1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মরুভূমির গ্রাস রুখতে আফ্রিকায় নতুন উদ্যোগ

২৭ আগস্ট ২০১৯

পরিবেশ বিপর্যয়ের নানা দিক আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ আফ্রিকার দেশ নাইজারে মরুভূমির প্রসার জনপদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে৷ এক এনজিও স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করছে৷

DW eco@africa Niger Wüsten
ছবি: DW

রান্নার কাঠের বিকল্প

একেবারে তৃণমূল স্তরে বাস্তবে পরিবেশ সংরক্ষণের এক দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে৷ সেনি ইয়াকুবা ইব্রাহিম মামানে নামের এক কামারের কাছ থেকে এমন চুলা তৈরি করতে শিখছেন, যাতে কোনো কাঠ ব্যবহার করতে হয় না৷ প্রত্যেকটি অংশ নিখুঁতভাবে জোড়া দিতে হবে, যাতে চুলায় কোনো ফাঁকফোকর না থাকে এবং উত্তাপ বেরিয়ে যেতে না পারে৷

ইব্রাহিম মামানে একইসঙ্গে অনেকগুলি চুলা তৈরি করছেন৷ তিনি এক এনজিও-র কাছ থেকে ৫০টি চুলা তৈরির বরাত পেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই চুলা মরুকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামেরও হাতিয়ার বটে, কারণ কাঠের বদলে এতে ধানের তুষ ব্যবহার করা হয়৷ সেই তুষ অন্য কাজে লাগে না৷ এমনকি প্রাণীরাও খায় না৷''

প্রতিদিন রাষ্ট্রীয় ধান মিলে টন-টন তুষ জমা হয়৷ বর্জ্য হিসেবে এর কোনো পুষ্টিগত মূল্য নেই৷ চুলা থাকলে যে কেউ এখান থেকে বিনামূল্যে তুষ সংগ্রহ করে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন৷

মানুষের আচরণ সম্পর্কে সচেতনতা

এনজিওর সহ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সানি আয়ুবা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে চুলার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলেন৷ তাঁর বার্তা হলো, গাছপালা ও ঝোপঝাড় মরুভূমির প্রসার রোধ করতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা আমাদের আচরণের প্রশ্ন৷ আমাদের আচরণ ও কাঁচামাল ব্যবহারের অভ্যাস বদলাতে হবে৷ আমাদের পরিষ্কার জ্বালানি ব্যবহার করতেই হবে৷ বিশেষ করে জ্বালানির এমন উৎস ব্যবহার করতে হবে, যার মাধ্যমে কাঠের ব্যবহার কমে যায়৷''

স্কুলপড়ুয়ারা এক সপ্তাহের জন্য বাসায় এই চুলা পরীক্ষার সুযোগ পায়৷ হাবিব মামানে বাসিরু নিজের পরিবারের সদস্যদের চুলা ব্যবহারের কায়দা শেখাচ্ছে৷ হাবিবের মা হিন্দাতু আবদুলরাজ্জাক বলেন, ‘‘মনে হয় সহজেই ব্যবহার করা যায়৷ প্রায় কোনো ধোঁয়া বের হয় না, কাঠ ব্যবহারেরও আর প্রয়োজন নেই৷ বেশ ভালো৷ ভালো করে এই চুলা ব্যবহার করে দেখতে চাই৷''

ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা

নতুন এই চুলার দাম ১৫ ইউরোর মতো৷ এনজিও এর জন্য ঋণও দেয়৷ এনজিও-র সদস্যরা ডিজিটাল প্রচার অভিযান নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ তাঁরা বৃক্ষরোপণ করে উপযুক্ত মানুষ খুঁজে তাদের হাতে সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তুলে দিতে চান৷

