মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশে পানির অভাব বড় সমস্যা৷ এক ডাচ শিল্পী ও উদ্ভাবক অভিনব উপায়ে বাতাস থেকেই পানি সৃষ্টি করতে চান৷ তাঁর পরীক্ষামূলক প্রকল্প মালির মরুভূমিতে সফলভাবে কাজে লাগানো হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মালির মরুভূমিতে সূর্যের গনগনে উত্তাপের মাঝে পাঁচদিন ধরে নতুন এক উদ্ভাবনের ফল যাচাই করা হচ্ছে৷ দেখতে সাধারণ মনে হলেও দু'টি বাক্স আসলে এক শিল্পীর সৃষ্টি৷ নেদারল্যান্ডসের সেনাবাহিনী মালিতে তাদের শান্তি মিশনে এই আইডিয়া কাজে লাগাতে চায়৷ এখনো বড়ো আকারে তার প্রয়োগ সম্ভব না হলেও এর মাধ্যমে একদিন মরুভূমিতে পানি আনার সম্ভাবনা রয়েছে৷
সাহারা মরুভূমির মাঝে গাও অঞ্চলের জন্য এমন সম্ভাবনা সামরিক কমান্ডারের মনে ধরেছে৷ ডাচ সেনা ইউনিটের প্রধান জেনারেল টম মিডেনডর্প বলেন, ‘‘এমন প্রকল্প জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সাহায্য করতে পারে৷ পানির অভাবের মধ্যে আমরা স্থানীয় মানুষের জন্য বোঝা হতে চাই না, বরং তাদের আরও সাহায্য করতে চাই, এই এলাকায় সংকটের অন্যতম কারণের সমাধান করতে চাই৷ পানির জন্য তাদের সংঘর্ষে যেতে না হলে তো সমস্যার একটা অংশের সমাধান হয়ে যাবে৷’’
বেদুইন জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া
বিশাল মরুভূমি, যৎসামান্য পানি, অল্প একটু কৃষিভূমি – এমন একটি দেশ জর্ডান৷ জীবন যাপনের জন্য এটি পৃথিবীর কঠিনতম দেশগুলোর একটি৷ এখানে প্রকৃতির দানকে কাজে লাগাতে হলে এখনো দরকার হয় বেদুইনদের চিরায়ত জ্ঞান৷
ছবি: Lukas Flinzberger
সর্দার
আবু মোহামেদ জর্ডানের একটি বেদুইন গোষ্ঠীর প্রধান৷ তিনি গাছের চলমান বিশ্বকোষ৷ যে কোনো প্রজাতি সম্পর্কে তিনি আপনাকে কিছু-না-কিছু বলতে পারবেন৷
ছবি: Lukas Flinzberger
বন্ধন
স্বজনদের খোঁজ-খবর করা-এখানকার আরেকটি রীতি৷ আবু মোহামেদের চাচাতো ভাইয়েরা তাঁর সম্মানে উৎসব আয়োজন করেছেন৷ সেই আয়োজন নিয়েই চলছে আলোচনা৷
ছবি: Lukas Flinzberger
পরিবর্তনের হাওয়া
সময়ের বদলে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বেদুইনদের জীবনেও৷ কিছুদিন পূর্বেও আধুনিকতা থেকে অনেক দূরে ছিলেন যাঁরা, সেই বেদুইনরাই এখন গাড়ি, ট্রাক্টরও ব্যবহার করছেন৷ তবুও ঘোড়া তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷
ছবি: Lukas Flinzberger
উন্মুক্ত আকাশ, বিস্তৃত প্রান্তর
মরুভূমিতে হয়তো নানা অনটন রয়েছে৷ প্রকৃতির নানা বৈরিতায় কঠিন হয়ে পড়ে জীবন৷ তবে দিগন্তরেখায় মিশে যাওয়া আকাশ আর বিশাল বিস্তৃত প্রান্তরের মালিকানাতে তারা যেন অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়৷ সীমানাহীন প্রান্তরের অবারিত এই স্বাধীনতার দ্বার উন্মুক্ত এই ঘোড়া-শাবকের জন্যও৷
ছবি: Lukas Flinzberger
জীবন-জীবিকা
জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় এখানে পশুপালন৷ আবু মোহামেদের পালে ৭০০’র বেশি ভেড়া ও ছাগল রয়েছে৷ এখানকার মাটি খুবই অনুর্বর এবং শুষ্ক৷ এ কারণে এই পশুপালকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন চারণ ভূমির সন্ধান করতে হয়৷
ছবি: Lukas Flinzberger
গ্রীষ্মকাল
