1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরক্কো পারে কিন্তু বাফুফে পারে না

১৪ ডিসেম্বর ২০২২

দেশের প্রতিভা দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনো - দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাতে এমন এক নীতি বাস্তবায়ন করে বদলে গেছে মরক্কোর ফুটবল৷ যা দিয়ে কাতার বিশ্বকাপের বিস্ময় আফ্রিকার দেশ মরক্কো৷

Katar WM FIFA 2022 Achtelfinale Marokko vs Spanien Elfmeterschießen
ছবি: ODD ANDERSEN/AFP

তাদের এই সাফল্যকে অঘটন বলার কোন সুযোগ নেই৷ কারণ এবারের আসরের প্রথম ম্যাচেই তারা গোলশূন্য রুখে দেয় ক্রোয়েশিয়াকে৷ এরপর বেলজিয়াম আর কানাডাকে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে জায়গা করে নেয় রাউন্ড অব সিক্সটিনে৷ সেখানে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে দেশের বিমান ধরিয়ে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট৷ আর শেষ আটে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালকে হারিয়ে বিশ্বকাপের নিজেদের সাফল্যের ইতিহাস নতুন করে লেখে মরক্কানরা৷ অর্থাৎ আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার কৃতিত্ব দেখায় মরক্কো৷ বিশ্বকাপ ফুটবলে এতোদিন আফ্রিকান দলগুলোর সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা৷ যা করেছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০০২ আসরে সেনেগাল আর ২০১০ সালে ঘানা৷ 

যেভাবে বদল গেলো মরক্কোর ফুটবল:

মরক্কোর এই সাফল্যের রহস্য আসলে কি? চারদিকে, ঘুরতে থাকা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুব গবেষনার প্রয়োজন নেই৷  

·       বিশ্বমানের একাডেমি:

মরক্কো তাদের ফুটবল উন্নয়নে প্রথম বড় বাজেটের পরিকল্পনা হাতে নেয় ২০০৭ সালে৷ দেশটির তৎকালীন রাজা ৬ষ্ঠ মোহাম্মদ ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ১২ মিলিয়ন পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় দেড়শো কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন৷ শুধু অর্থ বিনিয়োগ করেই দায়িত্ব শেষ করেনি৷ এই টাকা দিয়ে গড়ে তোলেন বিশ্বমানের একটি ফুটবল একাডেমি৷

রাজা ৬ষ্ঠ মোহাম্মদের নামে একাডেমিগুলোর নাম হলেও, সেগুলোর সুযোগ সুবিধা এবং কার্যক্রম বিশ্বমানের৷ এই যেমন সেই একাডেমিতে আছে আটটি মাঠ, চারটি ফাইভ স্টার হোটেল, একটি আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মানের ইনডোর স্টেডিয়াম, একটি মেডিক্যাল সেন্টার৷

মরক্কো তাদের ফুটবল উন্নয়নে প্রথম বড় বাজেটের পরিকল্পনা হাতে নেয় ২০০৭ সালেছবি: Martin Meissner/AP Photo/picture alliance

আর একাডেমির সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি রয়েছে ফ্রেঞ্চ ক্লাব লিঁওর৷ যারা এখান থেকে দলে নিয়েছে বেশ কয়েকজন ফুটবলারকে৷ মরক্কোতে খেলা আবুদুল্লা ওনোহি, নায়েয় আগুয়ের্দ ও পর্তুগালের বিপক্ষে গোল করা ইউসেফ এন নেসরি উঠে এসেছেন সেই একাডেমি থেকেই৷

·       প্রবাসীদের ফুটবলারদের দেশে আনা:

আয়তনের বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে মরক্কো কয়েকগুণ বড় হলেও, জনসংখ্যা অনেক কম৷ অর্থাৎ চার লাখ ৪৬ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার দেশটিতে মানুষের বাস মাত্র তিন কোটি ৭০ লাখের মতো৷ এরমধ্যে চার লাখ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে৷  দেশটির ফুটবলকে এই পর্যায়ে নিতে আসতে যাদের অবদান অসামান্য৷