নদীর উজানের কাছে একটি গ্রামে এই প্রচার শুরু হচ্ছে৷ সানি আয়ুবা বলেন, প্রাথমিক দ্বিধা সত্ত্বেও নারীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখান৷ দায়িত্ববোধ ও প্রচারই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ সানি আয়ুবা বলেন, ‘‘আমরা এক ডিজিটাল সংস্করণও তৈরি করবো৷ তখন সবাই স্মার্টফোনের ফ্রেমে নিজেদের ছবি লাগিয়ে ইন্টারনেটে এই অভিযানের সহায়তা করতে পারবে৷ তবে গ্রামের মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে কী করছেন, মরুকরণের মোকাবিলা করতে তাঁরা যে অবদান রাখছেন, সেটা তুলে ধরাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷''

বালুঝড়ের বিরুদ্ধে নাইজারের লড়াই

05:15

This browser does not support the video element.

নিজের চোখে দেখার সুবিধা

এই উদ্যোগের আওতায় সন্ধ্যায় এক বিশেষ ‘ফিল্ড ট্রিপ' আয়োজন করা হয়েছে৷ ফলে স্কুলপড়ুয়ারা মরুকরণের প্রসার ও গাছপালার গুরুত্ব নিজেদের চোখে দেখতে পারবে৷ এনজিওর সহ প্রতিষ্ঠাতা সানি আয়ুবা বলেন, ‘‘নিয়ামির কাছেই নদীর তীরে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে৷ ফিল্ড ট্রিপের কল্যাণে শিক্ষার্থীদের মরুকরণ সম্পর্কে সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা হবে৷ তবে সেইসঙ্গে আমরা এটাও দেখবো, যে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ কীভাবে মরুভূমির প্রসার রুখতে এবং বালিয়াড়ির মধ্যে নোঙর সৃষ্টি করতে পারেন৷''

রাজধানী নিয়ামির দোরগড়ায় সেতোরে এলাকায় একাধিক বিশাল বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়েছে৷ শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত সম্ভব বালিয়াড়ির শীর্ষে উঠতে আগ্রহী৷ কয়েকটি বালিয়াড়ি বাতাসের ধাক্কায় বছরে ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে৷ সেগুলির উচ্চতা ৩০ থেকে ৪০ মিটার হতে পারে৷ শীর্ষে উঠে শিক্ষার্থীরা অভিভূত হয়ে পড়েন৷ তবে দেখতে সুন্দর হলেও বালিয়াড়ি মানুষ ও পশুপাখির জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে৷ সানি আয়ুবা মনে করিয়ে দেন, ‘‘বালিয়াড়ির নীচে নিজেদের বাড়িঘর চাপা পড়ার ঝুঁকি রুখতে এর প্রসার প্রতিরোধ করতে হবে৷''

যেমন বালু চলাচল রুখতে বিশেষ বেড়া লাগানো যায়৷ বালিয়াড়ির নাড়াচাড়া রুখতে সবাই কী করতে পারে, সানি আয়ুবা তা বুঝিয়ে বলেন৷ হাইস্কুলের ছাত্র হাবিব মামানে বাসিরু বলে, ‘‘এখানে এসে সবকিছু দেখে আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি৷ কোনো এক সময় শহরেও বালু প্রবেশ করতে পারে৷ ফলে আমার ভয় করছে৷ এখানে শুধু বালু অবশিষ্ট রয়েছে৷ আর কোনো গাছপালা নেই৷ আসল মরুভূমি হয়ে উঠেছে৷ যদি এর প্রসার ঘটে এবং নদীর তীরে মানুষের কাছে পৌঁছে যায়, তাহলে খেলা শেষ৷''

শিক্ষার্থীদের উপর একদিনের এই ভ্রমণ গভীর প্রভাব ফেলেছে৷ ছুটির সময় তারা পরিবেশ সচেতনতা ক্যাম্পে গিয়ে বালু প্রতিরোধী বেড়া লাগাবে এবং বৃক্ষরোপণ করবে৷ মরুকরণ রুখতে তারা সব কিছু করতে প্রস্তুত৷

গেয়ারলিন্ড ফলমার/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