অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরো স্ত্রী রুজিরাকে তাঁর বাড়িতে দেড় ঘণ্টা ধরে জেরা করলো সিবিআই।
বিজ্ঞাপন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ভিতর সিবিআই অফিসারদের পা পড়ল। মঙ্গলবার তাঁরা অভিষেকের স্ত্রী রুজিরাকে দেড় ঘণ্টা ধরে জেরা করেন। এই জেরার পর সিবিআই অফিসাররা সোজা চলে যান নিজাম প্যালেসে তাঁদের দফতরে। সেখানে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন তাঁরা।
তৃণমূল সূত্র জানাচ্ছে, রুজিরা সিবিআই অফিসারদের সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করেছেন। তিনি সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু সিবিআই সূত্র জানাচ্ছে, রুজিরা অনেক প্রশ্নই এড়িয়ে গিয়েছেন। অনেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তিনি কিছুই জানেন না। কিছুই বলতে পারবেন না।
সিবিআই অফিসাররা প্রথমে কিছুক্ষণ সাধারণ প্রশ্ন করার পর তাঁর বিদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নিয়ে প্রশ্ন করেন।
সেই সব প্রশ্নের জবাব তাঁরা পাননি বলে সিবিআই সূত্র জানিয়েছে। রুজিরাকে কয়লা কেলেঙ্কারি নিয়ে, তাঁর বোনের বিষয়েও একগুচ্ছ প্রশ্ন করেন সিবিআই অফিসাররা। রুজিরার জবাবে তাঁরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
সিবিআই অফিসাররা আটপাতার প্রশ্নপত্র তৈরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। আটজন সিবিআই অফিসার ছিলেন। সিবিআইয়ে এসপি পদমর্যাদার অফিসার বিশ্বজিৎ দাস নেতৃত্বে ছিলেন। তবে এরপর কী করা হবে, আবার রুজিরাকে জেরা করা হবে কি না, সে ব্যাপারে কিছুই জানায়নি সিবিআই।
অভিষেকের বাড়িতে মমতা
সিবিআই অফিসাররা অভিষেকের বাড়িতে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ আগে সেখানে পৌঁছে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নয় মিনিট সেখানে ছিলেন। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার মিনিট তিনেক পরে সিবিআই অফিসাররা সেখানে ঢোকেন। তিনি কেন ভাইপোর বাড়িতে গিয়েছিলেন তা মুখ্যমন্ত্রী জানাননি, অভিষেকও কিছু বলেননি।
বিজেপি নেতার বাড়িতে তল্লাশি
সম্প্রতি বিজেপি নেত্রী পামেলাকে কোকেন সহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পামেলা পরে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ঘনিষ্ট নেতা রাকেশ সিংহের নাম করেন। মাদক মামলায় জেরা করার জন্য রাকেশকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তিনি যাননি। তিনি উল্টে হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়ার পর পুলিশ তাঁর বাড়িতে যায়। পুলিশ বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে রাকেশের ছেলে বাধা দেয়। পরে বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি করে পুলিশ।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কে কোথায় দাঁড়িয়ে
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। হাই-ভোল্টেজ লড়াইয়ে প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল ও বিজেপি। বাম-কংগ্রেস কি কিছু করতে পারবে?
