1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরণোত্তর দেহদান: প্রতিশ্রুতি আছে, হস্তান্তর নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশে মরণোত্তর দেহ দানের প্রতিশ্রুতি যত পাওয়া যায় দেহ তত মেলে না৷ অথচ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য মানুষের মরদেহ আর বেওয়ারিশ লাশের উপর নির্ভর করতে হয়৷

ছবি: picture-alliance/Zuma Wire/US Navy

দেশে মরণোত্তর দেহ দানের কেন্দ্রীয় কোনো হিসাব নেই৷ দানের জন্য কেন্দ্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই৷ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মরণোত্তর দেহদানের সুযোগ আছে৷ অনেক ক্ষেত্রে এই দানে ধর্মীয় অনুশাসন অনেক সময় যেমন বাধা হিসেবে কাজ করে মেডিক্যাল কলেজগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো এনাটমি শিক্ষা৷ এর জন্য মরদেহ সরাসারি সংরক্ষণ করা হয়, আবার কঙ্কাল বানিয়েও রাখা হয়৷ তবে দেহ সংরক্ষণই করা হয় বেশি৷

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এনাটমি বিভাগের অফিস সহকারী মো. আলী হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০০০ সাল থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ৬৫ জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন৷ এরমধ্যে গত বছর করেছেন দুই জন৷ গত ১৯ বছরে তারা মাত্র ১২টি দেহ পেয়েছে, এর মধ্যে তিনটি মিলেছে দান থেকে আর তিনটি বেওয়ারিশ লাশ থেকে সংগ্রহ করা৷ বাকি ৬টি আগে প্রতিশ্রুতি না দিলেও হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর দেহদান করে দিয়ে যান তাদের স্বজনরা৷ এরমধ্যে সংগীত শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী এবং ত্রিমতি চট্টোপাধ্যায় নামে আরেকজনের মৃতদেহ তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কঙ্কাল বানিয়ে রাখা হয়েছে৷ মোট কঙ্কাল আছে পাঁচটি৷

ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন এবং নিহত ব্লগার  অভিজিৎ রায়ের মরদেহও আছে এই হাসপাতালে৷ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে অথবা পোস্টমর্টেম করার পর অনেক সময় সেসব মরদেহ নেয়া হয় না৷ কিন্তু অভিজিৎ রায়ের মরদেহ বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তার পরিবারের অনুরোধে৷
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এনাটমি বিভাগের প্রধান ডা. হুমায়রা নওশাবা জানান, ‘‘মরোনোত্তর দেহ দানে মানুষের আগে খুব একটা আগ্রহ ছিল না৷ তবে আজকাল তরুণরা কিছুটা আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ অনেকেই এসে কাগজপত্র নিয়ে যান৷ তবে শেষ পর্যন্ত অঙ্গীকার করেন অনেক কম৷''

ডা. হুমায়রা নওশাবা

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন,‘‘আবার যারা অঙ্গীকার করেন তাদের মৃত্যুর পর সবার মরদেহ পাওয়া যায় না৷ কারণ তাদের ছেলেমেয়েরা হয়তো চায় না৷ আমাদের মৃত্যুর খবর না জানালেতো আমরা জানব না৷ আর আমরা মরদেহ সংগ্রহ করি না৷ আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়৷''

তিনি জানান, ‘‘মরদেহগুলো কঙ্কাল আকারে না পুরো দেহটাই সংরক্ষণ হবে অঙ্গীকারনমায় তা লেখা থাকে৷ তবে দেহ চার-পাঁচ বছরের বেশি সংরক্ষণ করা যায়না৷ আবার কেউ মৃত্যুর অনেক পর হাড়গোড়ও দিয়ে যান৷ এদের পরিবারের সদস্যরা কেউ কেউ তাদের মৃত্যু দিবসে এসে কঙ্কাল বা মরদেহ দেখে যান৷''

