মরক্কোর অন্তত ১৫ হাজার মসজিদে কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা যাবে এই পরিবর্তন৷ তখন মারাক্কেশের এই মসজিদটির মতো অন্যগুলোতে ঢুকেও হয়ত কেউ বলে উঠবেন, ‘‘এ যেন আল্লাহর দান!’’
বিজ্ঞাপন
এমন চমকই দেখিয়েছে মারাক্কেশের কুতুবিয়া মসজিদ৷ বাইরে থেকে কোনো বৈদ্যুতিক তার যায়নি ভেতরে, অথচ দিব্যি ঝলমলে আলো জ্বলছে মসজিদ জুড়ে৷ এক শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় এ বিষয়টি দেখেই অবাক হয়ে এক কিশোরী বলছিল, ‘‘এ যেন আল্লাহর দান!’’
আসলে সেখানে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে আর সেই বিদ্যুতেই আলো জ্বলছে, ফ্যান চলছে দেশের অন্যতম পুরনো মসজিদ কুতুবিয়ায়৷
বাংলাদেশে সৌরশক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে
বাংলাদেশে গ্রামীণ শক্তি কার্যত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিপ্লব এনেছে৷ ইতোমধ্যে দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি৷ ৬৪ জেলাতেই চলছে তাদের কার্যক্রম৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
সৌরবিপ্লব
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কার্যত বিপ্লব এনেছে গ্রামীণ শক্তি৷ গত বছরের শুরুতে দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়ে তারা৷ ২০১৫ সাল নাগাদ আরো দশ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের রেকর্ড গড়তে চায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুরুর কথা
বাংলাদেশে গ্রামীণ শক্তির যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৬ সালে৷ নবায়নযোগ্য জ্বালানির সুবিধা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি৷ শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান৷
ছবি: picture-alliance/dpa
৬৪ জেলায় কার্যক্রম
বাংলাদেশে ৬৪ জেলাতেই কাজ করছে গ্রামীণ শক্তি৷ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ৫০ হাজার গ্রামে সেবা পৌঁছে দিয়েছে সংস্থাটি৷ গ্রামীণ শক্তির মাধ্যমে পাওয়া সৌর প্যানেল ব্যবহার করে লাভবানের সংখ্যা আট মিলিয়নের বেশি৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
শুধু গ্রামীণ শক্তি নয়
গ্রামীণ শক্তি ছাড়াও আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সৌরশক্তি সেবা প্রদান করছে৷ রয়েছে সরকারি উদ্যোগও৷ সরকারি বিভিন্ন ভবনে সৌরশক্তি ব্যবহারের উদ্যোগও শুরু হয়েছে৷ ঢাকায় পরিসংখ্যান ব্যুরো ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে গত বছর৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
জাতীয় গ্রিডের জন্য সৌরশক্তি
সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ‘রহিমআফরোজ রিনিউবেল এনার্জি’৷ প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ঢাকার সচিবালয়ের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়েছে৷ তাদের উৎপাদিত বিদ্যুৎ মেগাওয়াট প্রতি নির্দিষ্ট দামে কিনে নেবে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: ROBYN BECK/AFP/Getty Images
সহায়তায় জার্মানি
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সহায়তা করছে জার্মান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা জিআইজেড৷ সোলার প্যানেলে মূল্য বেশি হওয়ায় শুরুতে ভর্তুকিও দিয়েছে জিআইজেড৷ তবে কিস্তিতে সোলার প্যানেল কেনার সুবিধা থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সহজেই সেগুলো ব্যবহার করতে পারছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Centro de Energía Chile
লক্ষ্য অর্ধেক জনশক্তি
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর কাছে সৌরশক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে চান এই খাতের সংশ্লিষ্টরা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানান বাংলাদেশে সৌরশক্তি জনপ্রিয় করার অন্যতম কারিগর দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া৷
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড-এর সহায়তায় মসজিদটিতে এখন সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে৷
মরক্কোয় ৫০ হাজারের মতো মসজিদ আছে৷ সে দেশের মিনিস্ট্রি অফ ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স ১৫ হাজার মসজিদে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷ সরকার চায়, আগামী ২০১৯ সালের মধ্যে অন্তত ৬০০ মসজিদে ফটোভোল্টাইক (পিভি) প্যানেল স্থাপন করতে৷
মারাক্কেশের কুতুবিয়া মসজিদের কারণে এখন ধীরে ধীরে অন্তত ১৫ হাজার মসজিদে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহ করার পরিকল্পনাকেও বাস্তবসম্মত মনে হচ্ছে৷ সত্যিই তো, একটিতে সম্ভব হলে, বাকিগুলোতে কেন নয়?
