1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মমতার বিজেপিবিরোধিতা লোক দেখানো?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৯ মে ২০১৮

আগামী লোকসভা নির্বাচনে অ-‌বিজেপি, অ-‌কংগ্রেস যুক্তফ্রন্ট গড়ার ডাক দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি৷ আঞ্চলিক দলের সঙ্গে আলোচনাও চালছে৷ তবে প্রকাশ্যে বিজেপি-‌বিরোধিতায় এক নম্বরে থাকলেও, বিরোধীদের অভিযোগ, সবটাই লোক দেখানো৷

ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

প্রস্তাবিত বিজেপি-বিরোধী ফেডারেল ফ্রন্ট গড়ার কাজ ত্বরান্বিত করতে গত মার্চে দিল্লি এসেছিলেন  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি বা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেবার কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার-সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতা-‌নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি৷ বৈঠক করেছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে৷ টেলিফোনে তিনি কথা বলেছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু এবং তামিলনাড়ুর বিরোধী নেতা এম কে স্ট্যালিনের সঙ্গে৷

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের ফুলপুর ও গোরখপুরের কেন্দ্রে নির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয় সবার চোখ খুলে দিয়েছে৷ এমন একটা সময় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ফেডারেল ফ্রন্টের তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এমন ফ্রন্টের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়৷

এতসবের মধ্যেই একটি অভিযোগ উঠেছে মমতার বিরুদ্ধে৷ তা হলো, তিনি গোপনে শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে কাজ করে চলেছেন৷ এই অভিযোগ নিয়ে সন্দেহ আরও মাথাচাড়া দিয়েছে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি সফরকে ঘিরে৷ দেশজুড়ে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকী পালনে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে কমিটি গড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার৷ গত ১ মে বিকেল ৫টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

বৈঠকের পর ‘‌রাজ্যের ‌দাবিদাওয়া' নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ পরে রাত ১০টা নাগাদ রেল ও কয়লা মন্ত্রী (‌প্রথম সারির বিজেপি নেতা)‌ পীযূষ গোয়েলের বড়িতে গিয়ে বৈঠক করেছেন৷

‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে সাধ্বীর ভূমিকা আর বাংলায় অত্যাচারী শাসকের ভূমিকা পালন করছেন’

This browser does not support the audio element.

এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি মমতার বিরুদ্ধে গোপন বোঝাপড়ার অভিযোগ তুলেছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‌‘‌মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে সাধ্বীর ভূমিকা পালন করছেন৷ আর বাংলায় তিনি অত্যাচারী শাসকের ভূমিকা পালন করছেন৷ দিল্লিতে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেন, তিনি মা-‌মাটি-‌মানুষের সরকার চালাচ্ছেন৷ কিন্তু আসলে বাংলায় উনি দুস্কৃতিদের নেত্রী হিসেবে কাজ করছেন৷ ওঁর নেতৃত্বে সারা বাংলা অস্থির হয়ে উঠেছে৷ মমতা বিরোধী জোটকে দুর্বল করে নরেন্দ্র মোদীকে ২০১৯ সালে বাঁচাবেন৷ বিনিময়ে মোদী সারদা,‌ নারদা-‌সহ চিটফান্ড দুর্নীতি থেকে মুখ্যমন্ত্রী-‌সহ তৃণমূল নেতাদের বাঁচাবেন৷ এটাই তো ওঁদের গোপন চুক্তি৷'‌'‌

পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তুমুল অশান্তি চলছে বাংলায়৷ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস করে আসন দখলের অভিযোগ৷ অধীরের কথায়, ‘‌‘‌আমরা অবাক হয়ে দেখছি, পুলিশ সরাসরি রাজনীতি করছে৷ এতদিন বাংলায পুলিশ শাসকের হুকুম তামিল করত৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলের ক্যাডার হিসেবে কাজ করতে বাঙালি দেখেনি৷ এমনিতে তাছাড়া বাজেটের আগে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসে দেখা করেন৷ তখন তিনি বলেন, তিনি উন্নয়নের কাজে ব্যস্ত৷ এখন মহাত্মা গান্ধীর জন্মজন্তীর বৈঠকে অন্য বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীরা না এলেও সবার আগে তিনি হাজির৷ কেন?‌  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে বিজেপিরএজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন৷ উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে যখন সন্ত্রাস চলছে, তখন দিল্লির শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীরা চুপ করে বসে আছেন৷ দিল্লির বিজেপি নেতৃত্বের কোনো মাথাব্যাথা নেই৷ এ থেকেই তো ‘‌দুইয়ে দুইয়ে চার'‌ প্রমাণ হয়৷'‌'‌

