নাটকীয় হত্যাকাণ্ডে ‘মৃত্যু' সত্ত্বেও একদিন পরে বহাল তবিয়েতে সংবাদ মাধ্যমের সামনে উপস্থিত হলেন রুশ সাংবাদিক৷ এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে৷
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের বিরোধী বলে পরিচিত ৪১ বছর বয়সি রুশ সাংবাদিক আর্কাডি বাবচেংকো ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে থাকেন৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানা যায়, তাঁকে নিজের ফ্ল্যাটেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে৷ তাঁর স্ত্রী রক্তাক্ত মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দিয়েছেন৷ ইউক্রেনের সরকারের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা ওইসিডি এই ‘হত্যাকাণ্ডের' কড়া সমালোচনা করেছিল৷
বুধবার ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবচেংকো উপস্থিত হন৷ তিনি বলেন, গোটা ঘটনা ছিল সাজানো নাটক৷ তবে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের খবরটি অবশ্যই সত্য৷ রাশিয়ার সেই হামলা থেকে তাঁকে বাঁচাতেই ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা এই নাটক সাজিয়েছিল৷ ফলে তিনি ঠিক সময়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন৷ এর জন্য তিনি ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন৷ বাবচেংকো গোটা ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন৷ বিশেষ করে নিজের স্ত্রী'র ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার জন্যও তিনি ক্ষমা চেয়েছেন৷ এসবিইউ দাবি করেছে যে, তারা বাবচেংকোসহ ইউক্রেনে ৩০ জন ব্যক্তির হত্যার ষড়যন্ত্রের খবর পেয়ে সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে অভিযান চালিয়েছিল৷
বাবচেংকোকে ঘিরে নাটকের প্রেক্ষাপটে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা নতুন এক মাত্রা পেলো৷ ২০১৪ সালে ইউক্রেনে রাশিয়া-সমর্থিত এক সরকারের পতনের পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে৷ তখন থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ বর্তমান সরকার ও ক্রেমলিনের মধ্যে সংঘাত চলে আসছে৷ বাবচেংকোর ঘটনার পর রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম তীব্র শ্লেষ প্রকাশ করে লিখেছে যে, ইউক্রেন প্রচারণার উদ্দেশ্যে গোটা ঘটনাটি সাজিয়েছে৷
পুটিনবিরোধী অনেক সাংবাদিককে গত কয়েক বছরে হত্যা করা হয়েছে৷ তাই বাবচেংকোর দাবি বিশ্বাসযোগ্য বলে অনেকে মনে করছেন৷ রুশ প্রশাসন অবশ্য বার বার এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷ বাবচেংকোকে ঘিরে ইউক্রেনের ভূমিকারও প্রবল সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ সাংবাদিকদের কিছু সংগঠনের অভিযোগ, এর ফলে সাংবাদিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং রুশ প্রশাসন প্রচারণার নতুন হাতিয়ার পেয়ে গেছে৷
‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স' সংগঠন ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার প্রবল সমালোচনা করেছে৷ সংগঠনের মহাসচিব বলেন, রাষ্ট্র তথ্য নিয়ে খেলা করলে বিষয়টি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়ে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
শীতল যুদ্ধ কি ফিরে আসছে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বার্লিন প্রাচীর পতনের সময় পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শীতল যুদ্ধ চলেছে৷ সিরিয়াসহ আরও কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও অ্যামেরিকার মধ্যে সংঘাত বেড়ে চলেছে৷
ছবি: AP
শীতল যুদ্ধের চরিত্র
শুধু দুটি পরাশক্তি নয়, পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত দুই শিবির যে কোনো সময়ে একে অপরের উপর হামলা চালাতে পারে৷ অথচ বাস্তবে সেরকম হামলা অথবা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে একটি কাঠামো সফলভাবে কাজ করেছে৷ ‘শান্তিপূর্ণ’ সেই সহাবস্থানে আঁচ পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Wieseler
উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘স্থিতিশীলতা
অ্যামেরিকার নেতৃত্বে সামরিক জোট ন্যাটো ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট আজকের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট স্থিতিশীল ছিল৷ রাতারাতি কোনো আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনাও ছিল অকল্পনীয়৷ এমনকি জোটের বাইরেও ওয়াশিংটন ও মস্কোপন্থি দেশগুলির অবস্থান সহজে বদলায়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শান্তির ‘অলীক’ প্রত্যাশা
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর রাশিয়া তথা পূর্ব ইউরোপে প্রায় সব ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তনের ফলে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বৈরি মনোভাবের চূড়ান্ত অবসান ঘটবে, এমন আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো প্রায় রাশিয়ার দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছে যায়৷ খোদ রাশিয়াকেও পশ্চিমা বিশ্বের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে৷
ছবি: Reuters/Axel Schmidt
‘দুর্বল রাশিয়া’
মিখাইল গর্বাচভ ও বরিস ইয়েলৎসিন শীর্ষ নেতা হিসেবে রাশিয়ার গৌরব খর্ব করে সে দেশের পতন তরান্বিত করেছেন, অনেক মানুষের মনে এমন অভিযোগ রয়েছে৷ ভ্লাদিমির পুটিন সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট সফল হয়েছেন বলে মনে করেন তাঁরা৷ রাশিয়ার স্বার্থ জোরদার করতে তিনি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে লাগাতার সংঘাতেও ভয় পান না, এমন ধারণা তাঁকে ক্রমশ আরও শক্তিশালী করে তুলছে৷
ছবি: picture alliance/dpa/AP/SZ Photo
স্বার্থের সংঘাত
ইউক্রেন, ইরান, সিরিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটের ক্ষেত্রে রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের স্বার্থের সংঘাত তীব্র হয়ে উঠছে৷ নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও রাশিয়া প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তার ঘোষিত স্বার্থ কায়েম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ প্রশাসনের প্রতি সমর্থন ও সাহায্য তারই অন্যতম দৃষ্টান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tass/M. Metzel
অস্থায়ী আনুগত্য
শীতল যুদ্ধের সময়ে দুই পরাশক্তির কোনো একটির প্রতি বাকি দেশগুলির স্থায়ী আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি৷ আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ তুরস্কের মতো ন্যাটো সদস্য দেশ জোটসঙ্গীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে৷ পূর্ব ইউরোপের কিছু ইইউ সদস্য দেশও পুটিন প্রশাসনের প্রতি বেশি ঝুঁকতে শুরু করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Saribas
সিরিয়াকে ঘিরে আবার বিশ্বযুদ্ধ?
আসাদ প্রশাসনের বিরুদ্ধে এর আগেও রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেভাবে রাশিয়াকে সতর্ক করে সিরিয়ার উপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছেন, তার ফলে দুই শক্তির মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ শেষ পর্যন্ত এমন সংঘাত এড়ানো সম্ভব হলেও এমন যুদ্ধ এড়ানোর কাঠামো দুর্বল হয়ে উঠেছে৷