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
ভোটের দামামা
এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গে। সব দলই প্রচারে নেমে গেছে। প্রধান দুই প্রতিপক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। তবে যত দিন যাচ্ছে, শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে বাম এবং কংগ্রেস।
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
তৃণমূলের জোর
২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল। সেই থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নির্বাচনে ৪০ শতাংশের উপরে ভোট পেয়েছে তারা। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ আসন পেয়েছিল তৃণমূল।
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
বিজেপির শক্তি
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে ওঠে। তারাও ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এবারের নির্বাচন ব্যাপক প্রচার শুরু করেছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে চলছে রথযাত্রা।
ছবি: Payel Samanta/DW
ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এবার ধর্মীয় মেরুকরণের নির্বাচন হবে। বিজেপি ধর্মীয় তাস খেলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার উত্তর দিতে গিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ বৃদ্ধি করছেন।
ছবি: Imago Images/Pacific Press Agency/S. Paul
শাহ-মোদীর লক্ষ্য
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পশ্চিমবঙ্গের রণনীতি তৈরি করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ৪০টিরও বেশি সভা করেছিলেন তাঁরা। এবারের ভোটেও একই ভাবে প্রচারের পরিকল্পনা করেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের এনে প্রচারের ঝাঁজ বাড়াতে চাইছে তারা। সঙ্গে চলছে তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে নিয়ে আসার কাজ।
ছবি: Dibyangshu Sarkar/AFP/Getty Images
বারবার আসছেন শাহ
অমিত শাহ এখন বারবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন। ভোটের দিন ঘোষণার আগে তিনি প্রচারের জমি তৈরি করছেন। পরে মোদী প্রচারের ঝড় তুলবেন। আসছেন নাড্ডাও। তাছাড়া অন্য রাজ্যের নেতাদেরও নিয়ে আসা হবে পশ্চিমবঙ্গে।
ছবি: Payel Samanta/DW
রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি ও বাঙালিয়ানা
মোদী, শাহ, নাড্ডার মুখে বারবার শোনা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির নাম। উঠে আসছে বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রশংসা। তৃণমূল লড়াইটাকে বাঙালি বনাম অ-বাঙালিতে পরিণত করার চেষ্টা করছিল। তার জবাবে, বাঙালি-প্রেম দেখাতে চাইছেন মোদী-শাহরা।
ছবি: DW/P. Samanta
মমতার পাল্টা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই একশ। রাজ্য জুড়ে সভা শুরু করে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর সময় সময় পরামর্শ দিচ্ছেন মমতাকে। গত কয়েক মাসে দুয়ারে সরকার এবং সকলের জন্য স্বাস্থ্যবীমা জনমনে সাড়া ফেলেছে।
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
বাম-কংগ্রেস জোট
কংগ্রেস এবং বামের ভোট গত ১০ বছরে চোখে পড়ার মতো কমেছে। ২০১৬ সালে তাদের জোট বিশেষ কাজে আসেনি। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০২১ সালে তাদের জোট আগের চেয়ে ভালো ফল করবে। বিজেপি এবং তৃণমূলের ভোট বাম-কংগ্রেস জোট সমান ভাবে কাটতে পারলে ফলাফলে তার যথেষ্ট প্রভাব পড়বে।
ছবি: Zumapress/Imago Images
সমীক্ষার ফলাফল
এখনো পর্যন্ত যতগুলি ভোটের আগের সমীক্ষা হয়েছে, তাতে অল্প হলেও এগিয়ে আছে তৃণমূল। তবে বিজেপি ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি কি তৃণমূলের ভোট-মার্জিন বাড়াতে পাড়বে?
ছবি: Hindustan Times/Imago Images
আসরে ফুরফুরা শরিফ
এরই মধ্যে ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজের দল তৈরি করেছেন। তিনি বিজেপি এবং তৃণমূল কাউকেই সমর্থন করছেন না। বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের আলোচনা চলছে।
ছবি: Naushad Bhai
11 ছবি1 | 11
সময় নিয়ে প্রশ্ন
প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, বালি পাচার, কয়লা কেলেঙ্কারি, এয়ারপোর্টে অতিরিক্ত সোনা নিয়ে আসার সময় ধরার বিষয়গুলি অনেকদিন ধরে বাজারে চালু আছে। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, এখন ভোটের আগে কেন বিষয়টিকে নিয়ে নড়াচড়া করা হচ্ছে। কেন আগে করা হলো না? অভিযোগ থাকলে সবসময়ই জেরা করা উচিত। কিন্তু সিবিআই, সিআইডি, পুলিশ কেন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হবে?
সৌম্যের মতে, সরকারের বিরোধিতা করলেই মামলা করা হচ্ছে। কচুরিপানা যেমন বাড়ে তেমনভাবে দেশদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার সংখ্যা বাড়ছে। ২২ জন কৃষকের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা হয়েছে। এই প্রবণতা মারাত্মক। যে যেখানে ক্ষমতায়, তাঁরা এই পথ নিতে পারেন।
এর প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে? বিজেপি নেতারা বলছেন, তাঁরা ভাইপোকে নিয়ে যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটা সত্য বলে প্রমাণ হচ্ছে। আর তৃণমূলের দাবি, এটা বুমেরাং হবে। লোকে বীতশ্রদ্ধ হবে। তবে মানুষের রায় তো ভোটের ফলাফলের পর বোঝা যাবে।