জর্ডানের রাজধানী আম্মান সিটি কর্পোরেশনে নবপ্রস্তরযুগীয় প্রত্নতাত্ত্বিক একটি এলাকা রয়েছে৷ ছবিতে ‘আইন গাজাল’ নামে সেই এলাকার একটি গ্রীষ্মকালীন চারণভূমিতে বিভিন্ন ধরণের পশু দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Lukas Flinzberger
স্বজনের পাশে
স্বজনদের কষ্টের সময় পাশে থাকতে ছুটে এসেছেন সর্দার আবু মোহামেদ৷ তিনি এখন তাঁবুর ভেতরে৷ বাইরে তাই কেবলই অপেক্ষা৷
ছবি: Lukas Flinzberger
সময়
অনটনের মরু জীবনে আরেকটা জিনিসের কোনো অভাব নেই৷ সেটা হচ্ছে, সময়৷ মরুভূমির এই জীবনে সময় যেন ফুরোতেই চায় না৷
ছবি: Lukas Flinzberger
8 ছবি1 | 8
গড়ে তোলার কাজসহজ হলেও সমস্যা কম ছিল না৷ চারিদিকে বালু, উচ্চ তাপমাত্রা – যা এমনকি সোলার প্যানেলের জন্যও অত্যন্ত বেশি৷ যন্ত্র শীতল রাখার তরল পদার্থ নিয়েও সমস্যা রয়েছে৷ এই উদ্ভাবনের মূলে রয়েছে সোলার সেল ও সাধারণ কিছু বাক্স৷ বাক্সের গায়ে ধাতুর তৈরি হিটিং ব্যবস্থা লাগানো আছে৷ বাতাসের তাপমাত্রা বেশি হওয়া সত্ত্বেও তার উপর শীতল পানির বিন্দু তৈরি হয়৷ সবকিছু ঠিকমতো চললে সৌরশক্তি চালিত একটা ছোট পাম্প ভিতরেই তরল পদার্থকে শীতল রাখে৷ তখন বাতাসে আর্দ্রতা বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে৷ ২৪ ঘণ্টায় ৮ লিটার পরিষ্কার পানি পাওয়া যাবে৷ শিল্পী ও উদ্ভাবক হিসেবে আপ ফ্যারহেখেন বলেন, ‘‘অর্থ বা ব্যয় নিয়ে কথা হচ্ছে না৷ আমি বলতে পারি, যে আমরা নিজেরাই প্রকল্পের জন্য অর্থ দিচ্ছি৷ তাই সস্তার ও নির্ভরযোগ্য সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি৷’’
উদ্ভাবক একটি ছোট সংস্করণও তৈরি করেছেন, যা দিয়ে দিনে এক গ্লাস পানি সংগ্রহ করা যায়৷ তিনি গোটা বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উদ্দেশ্যে এই প্রকল্পে অংশ নেবার ডাক দিচ্ছেন, যাতে আরও উন্নত সরঞ্জাম তৈরি করা যায়৷ দ্য হেগ ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল জাস্টিস-এর ড. পাট্রিক হুন্টইয়েন্স বলেন, ‘‘আরও পানি উৎপাদন করতে এই ইউনিটকে আরও নিখুঁত করে তুলতে হবে, কারণ দু'টিই আসলে প্রোটোটাইপ৷ কৃষিক্ষেত্রে ড্রিপ সেচের জন্যও এই সমাধানসূত্র বড় অবদান রাখতে পারে৷’’
এই উদ্ভাবন এখনো বড় আকারে প্রয়োগ করার সময় আসেনি৷ কিন্তু মরুভূমিতে এই আইডিয়া কাজে লাগিয়ে হাতেনাতে মৌলিক ফল পাওয়া গেছে৷
এলকে মাইভাল্ড/এসবি
মরুভূমি বেড়েই চলেছে
ফসল ফলানোর জমি কমে আসছে, বাড়ছে মাটির ক্ষয়৷ মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘ এই অশুভ বিকাশধারায় বাঁধ দেবার চেষ্টা করেছে৷
ছবি: DW/Stefan Dege
বন্ধ্যা পৃথিবী
পাথর, বালি আর লবণসর্বস্ব মরুপ্রান্তর৷ ভূপৃষ্ঠের এক-তৃতীয়াংশই হলো রুক্ষ, নিষ্ফলা জমি, যার অনুপাত বেড়েই চলেছে৷ এ ধরনের রুক্ষ জমির অধিকাংশই সৃষ্টি হয়েছে গত হাজার বছরে৷ যেমন আলজেরিয়ার হগার মরু অঞ্চলের এই পাহাড়গুলি৷ আজ কিন্তু মরুকরণ বাড়ছে মানুষের গতিবিধির ফলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শুষ্ক থেকে শুষ্কতর
মরুকরণ বলতে বোঝায় শুকনো, ক্ষয় হয়ে যাওয়া জমি৷ আফ্রিকা, অ্যামেরিকা কিংবা এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাবে এই নতুন ধরনের মরুকরণ৷ টেক্সাসের এই গমের ক্ষেতটি ২০১১ সালের গ্রীষ্মের খরাকে সামাল দিতে পারেনি৷
ছবি: Getty Images
মানুষেরই কাজ