২০১৫ সালেক সারা দেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অর্ধেক অন্তত দেশেই উৎপাদন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মরক্কোর রাজা৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছিলেন তিনি৷ মরক্কো এখনো শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ বিদ্যুতের জন্যই অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল৷ তবে সরকার মনে করছে, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনামতো বাড়াতে পারলে এ অবস্থা বেশিদিন থাকবে না৷
লুইস অসবোর্ন/এসিবি
মরক্কো ঘুরতে গেলে এই ১৫টি জায়গায় অবশ্যই যাবেন
অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ ‘মরক্কো’৷ ইউরোপের এত কাছে হলেও কিছুতেই ইউরোপীয় নয় দেশটি৷ রাজধানী রাবাত যেখানে ছেয়ে গেছে বিদেশি গাড়িতে, সেখানেই আবার উট ছাড়া মরক্কো ভ্রমণ আজও অকল্পনীয়৷
ছবি: Julian Peters/Zoonar/picture alliance
অনন্য এক ইতিহাসের সাক্ষী
উত্তরে কয়েক কিলোমিটারের জিব্রাল্টার প্রণালী পেরুলেই ইউরোপ আর ঐতিহাসিক কারণে ফ্রান্স ও স্পেনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক – এ বাস্তবতাই হয়ত মরক্কোকে দিয়েছে এক অনন্যতা৷ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মারাক্কেশের পুরনো এই কেল্লার প্রতিটি ইঁট যেন সে কথাই বলছে৷
ছবি: DW/D. Guha
সবার প্রিয় ‘মোহাম্মদ দ্য সিকস্থ’
অর্থনৈতিক প্রগতি ও আধুনিকতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে মরক্কো একটি মডেল৷ অথচ দেশটি কিন্তু আজও চলছে রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের শাসনে৷ তবে নিজের ক্ষমতা কমিয়ে দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি বেশ কয়েক বছর হলো৷
ছবি: DW/D. Guha
ভাসমান বিস্ময় – ‘হাসান মস্ক’
সমুদ্রের নীল ঢেউয়ে ভাসমান সুউচ্চ মিনারসহ এই মসজিদটি তৈরি করেন রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের বাবা দ্বিতীয় হাসান৷ কাসাব্লাঙ্কা শহরের অন্যান্য ইমারতগুলি ধবধবে সাদা হলেও, এই ‘হাসান মস্ক’ কিন্তু লাল বেলেপাথরের তৈরি৷ এর নকশা তৈরি করেছিলেন ফরাসি স্থপতি মিশেল প্যাঁসো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Schmitt
রক্তিম শহরের হারিয়ে যাওয়া শিল্পী
‘কাসা ব্লাঙ্কা’ – এই নামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাসাব্লাঙ্কা শহরের বাড়িগুলো যেমন সাদা, তেমনই মারাক্কেশ শহরের বাড়িগুলো লাল রঙের৷ অনেরটা ভারতের ‘পিঙ্ক সিটি’ জয়পুরের মতো৷ এ শহরের অলি-গলিতে ছড়িয়ে আছে হাজারো বাজার, হামাম, ফেরিওয়ালা আর নাম না জানা সব শিল্পী৷
ছবি: DW/D. Guha
ইহুদিদের ‘হামসা’ বা খামসা
একে হযরত মূসা বা হযরত হারুনের বোন মারইয়ামের হাত বলুন অথবা ফাতেমার হাত, পাঁচ আঙুল বিশিষ্ট এই হাতটি বাড়ির কোথাও টাঙিয়ে রাখলে কিংবা গয়না হিসেবে গলায় ঝুলিয়ে রাখলে নাকি শয়তানের কুদৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ ইহুদিদের মতো মরক্কোর সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে এর শক্তি৷
ছবি: DW/D. Guha
‘জাগলার্স স্কয়ার’ বা ‘জেমা এল-ফেনা’
কথাটি ‘জাগলিং’ থেকে এসেছে৷ মানে যে জায়গায় ভোজবাজি বা ম্যাজিক দেখানো হয়৷ দেখানো হয় বল, থাকা, বাতি, এমনকি সাপ-খোপ নিয়ে খেলাও৷ তবে এ সব ছাড়াও এখানে নানা ধরনের হাতের কাজ আর সুস্বাদু ‘তাজিন’ তৈরির বাসন-পত্রও পাওয়া যায়৷
ছবি: DW/D. Guha
আলো-আঁধারির পথে পথে...
