২১ জুলাইয়ের বাৎসরিক সভা থেকে মমতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কেউ আসতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গের দ্বার খোলা আছে।
ছবি: DIBYANGSHU SARKAR/AFP
বিজ্ঞাপন
গত তিনদিন ধরে উত্তর-পূর্ব ভারতের একাধিক সীমান্ত দিয়ে শয়ে শয়ে ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করছেন। মূলত ভারতীয় এবং নেপালি ছাত্রছাত্রী তারা। বাংলাদেশের বিভিন্ন কলেজে তারা পড়তে গেছিলেন। কেউ কেউ কাজও করতে গেছিলেন। দেশ জুড়ে ছাত্র আন্দোলন এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর তারা ভারতে চলে আসছেন।
এই পরিস্থিতিতে রোববার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সভা ছিল তৃণমূলের। প্রতি বছরেই এই দিনটিতে ধর্মতলায় শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল। দলের সবচেয়ে বড় সভা এটি। সেই সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ''বাংলাদেশ একটি আলাদা দেশ। ফলে সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি না। যদি কিছু বলতে হয়, তা ভারত সরকার বলবে। তবে সেখান থেকে কেউ যদি ভারতে আসতে চান, পশ্চিমবঙ্গের দরজা তাদের জন্য় খোলা আছে।'' একথা বলেই জাতিসংঘের কথা উল্লেখ করেন মমতা। জানান, জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্য়ক্তি যদি পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নিতে চান, তাহলে তা দিতে বাধ্য সেই দেশ। ফলে বাংলাদেশ থেকে যারা ভারতে আসতে চাইবেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে যারা আটকে পড়েছেন, সকলেই নিরাপদে পশ্চিমবঙ্গে থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোটা আন্দোলনের প্রতি সংহতি, আর সহিংসতার প্রতিবাদ ইউরোপে
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানানোর পাশাপাশি সহিংসতার প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রবাসীরা৷ ছবিঘরে থাকছে এরকম কিছু কর্মসূচির কথা৷
ছবি: Niaz Muhit
বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
‘‘বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে হত্যা এবং হামলার প্রতিবাদে জার্মানির রাজধানী বার্লিনে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে কয়েকশ বাংলাদেশি সমবেত হন’’ বলে জানিয়েছেন তাদের একজন মুহাম্মদ মুহিব্বুল হাসান৷ প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি প্রদান করে হামলাকারীদের শাস্তি, কোটা সংস্কার এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়৷
ছবি: Muhib Hasan
প্যারিসে মানববন্ধন
বাংলাদেশের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ‘ন্যাশন’ চত্ত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা৷ ‘‘দুই শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সংহতি জানান,’’ বলে জানিয়েছেন প্যারিসে বসবাসরত সাংবাদিক মোহাম্মদ আরিফ উল্লাহ৷
ছবি: Mohammad Arif Ullah
নুরেমবার্গে প্রতিবাদ
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রতিবাদে জার্মানির নুরেমবার্গ শহরে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷
ছবি: Samsuzzaman Uday
ড্রেসডেনে প্রতিবাদ
জার্মানির ড্রেসডেনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন একদল বাংলাদেশি৷ তাদের একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘নিরীহ শিক্ষার্থীদের হত্যা বন্ধ করুন৷’’
ছবি: Md Imtiaz
নর্দান সাইপ্রাসে অবস্থান কর্মসূচি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত, সংঘর্ষের প্রতিবাদে নর্দান সাইপ্রাসেও বাংলাদেশিদের সমবেত হতে দেখা গিয়েছে৷ সেখানকার ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনে শহিদদের মাগফিরাত এবং আহত ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি৷ আমরা চাই ছাত্র হত্যা বন্ধ হোক, দেশে শান্তি ফিরে আসুক৷’’
ছবি: Emam Uddin
পোর্টসমাউথে প্রতিবাদ
যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথেও প্রবাসী বাংলাদেশিরা কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষায় রাজনীতি নয়৷’’
ছবি: Md. Rubayeth Islam
মাগডের্বুগে শিক্ষার্থীদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় যে প্রাণহানি হয়েছি তার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জার্মানির মাগডের্বুগের বাংলাদেশি কমিউনিটি৷
ছবি: Shehab Uddin
ব্রেমেনে একাত্মতা প্রকাশ
বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করে জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একাংশ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন৷ সেখানে একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি৷’’
ছবি: Hasibul Hasan Shanto
এসেনে প্রতিবাদ
বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে জার্মানির এসেন শহরে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি মানববন্ধন করেন৷ মানববন্ধনে অংশ নেয়াদের মধ্যে অন্যতম রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিয়া হাসান বলেন, ‘‘সবাই একমত হোন যে এটা আর কোটা সংস্কার নয়, বরং রাষ্ট্রীয় সংস্কার দরকার৷ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া রাষ্ট্রীয় সংস্কার সম্ভব নয় বলে [এখানে] সবাই শেখ হাসিনার পতন চান৷’’
ছবি: Niaz Muhit
বনে প্রতিবাদ
বাংলাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে জার্মানির বন শহরে জাতিসংঘের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন একদল প্রবাসী বাংলাদেশি৷ সেখানে একজন বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মো: কবির আহমেদ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারের কাছ থেকে আর কি-ইবা পাওয়ার আছে৷ তারা তো সম্পূর্ণ দেশটাই পেয়েছে স্বাধীন হিসেবে৷’’
ছবি: Md Shafaat Ullah
ছাত্র হত্যার অবসান দাবি মিউনিখে
জার্মানির মিউনিখ শহরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন৷ এই কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হোসাইন মোঃ তালিবুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা মিউনিখে বাংলাদেশে সংগঠিত সংঘাতের এবং ছাত্র হত্যার অবসান এবং বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছি৷’’
ছবি: Hossain Islam
ব্রান্ডেনবুর্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ
জার্মানির কটবুস শহরে ব্রান্ডেনবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত প্রায় ১০০ এর মতো শিক্ষার্থী চলমান কোটা সংস্কার ‘‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে’’ সমবেত হন৷ তাদের অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘‘সহিংসতা বন্ধ হোক৷’’
ছবি: Muhib Hasan
ম্যনশেনগ্লাডবাখে মানববন্ধন
জার্মানির ম্যনশেনগ্লাডবাখের হকশুলে নিধেরেইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তাদের দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন৷
ছবি: Rayhan Jilani
ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাসের সামনে প্রতিবাদ
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ তাদের দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের হামলা এবং শিক্ষার্থীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন৷
ছবি: Sadiya Azim Onima
14 ছবি1 | 14
পাশাপাশি এদিনের ভাষণে বাংলাদেশের ছাত্রদের কথাও উল্লেখ করেছেন মমতা। বলেছেন, ''যারই রক্ত ঝরুক, আমাদের সহমর্মিতা আছে। আমরা খবর রাখছি। ছাত্রছাত্রীদের মহানপ্রাণ, তাজা প্রাণগুলো ঝরে যাচ্ছে।''
তবে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে ভারতে যাতে কোনো উত্তেজনা না ছড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক করেছেন মমতা। তার বক্তব্য়, কেউ যেন কোনো প্ররোচনায় পা না দেন। কোনো উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি না করেন।
অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ছাত্রদের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক মিটিং মিছিল হয়েছে। বাম ছাত্ররা ঐক্য়বদ্ধভাবে বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, বাংলাদেশের ছাত্রদের পাশে আছে তারা। সম্প্রতি তারা বেশ কয়েকটি মিছিলও করেছে। বাংলাদেশ উপ হাই কমিশনের কাছে এমনই একটি মিছিল ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। পুলিশ ছাত্রদের আটক করে। যা নিয়ে বামপন্থিরা সরব হয়েছেন। তাদের বক্তব্য়, বাংলাদেশের কায়দাতেই এখানেও ছাত্র আন্দোলনের উপর আক্রমণ চালিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ। সোমবারও ছাত্রদের সভা এবং মিছিল হওয়ার কথা।
এদিকে ভারতেও আটকে পড়েছেন বহু বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী। তেমনই এক ছাত্র সুদীপ্ত চক্রবর্তী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''গত কয়েকদিন ধরে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ভয়ংকর চিন্তা হচ্ছে। আমার বাড়ি যেখানে সেই অঞ্চলের অগ্নিগর্ভ ছবি ইন্টারনেটে দেখেছি। জানি না, কী চলছে সেখানে।''