প্রতিবছর প্রায় ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার জমি মরুতে পরিণত হয় – আয়ারল্যান্ডের যা আয়তন৷ জলবায়ু পরিবর্তনই শুধু নয়, মানুষও এর জন্য দায়ী৷ এখানে যেমন ব্রাজিলের এই চাষিটি কোদাল চালাচ্ছেন৷ ভবিষ্যতে ভালো ফসল পাবার জন্য কি করা দরকার, সেটা কি তার জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa
গোচারণ থেকে খরা
গৃহপালিত পশু বাড়ার অর্থ আরো বেশি গোচারণ, যার ফলে জমি শুকিয়ে আসছে৷ জীবজন্তুরা ঘাস, ছোট গাছপালা ইত্যাদি খেয়ে ফেলে, যার ফলে বৃষ্টি-বাদলা থেকে মাটিকে বাঁচানোর আর কোনো আস্তরণ থাকে না৷ খরা হলে, তা সহজেই মরুকরণের দিকে নিয়ে যায়৷ মাটি আরো আলগা, আরো দুর্বল হয়ে পড়ে, সহজেই ক্ষয়ে যায়৷
ছবি: DANIEL GARCIA/AFP/Getty Images
ব্যাপক চাষ, অসংখ্য খামার
খরা ছড়িয়ে পড়ার ফলে চাষিরা ইতিমধ্যেই বিপদে পড়েছেন – মেক্সিকোর এই ভু্ট্টার খেত যার প্রমাণ৷ বছরে একাধিক ফসল তোলার ফলে মাটি পুনরায় সঞ্জীবিত হবার সময় পাচ্ছে না৷ ফলে জমি তার পুষ্টি হারাচ্ছে, ফসলের পরিমাণ কমছে, বাড়ছে ভূমির ক্ষয়৷
ছবি: Ofelia Harms
ফিরে দাও সে অরণ্য
গাছের সংখ্যা কমছে৷ রান্নার কাঠ অথবা জ্বালানি হিসেবে গাছ কাটা হচ্ছে, চাষের জমি তৈরির জন্য, শিল্পাঞ্চল বা আবাসিক এলাকা গড়ার জন্য৷ অথচ গাছেরাই জলে-বাতাসে টপসয়েল বা ওপরের হালকা মাটির ক্ষয় রোধ করে৷ গাছ কেটে ফেললে জমি নিরাবরণ, নিরাভরণ হয়ে পড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জলের নাম জীবন
বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পানির ব্যবহার৷ গত পঞ্চাশ বছরে বিশ্বে পানির ব্যবহার হয়েছে দ্বিগুণ৷ এর কারণ বিশেষ করে নতুন ধরনের চাষ-আবাদ, যেমন সবজির ক্ষেতে অনেক বেশি সেচ দিতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
পরিবেশের কার্যকারণ
মরুকরণ একবার শুরু হলে চেইন রিয়্যাকশনের মতো চলে৷ উদ্ভিদ প্রকৃতির অন্তর্ধানের ফলে পানি উপে গিয়ে মাটি শুকিয়ে যায়; জমিতে লবণের পরিমাণ বাড়ে, মাটি ফুটিফাটা হয়ে যায়, যেমন ভারতের কোনো কোনো প্রদেশে৷ তখন মাটির ক্ষয় রোধ করা শক্ত হয়ে ওঠে৷
ছবি: AP
সুদূরপ্রসারী ফলশ্রুতি
মরুকরণের ফলে শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি হয় না৷ মরুকরণের ফলে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও জীবজন্তু বিলুপ্ত হতে পারে, দেখা দিতে পারে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, জলাভাব৷ বুরকিনা ফাসোর মতো দেশের মানুষজন যার শিকার হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বন্ধ্যা পৃথিবীকে আবার সুজলা সুফলা..
মরুকরণ রোখা, এমনকি কমানোও সম্ভব, কিন্তু সেজন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন৷ কাজেই পুনর্বনানীকরণ একটি পন্থা হিসেবে৷ ডমিনিকান রিপাবলিকের এই বৃক্ষবিহীন ঢালগুলিতে নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে৷ তবে সাফল্য এখনও সীমিত৷
ছবি: DW / Sascha Quaiser
‘‘আমাদের যুগের বৃহত্তম পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ’’
জাতিসংঘের মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চুক্তি কার্যকরি হয় ১৯৯৬ সালে৷ লক্ষ্য ছিল, শুষ্ক, নিষ্ফলা জমি হ্রাস করে মরুকরণ রুখে দেওয়া৷ জাতিসংঘের মরুকরণ রোধ দিবস ১৭ই জুন৷