মমতার ‘উপহার’ বিশ্বের বৃহত্তম মন্দির, মোদীর হনুমান ধাম
২২ এপ্রিল ২০২২রাজ্যকে মোদীর উপহার, বিশাল হনুমান মূর্তি। রাজ্যে তৈরি হবে হনুমান ধাম। আর মমতার উপহার, বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির। মায়াপুরে সেই মন্দির তৈরি করছেন শিল্পপতি জিন্দালরা। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তারা সাতশ একর জমি পেয়েছেন বলে খবর। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে সেই মন্দিরের কথা জানিয়েছেন সজ্জন জিন্দাল।
কংগ্রেস ও বাম নেতা থেকে শুরু করে প্রবীণ সাংবাদিকরাও প্রশ্ন তুলেছেন এই মন্দির-মূর্তি নিয়ে। তাদের প্রশ্ন, যে রাজ্যে শিল্প নেই, মানুষের চাকরি নেই, আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা এতটা খারাপ, সেখানে মন্দির-মূর্তি উপহার কেন? তাদের মতে, এটা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, যা মোদী ও মমতা এখন সমানভাবে করছেন।
মায়াপুরে মন্দির
কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সজ্জন জিন্দাল মন্দিরের ঘোষণা করেন। সংবাদ প্রতিদিনের রিপোর্ট বলছে, রাজ্যের তরফেই ৭০০ একর জমি দেওয়া হয়েছে। মন্দির তৈরি হয়ে গিয়েছে। মন্দিরের চূড়া সোনার পাতে মোড়া। উপরের দিকটা আকাশি রঙের।
হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট বলছে, মায়াপুরের এই জমি রাজ্য সরকার দিয়েছে। মায়াপুর ধর্মীয় পর্যটনস্থল হিসাবে গড়ে উঠবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মন্দির এখন অঙ্কোরভাট। মায়াপুর তাকেও ছাড়িয়ে যাবে।
হনুমান ধাম
দিন ছয়েক আগে হনুমান জয়ন্তীর সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী গুজরাটে হনুমান ধামের উদ্বোধন করেন। সেখানে হনুমানজির ১০৮ ফুট উঁচু মূর্তির উদ্বোধন করেন তিনি। মোদী জানিয়েছেন, হিমাচল ও গুজরাটে হনুমান ধাম হয়ে গেছে, এবার হবে পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুতে। এই হনুমান ধামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে ধর্মীয় পর্যটন। তবে পশ্চিমবঙ্গের কোথায় হনুমানের বিশাল মূর্তি বসবে, সেটা তিনি জানাননি।
‘এভাবে সমস্যার সমাধান হবে?’
রাজ্যের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের আমলে আমরা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার দিকে নজর দিয়েছি। শিল্পের দিকে নজর দিয়েছি। মন্দির করে কি মানুষের সমস্যার সমাধান হবে?’’
মান্নান মনে করেন, ‘‘সরকারের মন্দির-মসজিদ করার দরকার নেই। মন্দির-মসজিদ করার প্রয়োজন থাকলে মানুষই করবে। তার মত হলো, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এই ‘ধর্মীয় আফিম’ খাওয়ানো হচ্ছে। ‘‘রাজ্যে শিল্প নেই, চাকরি নেই, আইন-শৃঙ্খলা নেই, তখন তো এসবই করতে হবে।’’ তার মতে, ‘‘মোদী ও মমতা একই রাস্তায় হাঁটছেন।’’
‘রুটি-রুজি, বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারের মধ্যে না গিয়ে মন্দির-মূর্তির রাজনীতি'
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নীলোৎপল বসু ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘‘এটাই হলো দক্ষিণপন্থি প্রবণতা। সারা বিশ্বে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ভারতে তা আরো প্রকট। কারণ, এখানে হিন্দুত্বের মতাদর্শ তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।’’
নীলোৎপলের মতে, ‘‘এখানে মমতা ও মোদী দুজনেই একই পথে চলেছেন।’’ তার আশা, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ নিশ্চিতভাবেই বুঝবেন, তৃণমূল বা বিজেপি একে অন্যের বিকল্প হতে পারে না। তারা মানুষের রুটি-রুজি, বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকারের মধ্যে না গিয়ে মন্দির-মূর্তির রাজনীতি করছেন।’’
নীলোৎপল বিশ্বাস করেন, ‘‘সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এই কথাটা বুঝতে শুরু করে দিয়েছেন।’’
‘হিন্দু ভোট পেতে’
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ‘‘হিন্দু ভোট পেতে এই রাস্তা নিয়েছেন মোদী-মমতা।’’ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ‘‘একসময় মমতা মুসলিম ভোট পাওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছিলেন। গত বিধানসভায় তিনি ঢালাও মুসলিম ভোট পেয়েছেন। এবার তিনি হিন্দু ভোট পাওয়ার জন্য ঝাঁপাচ্ছেন। আর মোদী বা বিজেপি তো হিন্দু ভোটকে সংহত করেই ভোটে জেতে। তাই তারা এই পথে হাঁটছেন।’’
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘শিল্পের জন্য জমি নেই, বাসস্থানের জন্য জমি নেই, সেখানে মন্দিরের জন্য ৭০০ একর জমি?’’ ডয়চে ভেলেকে আশিস বলেছেন, ‘‘এভাবে হিন্দু ভোট পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ। মন্দির করে যে হিন্দুদের নিজের দিকে টানতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী, তারা অনেক আগেই বিজেপি-কে পছন্দের দল হিসাবে মেনে নিয়েছে। তাদের মন্দির দেখিয়েও নিজের দিকে টানতে পারবেন না মমতা।’’
২০১৮ সালের ছবিঘরটি দেখুন...