মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর মাক্রোঁ সরকার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
আলজেরিয়া, মরক্কো এবং তিউনিশিয়া থেকে আসা অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রশ্নে কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে ফ্রান্স৷ ওই তিন দেশের নাগরিকদের ফ্রান্সের ভিসা কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাক্রোঁ সরকার৷
বিজ্ঞাপন
মাগরেব অঞ্চলের দেশ তিনটি ‘অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের' ফেরানোর বিষয়ে অসহযোগিতা করায় ফ্রান্স সরকারের এই সিদ্ধান্ত৷ মঙ্গলবার ফরাসি সরকারের মুখপাত্র গাব্রিয়েল আট্টাল জানান, এ কারণে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মরক্কো আর আলজেরিয়ার নাগরিকদের ভিসা অর্ধেক এবং তিউনিশিয়ার নাগরিকদের ভিসা এক তৃতীয়াংশ কমানো হবে৷ ইউরোপ ওয়ান রেডিওকে আট্টাল গাব্রিয়েল বলেন, ‘‘হ্যাঁ, এটা কঠিন এবং অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত আর এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ওইসব দেশ তাদের এমন নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করায়, যাদের আমরা ফ্রান্সে রাখতে চাই না বা রাখতে পারি না৷''
ফ্রান্স সরকারের অভিযোগ, ফরাসি আদালত আলজেরিয়া, মরক্কো আর তিউনিশিয়া থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীদের অভিবাসনের আবেদন খারিজ করার পরও সেসব দেশ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয় না৷ বরং সেসব দেশে প্রবেশের অনুমতি দিতেও অস্বীকার করা হয়৷
প্যারিসে আবার শরণার্থী শিবির ভাঙল পুলিশ
প্যারিসে গত সপ্তাহের পর আবার শরণার্থী শিবির ভাঙল ফরাসী পুলিশ। বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Christophe Petit Tesson/dpa/picture alliance
যা হলো প্যারিসে
ফরাসী পুলিশ সোমবার রাতে প্যারিসের কেন্দ্রে প্লাস ডে লা রিপাবলিক অঞ্চলে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির ভেঙে দিয়েছে। গত সপ্তাহেও একইভাবে একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবির ভাঙে পুলিশ। তবে এবার, শরণার্থীদের সরাতে পুলিশ টিয়ারগ্যাসও ব্যবহার করেছে। পুলিশের বক্তব্য, নিরাপত্তাজনিত কারণেই এই অস্থায়ী শিবির থেকে শরণার্থীদের সরিয়েছেন তারা। এছাড়া, এধরনের শিবিরকে বেআইনি বলছেন তারা।
ছবি: Michael Bunel/Le Pictorium/MAXPPP/dpa/picture alliance
কোথা থেকে এসেছিলেন তারা
প্যারিসের কেন্দ্রের এই অস্থায়ী শিবির, যা পুলিশের মতে বেআইনি, বর্তমানে সুদান, আফগানিস্তান ও সোমালিয়ার মতো অশান্ত অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের বাসস্থান ছিল। করোনা সংক্রমণের মধ্য দিয়ে যাওয়া প্যারিসের এই শরণার্থীদের কোনো স্থায়ী থাকার জায়গা নেই।
ছবি: Christophe Petit Tesson/dpa/picture alliance
পুলিশ যা বলছে
এই ধরনের শিবির তৈরির পেছনে কিছু নির্দিষ্ট সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে বলে প্যারিস পুলিশের মত, যা কোনোমতেই মেনে নেবেন না তারা বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। সে কারণেই, টিয়ারগ্যাসের সাহায্যে ভিড় সরিয়ে প্রায় ৫০০ অস্থায়ী তাঁবু সরিয়ে নেন তারা। প্রয়োজনে, ভেতরে বাসরত মানুষসহই তাঁবু তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।
ছবি: Martin Bureau/AFP/Getty Images
শরণার্থীদের অবস্থা
শরণার্থী অধিকার সংস্থা ‘ইউটোপিয়া ৫৬’ জানিয়েছে যে পুলিশের এই আচরণের ফলে এই শরণার্থীরা আবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। এবিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান না থাকা সত্ত্বেও পুলিশের এই আচরণ ফ্রান্সের অভিবাসন নীতির ফাঁক ঢাকতে পারবে না, বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
ছবি: Jerome Gilles/NurPhoto/picture alliance
প্যারিসে শরণার্থীরা
যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের পথে ফ্রান্স একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষ প্যারিস থেকে ক্যালে বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়, যেখান থেকে বিভিন্ন ট্রাকে করে তারা অবৈধভাবে ইংলিশ চ্যানেলে পার করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করে।
ছবি: Jerome Gilles/NurPhoto/picture alliance
ফরাসী সরকার যা বলছে
প্যারিসের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তরফে শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ বাসস্থানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ফরাসী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জেরাল্ড ডার্মানে টুইটে জানিয়েছেন যে এভাবে শরণার্থীদের সরানোর চিত্র খুবই বেদনাদায়ক এবং এবিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন চেয়েছেন তিনি।
ছবি: Jerome Gilles/NurPhoto/picture alliance
6 ছবি1 | 6
সম্প্রতি ফ্রান্সের ডানপন্থি দলগুলো অভিবাসন সংক্রান্ত আইন কঠোর করার দাবি তুলেছে৷
সোমবার র্যালি পার্টির নেত্রী লে পেন ফ্রান্স টু টেলিভিশনকে বলেন, ২০২২ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে জিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হলে তিনি অভিবাসন আইন কঠোর করার বিষয়ে গণভোট করাবেন৷ ২০১৭ সালের নির্বাচনে মাক্রোঁর কাছে (তখন তার দলের নাম ছিল ন্যাশনাল ফ্রন্ট) হেরে যাওয়া লে পেন আরো জানান, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি আবাসন, চাকুরি এবং সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে ফরাসি নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেবেন৷
মরক্কোর প্রতিবাদে টিকা প্রসঙ্গ
মরক্কোর নাগরিকদের ভিসা কমানোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন সে দেশের পররাষ্টমন্ত্রী নাসের বুরিতা৷ তার মতে, ফ্রান্স সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ‘অন্যায়'৷ মরক্কো অবৈধ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরত নিতে অস্বীকার করেছে, ফ্রান্স সরকারকে সহযোগিতা করছে না- এসব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, অভিবাসন প্রত্যাশীরা করোনা টিকা নিতে অস্বীকার করায় তাদের দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না৷ তার মতে, ফ্রান্সে অবস্থানরত মরোক্কানরা টিকা নিচ্ছে না- এটা ফ্রান্সেরই সমস্যা, মরক্কোর নয়৷