পশ্চিমবঙ্গে চলতি বিধানসভা ভোট নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা৷ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, ভোট শেষ না হলেও রাজ্যের ভূমিগত বাস্তবতার নিরিখে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় টিকে থাকা অনিশ্চয়তার মুখে৷
বিজ্ঞাপন
আসাম বিধানসভার মোট ১২৬টি আসনের ভোট পর্ব শেষ৷ পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের জন্য ভোট ছয় দফায়৷ প্রথম ও দ্বিতীয় দফা মিলিয়ে ভোট হয়েছে মোট ৭৪টি আসনে৷ বাকি আসনগুলির জন্য ভোট হবে চার দফায়৷ দ্বিতীয় দফায় ভোট হয়েছে উত্তরবঙ্গের ছ'টি জেলায়, যেখানে ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি৷ ছোটখাটো গণ্ডগোল হলেও বলা যায়, ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই হয়েছে৷
পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এই ভোটের ফলাফল নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই৷ অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের সব কিছু ঠিক নেই৷ জনপ্রিয়তার পালে হাওয়া কম৷ সারদা কাণ্ড থেকে নারদা কাণ্ডের আর্থিক কেলেঙ্কারিতে মমতা জেরবার৷ তৃণমূলের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা গারদে৷ তার ওপর প্রশাসনিক দুর্বলতাও প্রকট৷ অনৈতিক প্রশাসনিক কাজ এবং সারদা কেলেঙ্কারির তথ্যাদি লোপাটের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন৷ এছাড়া সিন্ডিকেট চক্রের তোলাবাজি তো আছেই৷ ঘুসের রাজত্ব অবাধ, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে জনজীবনও অতিষ্ঠ৷
এই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক উদয়ন বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাত্কারে বলেন, ‘‘মমতা বন্দোপাধ্যায় খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন বলে মনে হচ্ছে না৷ তবে মমতা কিছু ভালো কাজ করেছেন গ্রামাঞ্চলে৷ যেমন সরকারি ভাতা-টাতা বিলিয়েছেন৷ সেদিক থেকে সরকারের একটা ভিত তৈরি হয়েছে৷ এটা বাদ দিলে জনসমর্থন বলতে হয়ত আর কিছুই নেই৷ মানে রাজনৈতিক সমর্থনের জায়গা আর নেই, যেটা ছিল ২০১১ সালের আগে৷ নতুন মা-মাটি-মানুষের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন আজ ধুলিস্যাত৷ বেলাগাম উৎকোচ গ্রহণের রাজনীতি, যার ফলে তৈরি হয়েছে সুবিধাবাদীদের গোষ্ঠীচক্র৷''
সেরা দশ দুর্নীতির দেশ, সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ
এক সময়ের দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবার হয়েছে ১৩তম৷ চলুন দেখা যাক ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি)-র প্রতিবেদনে এবার কোন কোন দেশ আছে দুর্নীতির সেরা দশে আর কোন দশটি দেশে এখন দুর্নীতি সবচেয়ে কম৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
৮ থেকে ১০ নম্বরে কঠিন লড়াই
টিআইবি-র এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমান ১৮ পয়েন্ট করে পাওয়ায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দশটি দেশের তালিকায় ৮ নাম্বার থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত স্থানে রয়েছে উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
দুর্নীতির সপ্তম স্বর্গে তুর্কমেনিস্তান
উজবেকিস্তান, লিবিয়া এবং ইরিত্রিয়ার চেয়ে মাত্র এক পয়েন্ট কম হওয়ায় দুর্নীতিতে সেরা দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে তুর্কমেনিস্তান৷
ছবি: DW
ইরাকের দুরবস্থা
যুদ্ধ, হানাহানির মাঝে ইরাকে দুর্নীতিও চলছে পুরোদমে৷ তাই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন দুর্নীতিতে সেরা দেশগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: Reuters
পঞ্চম স্থানে দক্ষিণ সুদান
ইরাকের পরেই রয়েছে সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান৷ তারা পেয়েছে ১৫ পয়েন্ট৷
ছবি: Getty Images/AFP/T. Karumba
আফগানিস্তান দুর্নীতিরও স্থান
দুর্নীতিরও স্থান না হলে আফগানিস্তান কি আর ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বের চতুর্থ সেরা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হতো?