সন্ধ্যে নামার পর পরই পালটে যায় ‘জেমা এল-ফেনা’-র পরিবেশ৷ চারিদিক সেজে ওঠে রং-বেরঙের আলোয়, বসে যায় খাওয়া-দাওয়ার রকমারি ‘স্টল’৷ আর তারপর শুরু হয় গাজ-বাজনা৷ এই আলোর হাট দিয়ে হেঁটে যান – একেবারে ‘সহস্য এক আরব্য রজনী’-র সময়ে পৌঁছে যাবেন৷
ছবি: DW/D. Guha
নানা ভাষার সহাবস্থান
৪৪ বছরের ফরাসি দখলদারিত্বের অবসান ঘটিয়ে ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে মরক্কো৷ অথচ আজও সেখানকার মানুষ ঝরঝর করে ফরাসি বলে, বলে আরবি, আবার কেউ কেউ কথা বলে একেবারে স্থানীয় ভাষায়৷ শামুক আর গুগলি বিক্রি করতে করতে ঠিক যেমন বলছেন এই দোকানি৷
ছবি: DW/D. Guha
বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়
আচ্ছা, বলুন তো বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম কী? হ্যাঁ, মরক্কোর ফেস শহরের আল-কারাউইন ইউনিভার্সিটি-ই হলো পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়, যার প্রতিষ্ঠা হয় ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে৷ আর সেই ফেস শহরেই রয়েছে অসামান্য সুন্দর এই রাজপ্রাসাদটি৷ ফেস শহরের আদি অংশ বা ‘মেদিনা’-র অংশ এটি৷
ছবি: DW/D. Guha
মেদিনার ভিতরে প্রাচীন বাজার
ফেসের মেদিনায় একবার ঢুকে পড়লে বের হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷ এত অলিগলি, বাজারহাট, উঁচু উঁচু বাড়িঘর, বিরাট বিরাট সিংহদরজা – যে দেখতে দেখতে কখন যে পথ হারিয়ে ফেলবেন, বুঝতেই পারবেন না৷ তারপরও মেদিনার কাঁচা বাজারটি কিন্তু দেখার মতো!
ছবি: DW/D. Guha
কোনো গাড়ি চলাচল নেই
বলা বাহুল্য, মরক্কোর সবচেয়ে প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে ফেস অন্যতম৷ এর ‘মেদিনা’ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় পড়ে৷ এ শহরের কেন্দ্রভাগে শুধুমাত্র গাধা আর ঘোড়ার গাড়ি ঢুকতে পারে৷ সেভাবেই মাংস-মাছ সব আসে-যায় বাজারে৷ আসলে রাস্তাগুলো এত ছোট যে, এখানে কোনো গাড়িই চলতে পারে না৷
ছবি: DW/D. Guha
দেশি-বিদেশি সবজি
কাঁচা বাজারে শুধু মাছ-মাংস, কিশমিশ, খেজুর, বাদাম, চাল-ডাল আর মশলাই নয়, বিক্রি নয় নানারকম সবজিও৷ এর বেশিরভাগই আমাদের চেনা৷ টমেটো, বেগুন, ফুলকপি, রাঙা আলু, এমনকি লঙ্কাও দেখা যায়৷ তবে তার সঙ্গে আর্টিশকের মতো কিছু ইউরোপীয় সবজিও পাওয়া যায় এখানে৷
ছবি: DW/D. Guha
গোল রুটি তৈরির কেরামতি
মরক্কোর অন্যতম খাবার হলো ‘তাজিন’৷ এটা সাধারণত প্লাম (একরকম ফল) আর মাংস দিয়ে তৈরি হয়৷ তাজিন দেখতে যেমন চমৎকার, তেমনি ঘ্রাণে ও স্বাদেও অসাধারণ৷ মরক্কোর মানুষ তাজিন খেয়ে থাকে ডালিয়া অথবা এমন গোল গোল রুটি দিয়ে৷ এই রুটি তৈরির কাজ অবশ্য যার তার কাজ নয়!
ছবি: DW/D. Guha
দূরে কোথাও, দূরে দূরে...
ফেস থেকে অনেক দূরে, রাজধানী রাবাতের দিকে যেতে পড়ে মেকনেস শহর৷ তারপরও যদি বেশ কিছুটা পথ না থেকে যাওয়া যায়, তবেই আস্তে আস্তে পালটে যেতে থাকে আশেপাশের ছবি৷ লোকালয় থেকে দূরে চোখের সামনে ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে একটা ধ্বংসাবশেষ৷
ছবি: DW/D. Guha
মরক্কোয় রোমান সভ্যতার নিদর্শন
প্রাচীন রোমান শহর ভোলুবিলিসের ধ্বংসাবশেষ এটি৷ বলা বাহুল্য, এটিও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ প্রতি বছর হাজারো দর্শনার্থী এখানে ভিড় করে নিজের চোখে একটিবার রোমান সাম্রাজ্যের এই অসামান্য নিদর্শনটিকে প্রত্যক্ষ করতে৷