১৯৯৪ ও ১৯৯৮ বিশ্বকাপ খেলা মরক্কোর মুস্তফা হাজি তার সময়ে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন মিডফিল্ডার৷ তিনি মূলত বেড়ে উঠেছিলেন ফ্রান্সে৷ তার সুযোগ ছিলো ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলার৷ কিন্তু প্রবাসী এই ফুটবলারকে ফিরিয়ে এনে জাতীয় দলে খেলায় মরক্কো৷ সেই থেকে শুরু৷

এরপর ২০১৪ সালে কাগজে কলমে প্রবাসী ফুটবলারদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন৷ এই কাজে তারা কতোটা মরিয়া ছিলো, ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে৷ নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া ফুটবলার মোহামেদ ইহাতারেনকে ফিরিয়ে আনতে তার বাবার শেষকৃত্যের দায়িত্বও নিয়েছিল মরক্কো ফুটবল ফেডারেশন৷

এরপর ২০১৫ সালে নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন বর্তমান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হাকিম জিয়েশ৷ ডাচদের সেই ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন৷ কিন্তু হাল ছাড়েনি মরক্কো ফুটবল ফেডারেশন৷ নানারকম উদ্যোগের ফসল হিসেবে এখন মরক্কো জাতীয় দল আর চেলসির জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন হাকিম জিয়েশ৷

‘মরক্কো অনেক লাকি৷ কারণ, আশরাফ হাকিমি, ইয়াসিন বনো কিংবা হাকিম জিয়েশের মতো অনেকগুলো তারকা ফুটবলারকে একসঙ্গে পেয়েছে’ছবি: Abbie Parr/AP Photo/picture alliance

তার দেখানো পথে হেঁটেছেন আবদেলহামিদ সাবিরি আর আশরাফ হাকিমি৷ স্পেনের সুযোগ থাকার পরও বেছে নিয়েছেন মরক্কোর জার্সি৷ গোলকিপার ইয়াশিন বনোর জন্ম ও বেড়ে ওঠা কানাডায়৷ চাইলেই কানাডা জাতীয় দলের হয়ে খেলতে পারতেন৷ কিন্তু তাকেও ফিরিয়ে এনেছে মরক্কো৷

বর্তমান মরক্কো দলের জিয়েশ, আমরাবাতসহ চার জনের জন্ম নেদারল্যান্ডসে৷ আশরাফ হাকিমি, মিনিরের জন্ম স্পেনে, সাইস, বোফলের জন্ম ফ্রান্সে৷ চেদিরা জন্মেছেন ইতালিতে আর চারজনের জন্ম বেড়ে ওঠা বেলজিয়ামে৷

মরক্কো পারলে, বাংলাদেশ কেন পারে না?

সুদূর পরিকল্পনা আর তা বাস্তবায়ন করে মরক্কো যখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন সোনালী ইতিহাস আর ফুটবলের প্রতি সাধারন মানুষের অসম্ভব ভালোবাসা থাকার পরও, পেছনে হাঁটছে বাংলাদেশের ফুটবল৷ এমনটাই মনে করেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বিএ যুবায়ের নিপু৷ তিনি বলেন, মরক্কো অনেক আগে থেকেই ভালো মানের ফুটবল খেলে তাতে সন্দেহ নেই৷  তবে তাদের এবারের পারফরম্যান্স সবাইকে অবাক করেছে৷  নিপু বলেন, ফুটবলকে এগিয়ে নিতে ভালো মানের একাডেমির কোন বিকল্প নেই৷