ছবি: Getty Images/AFP/S. Marai
দক্ষিণ সুদানের চেয়ে দুর্নীতিতে এগিয়ে সুদান
সুদান থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণ সুদান শুধু মানচিত্রেই নয়, দুর্নীতিতেও কিছুটা ব্যবধান দেখাতে পেরেছে৷ দক্ষিণ সুদান যখন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম স্থানে, সুদান তখন ১১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়৷ দুর্নীতিতে এগিয়ে থাকা তো আর ভালো কথা নয়!
ছবি: getty / C. Bouroncle
উত্তর কোরিয়া আর সোমালিয়া
সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে হোঁচট খেয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়লেও দুর্নীতিতে খুব এগিয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ আফ্রিকার দারিদ্র্য জর্জরিত দেশ সোমালিয়াও কম যায় না৷ ৮ পয়েন্ট করে নিয়ে এই দুই দেশই আছে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance/dpa/R. Sinmun
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক
নারীর জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ হওয়ার পর, এবার সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশও হয়েছে ডেনমার্ক৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশ পেয়েছে ৯২ পয়েন্ট৷
ছবি: Reuters/N. Ahlmann Olesen
দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড, তৃতীয় ফিনল্যান্ড
সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশগুলোর মাঝে নিউজিল্যান্ড ৯১ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে আর ৮৯ পয়েন্ট পেয়ে ফিনল্যান্ড দ্বিতীয় স্থানে৷
ছবি: picture alliance / Robert Harding
চতুর্থ স্থানে সুইডেন
আরেক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ সুইডেনও কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মাঝে খুব ভালো অবস্থানে৷ তাদের পয়েন্ট ৮৭, অবস্থান চতুর্থ৷
ছবি: DW/T. Mehretu
নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ডে সমতা
৮৬ পয়েন্ট করে পেয়েছে নরওয়ে আর সুইজারল্যান্ড৷ ফলে দেশ দু’টি আছে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ স্থানে৷
ছবি: EBU
একের হেরফেরে সাত থেকে দশ
সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দশ দেশের তালিকায় সপ্তম থেকে দশম স্থানে আছে যথাক্রমে সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ এবং ক্যানাডা৷ সপ্তম থেকে দশম, অষ্টম, নবম ও দশমে মাত্র এক পয়েন্ট করে ব্যবধান৷ সিঙ্গাপুরের ৮৪, নেদারল্যান্ডসের ৮৩, লুক্সেমবুর্গের ৮২ এবং ক্যানাডার পয়েন্ট ৮১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Antonisse
12 ছবি1 | 12
বিজেপি বা কংগ্রেস-সিপি-এম জোটের সম্ভাবনা কতটা?
অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায় মনে করেন, ‘‘অন্য দলগুলির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকলেও একটা সংহতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং সেটা ক্রমশই বেগবান হচ্ছে৷ যদি বাম-কংগ্রেস জোট জেতে, তাহলে বিজেপির পোয়াবারো৷ তৃণমূল কোণঠাসা হলে বিজেপিরই লাভ৷ আর রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার কথা যদি ধরেন, সেই ছবিটা একেবারেই ভালো নয়৷ শুধু মালদার মতো সাম্প্রদায়িক ঘটনাই নয়, গোটা রাজ্যই এখন দাঁড়িয়ে আছে ‘জোর যার মুলুক তার' নীতেতে ভর করে৷''
রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ইস্যু প্রসঙ্গে অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায় ডয়চে ভেলে বললেন, ‘‘বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের কয়েকটি জেলার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী, তথা চোরাচালানের ওপর৷ বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা না করে অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাবে না৷ কারণ করতে গেলে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে৷''
ভারতের সিদ্ধান্তে সমস্যায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের মানুষ যেন গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয় সেজন্য ভারত থেকে বাংলাদেশ গরু পাচার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
সীমান্তরক্ষীদের নতুন দায়িত্ব
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ২,২১৬ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়ায় নিয়োজিত প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সৈন্যকে নতুন দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ সেটা হলো, ভারতীয় গরু যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশে পৌঁছতে না পারে৷ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএসএফ সদস্যদের এই নির্দেশ দেন যেন ‘বাংলাদেশের মানুষ গরুর মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়’৷
ছবি: Str/AFP/Getty Images
গরু পবিত্র
হিন্দুদের কাছে গরু একটি পবিত্র প্রাণী৷ তাই ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করতে চায়৷ রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ আরএসএস এর পশ্চিমবঙ্গের মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘গরু জবাই কিংবা চোরাই পথে চালান, আর হিন্দু মেয়েকে ধর্ষণ করা বা হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা একই কথা৷’’
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
চার যুগের ইতিহাস
ভারত থেকে চোরাই পথে আসা গরুই এতদিন বাংলাদেশের মানুষের মাংসের প্রধান উৎস ছিল৷ গত চার দশক ধরে সেটা হয়ে আসছে৷ এর সঙ্গে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য জড়িয়ে আছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman.
দাম বেড়ে গেছে
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গরুর মাংস রপ্তানিকারক বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব গত জুলাই মাসে রয়টার্সকে জানান, ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তাঁর কোম্পানির মাংস রপ্তানি প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Asia News Network/Jofelle P. Tesorio
চাকরি হারিয়েছে প্রায় ৪,০০০
বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট শাহীন আহমেদ জানিয়েছেন, জুন পর্যন্ত চামড়া শিল্পে কর্মরত প্রায় চার হাজার কর্মীর চাকরি গেছে৷ আর ১৯০টি ট্যানারির মধ্যে ৩০টি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ভারতীয় গরুর মাংস ভালো
বেঙ্গল মিট এর সৈয়দ হাসান হাবিব বলেন, তিনি এখন নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে মাংস আমদানির চিন্তা করছেন৷ কিন্তু ভারতীয় মাংস ও চামড়ার মান ভালো বলে জানান তিনি৷ উল্লেখ্য, ভারত গরুর মাংসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক৷
ছবি: AFP/Getty Images
ভারতের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন মাংসের জন্য বাংলাদেশকে নতুন উৎস খুঁজে বের করতে হবে কেননা ভারত তার সিদ্ধান্তে অটল থাকবে৷
ছবি: S. Rahman/Getty Images
7 ছবি1 | 7
তাহলে নির্বাচনে কোন দলের সম্ভাবনা বেশি?
উদয়ন বন্দোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমার মতে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে৷ কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ অবস্থাটা এখন একটা ‘ইন্টারেস্টিং' স্তরে আছে৷ তাই শেষ কথা বলা যাবে ১৯শে মে, ফলাফল ঘোষণার দিন৷''
আসামে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রধান বদরুদ্দীন আজমল এ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাজ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নাম দিয়ে অনেক মুসলিমকে হয়রানি করা হচ্ছে৷ অনেকে ভোটাধিকার পাননি৷ আসাম চুক্তি মেনে ৭১ সালের পর যাঁরা আসামে এসেছেন, তাঁরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন, এটাই আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান৷ আসামে কংগ্রেস সরকারের জমানায় মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা শোচনীয়৷ এর প্রতিকার এবং প্রতিরোধের মন্ত্র নিয়েই এই দল গড়ে উঠেছে, যাতে তাঁরা ন্যায়বিচার পান৷ প্রকৃত অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করতে নয়৷ এই ইস্যুতে তাঁরা কখনই বিজেপিকে সমর্থন করেননি এবং করবেন না৷ উল্লেখ্য, গত বিধানসভা ভোটে এআই-ইউডি-এফ ১৮টি আসন পেয়েছিল৷
মমতা বন্দোপাধ্যায় সত্যিই কি তাঁর মসনদ ধরে রাথতে পারবেন না? জানান মন্তব্যের ঘরে৷