কলকাতার ভবানীপুর কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। এখান থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়বেন।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে এবং ওড়িশার একটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সায় দিল নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই উপনির্বাচন হবে। ফলাফল বেরোবে ৩ অক্টোবর। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি হওয়া আশঙ্কা দূর হলো। তবে ভবানীপুর ও মুর্শিদাবাদের দুইটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হলেও রাজ্যে আরো চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে না।
মমতা এবার নন্দীগ্রাম থেকে বিধানসভা ভোটে লড়ে হেরে যান। শুভেন্দু অধিকারীর কাছে। তারপর তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী, ছয় মাসের মধ্যে রাজ্যের কোনো বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তাকে জিতে আসতে হবে। না হলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। মমতা যাতে জিতে আসতে পারেন, তার জন্য তৃণমূল নেতা ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে পদত্যাগ করেছেন। মমতাও ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হবেন বলে ঠিক করেছেন।
কিন্তু তারপর প্রশ্ন ওঠে, করোনাকালে উপনির্বাচন সম্ভব কি না? এতদিন এই প্রশ্নকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে প্রচুর চাপানউতোর চলেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যাবতীয় জল্পনায় জল ঢেলে জানিয়েছে, রাজ্যে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। সেগুলি হলো, ভবানীপুর এবং মুর্শিদাবাদের দুইটি কেন্দ্র, যেখানে প্রাথীর মৃত্যুতে ভোট বন্ধ রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ওড়িশার একটি কেন্দ্রেও বিধানসভার উপ নির্বাচন হবে। কিন্তু এছাড়া দেশজুড়ে আরো ৩২টি বিধানসভা ও তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন বকেয়া আছে। সেগুলি এখন হবে না।
কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি
কেন শুধু চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন করানো হচ্ছে, বাকিগুলি হচ্ছে না, তার যুক্তি দিয়েছে কমিশন। তারা জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব কমিশনকে জানিয়েছিলেন যে, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। রাজ্যে যে সব জায়গায় উপনির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে বন্যা পরিস্থিতি নেই। আর ভবানীপুর নিয়ে মুখ্যসচিব সংবিধানের ১৬৪(৪) অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেছেন, কোনো মন্ত্রীর ক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে উপনির্বাচন না হলে সাংবিধানিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং প্রশাসনের উচ্চ পদ খালি থাকলে তার প্রভাব প্রশাসনে পড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে জয়ের প্রতিক্রিয়া, হারের সাফাই
পশ্চিমবঙ্গে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করবে তৃণমূল। তৃণমূলের বিপুল জয়ের পর কে কেমনভাবে হার বা জয়ের প্রতিক্রিয়া দিলেন?
ছবি: AP Photo/picture alliance
বাংলা পারে, বললেন মমতা
মমতা-ঝড়ে উড়ে গেছে মোদী-শাহের বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ''বাংলা পারে। এটা বাংলার জয়।'' পরে বললেন, ''এই জয় বাংলার মানুষকে বাঁচিয়ে দিল।'' নন্দীগ্রামের খবরে মমতা বললেন, ''আমরা পুনর্গণনা চাই।'' আদালতে যাওয়ার কথাও বললেন। তবে মমতা জানিয়ে দিয়েছেন, এখন বিজয় উৎসব নয়। এখন প্রথম কাজ, করোনার মোকাবিলা করা। তাই সকলের জন্য বিনা পয়সায় মোদীর কাছ থেকে টিকা চেয়েছেন। না দিলে ধরনার হুমকিও।
ছবি: AFP/Getty Images
মোদীর টুইট
