও পাঠিয়েছেন। চারটি শাড়ি এবং গোপালগঞ্জের বিশেষ ধরনের ১০ কেজি মিষ্টি মমতাকে উপহার পাঠিয়েছেন হাসিনা। কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনারের দফতরে সেই উপহার পৌঁছে গিয়েছে। ডেপুটি হাইকমিশনার মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে লেখা আছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, সোমবারই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সেই উপহার পৌঁছে দেওয়া হবে।
হাসিনার সঙ্গে মমতার সম্পর্ক কেবলমাত্র কূটনৈতিক নয়। প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে মমতাও হাসিনাকে নানা উপহার পাঠান। আগে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও এমনই সম্পর্ক ছিল হাসিনার। প্রতি বছর পদ্মার ইলিশ তিনি পাঠিয়ে দেন মমতা এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কিছু দিন আগেই মৃত্যু হয়েছে প্রণববাবুর। তারপর শোক প্রকাশ করেছিলেন হাসিনা। দিল্লিতে থাকাকালীন প্রণববাবুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতীয়রা যা ভাবছেন
শেখ হাসিনা ভারতে এলেও তিস্তা চুক্তি আপাতত হচ্ছে না৷ তারপরেও তিস্তার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ আশা-আকাঙ্খায় দিন গুনছে বহু মানুষ৷ চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের কয়েকজন সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কী ভাবছেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
সুস্মিতা সর্বাধিকারী, কবি ও সমাজসেবী
তিস্তা নদী ভারতের যে যে রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে জলবণ্টন চুক্তিতে সেই রাজ্যগুলির স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে আন্তর্জাতিক স্তরে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আবশ্যক৷ তা না হলে অন্যান্য জলচুক্তির ক্ষেত্রে ভারত যে শিক্ষা পেয়েছে, এক্ষেত্রেও তা-ই হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অবস্থান সাধুবাদের যোগ্য৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
মলয় হালদার, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা
নদীর গতিপথ যখন প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, তখন কোনো দেশের একক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সহজ হতো না৷ এখন ভাটির দেশকে নির্ভর করতে হয় উজান দেশের মনোভাবের ওপর৷ তিস্তার জল যেমন ভারতের, তেমনি বাংলাদেশেরও৷ শুধু উত্তরবঙ্গের কথা বলে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বকে বলি দেওয়া সমীচীন নয়৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
পাপন মালাকার, বেসরকারি সংস্থার কর্মী
বাংলাদেশের সঙ্গে কোথায় যেন আত্মার টান অনুভব করি৷ আমরা জল অপচয় করব আর প্রতিবেশী দেশের ভাই-বোনেরা জলের অভাবে কষ্ট পাবে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারি না৷ তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
কমলিকা ভট্টাচার্য, চাকুরিজীবী
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী৷ এই ধরনের নদীতে কোনো একটি দেশ বা রাজ্যের একছত্র অধিকার থাকে না৷ সিকিম থেকে গজলডোবা পর্যন্ত তিস্তার ওপর বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চল মরুর চেহারা নিচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে নদী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুখা মরশুমে দুই দেশের মধ্যে সমবন্টনের নীতি গ্রহন করা উটিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
অসীম দাস, সমাজসেবী
নদীর জল আটকে রাখার চেষ্টা, নিজের অধিকারের এক্তিয়ার বলে মনে করা নেহাৎ মুর্খামি৷ ভারত বা বাংলাদেশ উভয়েই কৃষিপ্রধান দেশ৷ কৃষিকাজ না হলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে৷ বাংলাদেশকে তিস্তার জল না দিয়ে ভারত যদি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখে, তাহলে ভবিষ্যতে নেপাল যদি ভারতকে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল দিতে অস্বীকার করে, কী হবে তখন?
ছবি: DW/R. Chakraborty
বনশ্রী কোনার, হোম মেকার
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘ইগো’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এমনটা কখনওই কাম্য নয়৷ দেশ তথা সার্বিক স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
অভিজিৎ চ্যাটার্জি, প্রকাশনী সংস্থার কর্মী
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি হোক বা না হোক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের রাজ্যে রাজনীতি করতেই হবে৷ তাই তাঁকে রাজ্যবাসীর স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করতে হয়৷ নদীর জলে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ না রেখে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে জল দেওয়ার মধ্যে কোনও মহত্ব নেই৷ বরং সবার আগে রাজ্যবাসীর দিকে তাকানো উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
মানবেন্দু সরকার, কলেজ শিক্ষক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আসছেন৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর এটাই উপযুক্ত সময়৷ হাসিনা চাইছেন, নরেন্দ্র মোদী চাইছেন৷ সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীও চাইছেন৷ বেঁকে বসেছেন মমতা ব্যানার্জি৷ এটা সৌহার্দ্যের ছবি নয়৷ ভুল বার্তা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
রাখী বিশ্বাস, কলেজ ছাত্রী
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তাচুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি৷ ফলে তিস্তার জলের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ মমতা ব্যানার্জিকেই ঠিক করতে হবে, উনি রাজনীতি করবেন, নাকি দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াবেন৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
9 ছবি1 | 9
কূটনৈতিকরা অবশ্য মনে করছেন, এ বছর হাসিনার এই উপহার কূটনৈতিক ভাবেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনকে কেন্দ্র করে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের খানিক টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্র সবুজ সংকেত দিলেও মমতার প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ওষুধ, খাবার সহ নানা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাংলাদেশে রপ্তানি করতে বাধা দিচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, করোনা ঠেকাতেই এ কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়েভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে বেশ জলঘোলাও হয়েছিল। বাংলাদেশও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। তিস্তা জলবন্টন নিয়েও দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যা রয়েছে। তারই মধ্যে লকডাউনকালীন উত্তেজনা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছিল। কিন্তু হাসিনা মমতাকে উপহার পাঠিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিতর্ক থাকলেও ব্যক্তিগত স্তরে তাঁদের সম্পর্ক অটুট।
এর আগেও হাসিনা এ কাজ করেছেন। এক সময় বাংলাদেশ ভারতে ইলিশ পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইলিশ উপহার পাঠিয়েছিলেন। বস্তুত, সেই উপহার জটিলতা কাটাতেও খানিক সাহায্য করেছিল।
পশ্চিমবঙ্গে এ বছর দুর্গাপুজো নিয়ে অবশ্য নানা বিতর্ক চলছে। করোনার মধ্যে কেন ঢালাও পুজো করার অনুমতি দিয়েছে সরকার, তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা চলছে। চিকিৎসকদের অনেকেই মনে করছেন, পুজোর পরে রাজ্যে করোনার প্রকোপ লাফিয়ে বাড়বে।