মমতার ফেডারেল ফ্রন্টের উদ্যোগকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রেস৷ তাদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের ইশারাতেই ফ্রন্টের তোড়জোড় চলছে৷ লক্ষ্য, বিজেপি-বিরোধী ভোটে থাবা বসানো৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এর থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তেলঙ্গানা কংগ্রেসের মুখপাত্র শ্রবণ দাসোজু৷

সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নেতা সুজন চক্রবর্তীও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের দিল্লি যাত্রার পেছনে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলছেন, ‘‌‘‌যেভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি ও তৃণমূল দল যেভাবে চলছে, তার মধ্যে কোনো স্বছতা নেই৷ একবার কংগ্রেসের সঙ্গে পরমুহূর্তেই বিজেপি-র সঙ্গে জোট বেঁধেছে তৃণমূল৷ এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে যে, তিনিই বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার৷ কিন্তু বাস্তবে মোটেও তা নয়৷ দিল্লিতে কোনো সরকারি বৈঠক ডাকা হলে যখন সবাই যাবেন, তখন মমতা যাবেন না৷ আবার যখন কেউ যাবেন না, তখন উনি যাবেন৷ এর অর্থ কী?‌ উনি মোদীকে বোঝাতে চান, ‘দেখো আমি তোমার সঙ্গে আছি৷''‌'‌সুজনের ব্যাখ্যা, ‘‌‘‌বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খুব সচেতন ভাবে ‘‌কাউকে বুঝতে দেব না'‌ মনোভাব নিয়ে গোপনে বিজেপি‌র সঙ্গে বোঝাপড়া করেছেন৷ গোপনে বিজেপি‌কে সাহায্য করার চেষ্টা করছে৷ এই দেখুন না, ত্রিপুরায় পুরো কংগ্রেস দলটাকে ভেঙে তৃণমূলে নিয়ে গেল৷ লালনপালন করে তাদের আবার বিজেপি-র ঘরে পৌঁছে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী৷ এভাবেই বিজেপি‌কে পেছন থেকে সাহায্য করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল ও বিজেপি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে

‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের দিল্লি যাত্রার পেছনে রহস্যের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে’

This browser does not support the audio element.

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অবশ্য জানিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধীর সার্ধ-‌শতবর্ষ জন্মজয়ন্তী উদযাপনের বৈঠকের ডাক পেয়এই তিনি দিল্লিতে দৌড়ে এসেছিলেন৷ সেখানে তিনি বাংলার দাবি নিয়েও কথা বলেছেন রাজনাথ সিং ও পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে৷ কয়লা মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে বীরভূম জেলার দেউচা-পাচামি খনি থেকে কয়লা তোলার ভার পশ্চিমবঙ্গকে দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেছেন তিনি৷ মাটির নীচে মজুত ২০০ কোটি টন কয়লা তোলার কাজ ‌এখনও শুরু হয়নি ওই খনিতে৷

তবে সংসদীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের কাজই হলো সমালোচনা করা এবং অভিযোগ করা৷ এক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের বক্তব্যও তাই৷ দলের রাজ্যসভার উপনেতা সুখেন্দুশেখর রায়ের মতে, ‌বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে হালে পানি না পেয়ে বিরোধীরা গালগল্প অভিযোগ তুলছে৷

‌‘বাংলায় একের পর এক নির্বাচনে হালে পানি না পেয়ে বিরোধীরা গালগল্প অভিযোগ তুলছে’

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,‌ ‘‌‘‌প‌শ্চিমবঙ্গে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস একসঙ্গে হয়েও লড়াই করতে ব্যর্থ হয়ে এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে৷ রাজ্যে অশান্তি ও খুনোখুনির ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে এর আগে সবকটি পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক বেশি মানুষকে খুন করা হয়েছে৷ আজ যাঁরা এইসব অভিযোগ করছেন তখন তা জঘন্য মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়৷ এর আগে দিল্লিতে একাধিক সরকারি বৈঠকে হাজির থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এবার গান্ধীজির জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন উপলক্ষ্যে এসেছিলেন৷ এ নিয়ে কংগ্রেসের মতো দল যদি অভিযোগ করে, তাহলে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক বিষয়৷ আসলে বাংলায় পরাজয় নিশ্চিত জেনে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছে বিরোধীরা৷'‌'

‌এদিকে আগামী ২৫ তারিখ বাংলার বুকে আবারও একই মঞ্চে দেখা যেতে পারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ থাকতে পারেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও৷ বীরভূমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব উপলক্ষ্যে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে তাঁকে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন জানিয়েছেন এই খবর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