মরণোত্তর দেহদান করতে হলে প্রথমে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর অথবা হাসপাতালে পরিচালক বরাবর নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়৷ এরপর দেড়শ টাকার স্ট্যাম্পে আদালতের মাধ্যমে দানপত্র বা অঙ্গীকারনামার হলফনামা তৈরি করতে হয়৷ তাতে দাতা, গ্রহীতা এবং সাক্ষীদের নাম ঠিকানা থাকে৷ আবেদনপত্রের সাথে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ঠিকানা ও ফোন নাম্বারসহ পরিবারের আরো কিছু তথ্য দিতে হয়৷ পরিবারে সদস্যদের সম্মতিপত্র থাকতে হয়৷ আর মৃত্যুর পর খবর দিয়ে মরহেদ পরিবারের সদস্যদেরই পৌঁছে দিতে হবে৷ সঙ্গে ধাকতে হবে ডেথ সার্টিফিকেট৷ পুলিশ কেস এবং পোস্টমর্টেম করা মরহেদ নেয়া হয়না৷ অঙ্গীকারের পরও যদি তার সন্তান বা স্ত্রী না চান তাহলে লাশ নেয়ার কোনো বিধান নেই৷

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন মোট ১৫টি মরদেহ আছে৷ এনটমি বিভাগের অফিস সহকারী আব্দুর রহিম জানান, এরমধ্যে দুইটি কঙ্কাল এবং ১৩টি দেহ সংরক্ষণ করা আছে৷ ২০০৩ সাল থেকে আরো ১৮ জন মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেছেন৷ ভাষা সৈনিক বেলাল মোহাম্মদ, লেখক এবং সাংবাদিক ওয়াহিদুল হক, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা পঙ্কজ ব্যানার্জি, নোয়াখালী গান্ধী আশ্রমের ঝর্ণাধারা চৌধুরী, শিখা ব্যানার্জির মরদেহ আছে এখানে৷

ডা. খন্দকার মানজারে শামীম

This browser does not support the audio element.

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের এনাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. খন্দকার মানজারে শামীম নিজেও মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সাধারণত যারা মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার করেন তারা তরুণ বয়সের৷ ফলে এটা পেতে সময় লাগে৷ এইসব দেহ আমরা ছাত্রদের এনাটমি শেখাতে ব্যবহার করি৷ আমাদের কাছে মরণোত্তর দেহ দান করার পর সেটার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আমাদের পক্ষ থেকে দানের কোনো সুযোগ নেই৷ সেই অবস্থায় থাকেও না৷ শুধু বোন(হাড়)  চিকিৎসার কাজে ব্যবহার সম্ভব৷ এটাকে বলি আমরা বোন ডাস্ট৷''

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের এনাটমি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. উত্তম পাল বলেন, ‘‘আমরা বছরে এক-দুইটা মরণোত্তর দেহ দানের অঙ্গীকার পাই৷ গত বছর একজন অঙ্গীকার করেছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের শিক্ষার জন্য আমাদের যত মরদেহ দরকার আমরা তা পাইনা৷ এজন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে সংগ্রহ করি৷ বেয়ারিশ লাশ আমরা আমাদের প্রয়োজন অনুযাযী সংরক্ষণ করি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ধর্মীয় কারণে অনেকে আবার মরোনোত্তর দেহদানে আগ্রহী হননা৷ কেউ অঙ্গীকার করলেও দেখা যায় মৃত্যুর পর তার পরিবার আপত্তি জানায়৷ আর এনিয়ে আমাদের এখানে তেমন প্রচারও নেই৷ আমার মনে হয় প্রচার চালানো উচিত৷''

একই কথা বলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এনাটমি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম মোস্তফা কামাল৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের প্রতিবছর চার-পাঁচটি মরদেহ প্রয়োজন হয়৷ কিন্তু আমরা তা পাইনা৷ বেওয়ারিশ লাশের ওপরই ভরসা করতে হয়৷''

বাংলাদেশে ২০১৪ সাল থেকে মরণোত্তর দেহদানে উদ্বুদ্ধ করছে ‘মৃত্যুঞ্জয়' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে একটি অনুষ্ঠানেই ২২ জন মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন৷ ওই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আবৃত্তিকার সাগর লোহানী জানান, ‘এপর্যন্ত একশ জনের কাছ থেকে আমরা অঙ্গীকার পেয়েছি৷ আমাদের কাজ হলো তাদের এই অঙ্গীকার অনুযায়ী মৃত্যুর পর মরদেহ হাসপাতালে দানের ব্যবস্থা করা৷ আমরা এপর্যন্ত একটি মরদেহ হাসপাতালে দান করেছি৷'' সাগর লোহানী নিজেও মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছেন৷ প্রসঙ্গত,বাংলাদেশের আইনে মরণোত্তর দেহ দান সম্পর্কে কিছু বলা নেই৷ আইনে তাই কোনো বাধা নেই৷

হারুন উর রশীদ স্বপনের এই প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