পশ্চিমবঙ্গের ফল বেরনোর পর টুইট করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে মোদী বলেছেন, বিধানসভায় তাদের উপস্থিতি বিপুলভাবে বেড়েছে। বিজেপি এখন রাজ্যের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাবে। অমিত শাহও বলেছেন, বিজেপি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসাবে রাজ্যের মানুষের স্বার্থে ও উন্নতির জন্য কাজ করবে।
ছবি: Kuntal Chakrabarty/IANS
দিলীপ ঘোষের সাফাই
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, সেই তুলনায় তাদের সাংগঠনিক শক্তি ছিল না। তাদের আরো লড়াই করতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৫ বছর লড়াই করে ক্ষমতায় এসেছেন। বিজেপি-কেও রাজ্যে অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
অধীরের যুক্তি
অধীর চৌধুরী বলছেন, ''সাম্প্রদায়িক প্রচারের কাছে হেরেছি। মমতা সাম্প্রদায়িক প্রচার করলেন। মোদীকে ঠেকাতে দিদিকে ভোট দাও। কংগ্রেস যে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে মোদীর বিরুদ্ধে লড়ছে, লড়বে সেই ভরসা মুসলিমরা রাখতে পারলেন না। আমরা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মুসলিমরা মারা গেলেন। প্রচার হলো, মোদী মুসলিমদের মারবে। এর মোকাবিলা আমরা করতে পারলাম না।''
ছবি: Syamantak Ghosh/DW
হার স্বীকার রাহুল গান্ধীর
ভোটে বিপর্যয়ের পর রাহুল গান্ধী বলেছেন, ''আমরা সবিনয়ে হার স্বীকার করে নিলাম। আমাদের নেতা ও কর্মী, যারা কাজ করেছেন এবং লাখ লাখ মানুষ যারা আমাদের সমর্থন করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আমাদের মতাদর্শ ও মূল্যবোধের লড়াই চালিয়ে যাব।''
ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain
বিমান বসুর বক্তব্য
জন্মলগ্নের পরে এই প্রথম বামেদের কোনো প্রতিনিধি বিধানসভায় থাকবেন না। বাম জোটের তরফে বিমান বসু বলেছেন, ''জনগণ বিজেপি-কে পরাস্ত করতে চেয়েছিলেন। তাই তৃণমূল লাভবান হয়েছে। আমরা যৌথ পর্যালোচনা করব। এই হার থেকে শিক্ষা নেব। আমাদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।''
ছবি: UNI
আইএসএফ চুপ
ভোটের কিছুদিন আগে দল গঠন করেছিলেন ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি। ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। তারা হাত মেলায় বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে। জোটের হয়ে একমাত্র জয় আব্বাসের ভাই নওসাদ সিদ্দিকির। কিন্তু এরপর প্রতিক্রিয়া দেননি আব্বাস। তবে দিল্লিতে কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভালো হয়েছে না ভুল হয়েছে, তা পরে পর্যালোচনা করা হবে।
ছবি: Naushad Bhai
পিকে-র প্রতিক্রিয়া
তৃণমূলকে জেতানোর পিছনে তার কৌশলও কাজ করেছে। সেই প্রশান্ত কিশোর বা পিকে-র প্রতিক্রিয়া, ''কঠিন লড়াই ছিল। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা আছে বলে বিজেপি সব লড়াই জিতবে তার কোনো মানে নেই।'' পিকে দাবি করেছিলেন, বিজেপি একশ ছুঁতে পারবে না। সেটা মিলেছে। তারপরেও পিকে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছেন, ''আমাদের প্রচার করতে অসুবিধা হচ্ছিল।'' তবে এই জয়ের পর তার ঘোষণা, আর কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না তিনি।
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
8 ছবি1 | 8
এরপর কমিশন জানিয়েছে, সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধের কথা বিবেচনা করে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর ওড়িশার মুখ্যসচিবও জানিয়েছিলেন, তার রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে। তাই সেখানেও একটি আসনে উপনির্বাচন হবে। কিন্তু অন্য রাজ্যগুলি করোনা, উৎসবের মরসুম ও বন্যার জন্য এখন উপনির্বাচন চায়নি। অনেক রাজ্য করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনার কথা বলেছে, তাই সেই সব জায়গায় কোনো উপনির্বাচন হবে না।
বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া
রাজ্য বিজেপি নেতারা প্রথমে জানান, তারা এনিয়ে আদালতে যেতে ইচ্ছুক নয়। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, আদালতকে ঢাল করে তারা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার পক্ষপাতী নন। তারা লড়তে চান। কিন্তু পরে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, তারা আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছেন। দলের তরফে রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা আইনজীবী মহেশ জেঠমালানির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে।
তবে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ''লোকাল ট্রেন চলছে না। বাজার বন্ধ, কার্ফিউ বহাল আছে, তারপর কমিশন কী করে মেনে নিল, রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। মনে হচ্ছে, ওরা মমতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রেখে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে।''
শুভেন্দুর দাবি
নন্দীগ্রামে মমতাকে হারিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, দল বললে তিনি ভবানীপুর থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়বেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বিজেপি প্রার্থী ছিলেন। তিনিও বলেছেন, দল চাইলে তিনি লড়তে রাজি। তবে ভবানীপুর হলো তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। সেখানে বিজেপি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে হেরেছিল।
পশ্চিমবঙ্গে এখনো বন্ধ লোকাল ট্রেন
করোনার লকডাউন কার্যত উঠে গেছে। খুলে গেছে অফিস-শপিং মল-বাজার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখনো বন্ধ লোকাল ট্রেন। সমস্যায় সাধারণ মানুষ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
লকডাউনে ট্রেন বন্ধ
করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর বেশ কয়েকমাস বন্ধ ছিল পশ্চিমবঙ্গের লোকাল-ট্রেন। তারপর চলাচল শুরু হলেও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তা পুনরায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় তিনমাস বন্ধ রয়েছে লোকান-ট্রেন। আপাতত গণপরিবহনের অন্যান্য মাধ্যমগুলোয় কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও, লোকাল-ট্রেন নিয়ে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারলেন না মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
স্টাফ স্পেশাল
হাতে গোনা কয়েকটি স্টাফ-স্পেশাল চললেও লোকাল-ট্রেনের এই বিপুল চাহিদা তা দিয়ে মেটানো সম্ভব নয় বলেই মনে করেন নিত্যযাত্রীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অমানুষিক ভিড় ঠেলে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় যতদিন না টিকাকরণ সম্পন্ন হচ্ছে, ততদিন তিনি লোকাল-ট্রেন চালানোর ঝুঁকি নেবেন না। তিনি আরও জানান যে, সেপ্টেম্বরে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের জন্যই তিনি আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে চান।
ছবি: Subrata Goswami/DW
চা বিক্রেতার বক্তব্য
দমদম ক্যাণ্টনমেণ্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপরেই চায়ের দোকান পরেশ নস্করের। লোকাল-ট্রেন বন্ধ তাই যাত্রীও নেই। যাত্রী নেই তাই বিক্রিও নেই। রুটিরুজিতে টান পড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিত্যযাত্রীদের ক্ষোভ
মফস্বল থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করেন কলকাতায়। রোজগারের তাগিদে বাধ্য হয়ে এখনও যাতায়াত করতে হচ্ছে। অসম্ভব ভীড় ঠেলে দেড়-ঘণ্টার পথ পাড়ি দেওয়া হরিদাসের কাছে কষ্টকর। ''চালাতে হলে ঠিক করে চালাক, না হয় বন্ধ করে দিক। আমরা না খেতে পেয়ে মারা যাই।'' ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হরিদাস।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রেলকর্মীদের অবস্থা