দেশের ফুটবল উন্নয়নে ২০১১ সালে সিলেটে অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকার কাছে লিজ নিয়ে একাডেমি শুরু করেছিলো বাফুফে৷ সেই একাডেমির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বাফুফের তৎকালীন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর৷  তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, অবকাঠামো থাকার পরও কেন মুখ থুবরে পড়লো সেই একাডেমি৷ তিনি অবশ্য শুরুতেই বলেন, পৃথিবীব্যাপী ফুটবলার তৈরির দায়িত্ব পালন করে থাকে ক্লাবগুলো, ফেডারেশন না৷ 

কিন্তু মরক্কোর উদাহরন টানতেই নিপু বলেন, শুধু একাডেমি করলেই হবে না, সেটি পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত টাকা এবং সঠিক পরিকল্পনা থাকতেই হবে৷  সেসময় বাফুফের দুটোর একটিও ছিলো না বলে মনে করেন যুবায়ের নিপু৷ বিশেষ করে আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকার কারণেই সিলেটের সেই একাডেমি চালিয়ে নিতে পারেনি বাফুফে৷

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের একমাত্র উপায়, যে কোন দেশের ফুটবল উন্নয়নে সরকারের সহযোগিতা দরকার সবার আগে৷ নিপু বলেন, মরক্কো ২০০৭ সালে যে একাডেমি করেছিলো, তার পুরো কৃতিত্ব কিন্তু তাদের সরকারের৷ মোটকথা, ফুটবল কেন যেকোন খেলায় এগিয়ে যেতে সম্মিলিত চেষ্টা ছাড়া সফল হওয়া সম্ভব না৷

আবু সাদাত, ক্রীড়া সাংবাদিকছবি: privat

একাডেমির বিকল্প কি প্রবাসী ফুটবলার?

জামাল ভুইয়া৷ বাংলাদেশ জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক৷ জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ডেনমার্কে৷ জামালের আগ্রহ আর বাফুফের উদ্যোগে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি৷ জামাল ভুইয়াকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে সরাসরি যুক্ত ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ সাইফুল বারী টিটু৷ তিনি বলেন, ডেনমার্ক থেকে বাংলাদেশে এসে জামালের থিতু হওয়াটা সহজ ছিল না৷ অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে৷

টিটুর মতে, মরক্কো অনেক লাকি৷ কারণ, আশরাফ হাকিমি, ইয়াসিন বনো কিংবা হাকিম জিয়েশের মতো অনেকগুলো তারকা ফুটবলারকে একসঙ্গে পেয়েছে৷ আবার দেশটি যেহেতু বিশ্বকাপে খেলে, তাই প্রবাসী ফুটবলারদেরও আগ্রহ থাকে নিজের বাবা কিংবা মায়ের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার৷ এখানেই বাংলাদেশ পিছিয়ে বলে মনে করেন সাইফুল বারী টিটু৷ তিনি, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ভালো মানের প্রবাসী ফুটবলার আমাদের নেই৷ হামজা চৌধুরীর মতো হাতে গোনা যে দুএকজন আছে, তারাও খুবে বেশি আগ্রহী নয়, বাংলাদেশের জার্সিতে খেলতে৷ এক্ষেত্রে ফুটবল ফেডারেশনকেই সংশ্লিষ্ট ফুটবলারের সঙ্গে যোগাযোগের মূল কাজটা করতে হবে৷

আবার প্রবাসী ফুটবলার পাওয়া না গেলে, বিদেশীদের নাগরিকত্ব দিয়েও সমস্যার সাময়িক সমাধান করা যেতে পারে বলে মনে করেন দেশের অন্যতম সেরা এই কোচ৷

তবে, এদুটোর বাইরে বিকেএসপিকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাইফুল বারী টিটু৷ তার মতে, ফুটবল একাডেমিতে যেসব সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন তার সবই আছে বিকেএসপি গুলোতে৷ এখন প্রয়োজন সরকার এবং বাফুফের মধ্যে সমঝোতা৷ সেটি হলে, বয়স ভিত্তিক ফুটবলারদের জন্য ভালো মানের কোচ আনতে পারলেই, ফলাফল পাওয়া সম্ভব৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