পেশায় রেলকর্মী রাজেশ সিং জানিয়েছেন, এই ভীড় ঠেলে গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে স্টাফ-স্পেশালে যাতায়াত করতে হ’লে লকডাউনের কোনও অর্থই থাকে না। প্ল্যাটফর্মে আসা একটি ট্রেনের দিকে দেখিয়ে বলেন, ''আপনার মনে হচ্ছে এ’টা লকডাউন চলছে?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
লাটে উঠেছে রাজমিস্ত্রির কাজ
স্টাফ-স্পেশালের অমানুষিক ভিড় ঠেলে সকালে হাবড়া থেকে দমদমে এসেছিলেন মিনতি বিশ্বাস। পেশায় রাজমিস্ত্রি। আশা নিয়ে এসেছিলেন, ঠিকে কাজ জুটে যাবে। জোটেনি। বেলা বারোটা পর্যন্ত বসে থেকে আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ''বাইরে যে কিছু কিনে খাব সেই পয়সাও নেই। কাজ না জুটলে না খেতে পেয়ে মরতে হবে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দোকান মালিকের হতাশা
স্টেশনের ঠিক বাইরে দোকান মানিক সাহার। ট্রেন নেই, যাত্রী নেই তাই বিক্রিবাটা সিকিভাগের নীচে নেমে এসেছে। বাড়িতে তিনি একমাত্র রোজগেরে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
রিকশা চালকের হাহাকার
স্টেশন থেকে বেরিয়ে নিত্যযাত্রীদের অনেকেই সাইকেল রিকশায় চেপে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছান। তেমন যাত্রীর আশায় পথ চেয়ে বসে থাকেন শিব নারায়ণ মণ্ডল। লোকাল-ট্রেন বন্ধ, তাই খদ্দেরও নেই। ''আমাদের এখন অসুবিধের শেষ নেই। ট্রেন নেই, ভাড়া নেই, পেটে খাবার নেই”'' হতাশা ফুটে ওঠে শিব নারায়ণের গলায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অসহায় ফুল বিক্রেতা
বেঁচে থাকার তাগিদে এখন রাত দেড়টার সময় লরি করে বনগাঁ থেকে রওনা দেন শিবাণী মণ্ডল। ভোর চারটেয় পৌঁছে গোরাবাজার অঞ্চলে পুজোর ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। আগে ভোরভোর রওনা দিয়ে ট্রেনে চেপে চলে আসতেন। এখন স্টাফ-স্পেশাল চললেও পুলিশের ভয়ে তাতে মাল-পত্র নিয়ে উঠতে সাহস পান না শিবাণী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অটোচালকের কথা
দমদম ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে নাগেরবাজার রুটে অটো চালান রাজু রায়। ''আগে যখন ট্রেন চলতো, সারাদিনে দেড়হাজার টাকার ওপরে ভাড়া খাটতাম। এখন সারাদিনে পাঁচশো টাকার ভাড়াও খাটতে পারিনা। গ্যাস ভরার টাকা পর্যন্ত নেই।'' হতাশ গলায় প্রশ্ন করলেন রাজু।
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
সিপিএমের বক্তব্য
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি টুইট করে বলেছেন, ''খড়দহ, দিনহাটা, শান্তিপুর কিংবা গোসাবার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নাই বা থাকুক। এদের উপনির্বাচন জরুরি নয়। রাজ্যজুড়ে পুর-নির্বাচন বকেয়া বছরের পর বছর। বেআইনি পুরসভা চলছে। তাতে কী? নন্দীগ্রামে পরাজিত বিধায়কের ভবানীপুরের নির্বাচনটাই একমাত্র জরুরি। কী সুন্দর বন্দোবস্ত সব!''
কেন এই সিদ্ধান্ত?
নির্বাচন কমিশন কেন এই সিদ্ধান্ত নিল সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন করলে, চারটি কেন বাদ রাখা হলো?
আশিসের মতে, ভবানীপুরে উপনির্বাচন না করলে মমতা রাজনৈতিকভাবে শহিদ হয়ে যেতেন। বিজেপি চক্রান্ত করে তাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিল, এই অভিযোগ তুলে মোদী-শাহকে বিপাক ফেলতে পারতেন তিনি। তাই ওই রাস্তা নেয়নি বিজেপি।
আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র বলছেন, রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক সংকটের যুক্তি কমিশন মেনে নিচ্ছে। তাহলে কি রাজ্য সরকার ও কমিশন আগে থেকেই ধরে নিচ্ছে ভবানীপুরে তৃণমূল নেত্রী জিতছেন? না হলে, সাংবিধানিক সংকটের প্রশ্ন আসে কী করে?