ইউক্রেন সরকার ও বিদ্রোহীরা দু'সপ্তাহের মধ্যে ভারি অস্ত্র প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে৷ কিয়েভে হয়েছে ‘মর্যাদার পথে যাত্রা'৷ চলেছে বোমা হামলাও৷ সেনাবাহিনী জানিয়েছে, রুশপন্থিদের হামলা বন্ধ না হলে অস্ত্র প্রত্যাহার নয়৷
বিজ্ঞাপন
শনিবার কিয়েভের ‘ময়দান'-এ অভূতপূর্ব এক দৃ্শ্যের অবতারণা হয়৷ এক বছর আগে সেখানেই শুরু হয়েছিল ইউক্রেনের তখনকার প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের রুশপন্থি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ৷ সরকার বিক্ষোভ থামাতে সেনাবাহিনী নামালে তখন কমপক্ষে ১০০ জন বিক্ষোভকারী মারা যায়৷ ‘ময়দান বিপ্লব'-এর এক বছর পূর্তিতে শনিবার সেখানে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ৷ ‘মার্চ অফ ডিগনিটি', অর্থাৎ ইউক্রেনের ‘মর্যাদার পথে যাত্রা'-য় অংশ নিতে জার্মানি, পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, স্লোভাকিয়া ও জর্জিয়ার প্রেসিডেন্টরাও গিয়েছিলেন কিয়েভে৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পোরোশেঙ্কোর আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে হাতে হাত ধরে হেঁটেছেন তাঁরা৷ ‘মার্চ অফ ডিগনিটি'-তে অংশ নেয়ার পর জার্মান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক বলেন, ‘‘ইউক্রেনের মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে আমি এখানে এসেছি৷''
শনিবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং রুশপন্থি বিদ্রোহীদের মধ্যে ১৯১ জন বন্দি বিনিময়ও হয়েছে৷ দু'পক্ষ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দু'সপ্তাহের মধ্যে পূর্ব ইউক্রেন থেকে ভারি অস্ত্র সরিয়ে নেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি জানিয়ে সম্মতিপত্রে সাক্ষর করে৷ ইউক্রেন সরকারের মুখপাত্র পিওতর কানোনিক এ খবর নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোতে বিবৃতিও দেন৷ কিন্তু সোমবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানায়, পরিস্থিতি না বদলালে তারা এখনই অস্ত্র প্রত্যাহার শুরু করবে না৷ এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী বলেছে, রুশপন্থি বিদ্রোহীরা এখনো হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, এ অবস্থায় ভারি অস্ত্র সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়৷
যুদ্ধ অব্যাহত, স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের মাঝে ইউক্রেনবাসী
রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রকেট হামলা আর গোলাগুলিতে জর্জরিত ইউক্রেন৷ এর মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চলের ‘ফ্রন্ট’ বরাবর কয়েক মাস কাটিয়েছেন ফিলিপ ভোরিক৷ পেশায় ফটো সাংবাদিক৷ সাধারণ মানুষের কষ্ট তাঁর ক্যামেরার চোখ এড়ায়নি৷
ছবি: DW/F. Warwick
অকথ্য যন্ত্রণা
ইনি মারিউপোলের বাসিন্দা৷ একটি রকেট হামলায় তাঁর নয় তলার ফ্ল্যাট বাড়িটি গুড়িয়ে গেছে৷ সব হারিয়ে আজ তিনি দিশেহারা৷
ছবি: DW/F. Warwick
হঠাৎ করেই নিঃস্ব
৮৩ বছরের এই বৃদ্ধা নিজের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে৷ তবে বাড়ি বললে বোধহয় ভুল বলা হবে এখন, কারণ, রকেট হামলা তাঁর শেষ সম্বল এই বাসস্থানও কেড়ে নিয়েছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
জীবনের ঝুঁকি
ডেবাল্টসেভে শহরের একটা রাস্তা৷ মেয়েটি যে বাড়ির জানালা পরিষ্কার করছে ভোরের দিকে সেখানে একটি ‘মিসাইল’ আছড়ে পড়েছিল৷ আজকাল এখানে সারাদিনই গুলির আওয়াজ শোনা যায়৷
ছবি: DW/F. Warwick
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই
বোমা হামলা থেকে বাঁচতে আজ এখানে আশ্রয় নিয়েছে তাঁরা৷ সকাল সকাল বেসরকারি একটি সংস্থার কাছে থেকে জল, খাবার-দাবার আর রাতের জন্য কম্বলখানা জোগাড় করে আবার এখানেই ফিরতে হবে৷ মনে একটাই প্রশ্ন – এ যুদ্ধ শেষ হবে তো?
ছবি: DW/F. Warwick
ভয়ের পরে ভয় জমেছে
ক’দিন আগে মারিউপোলের এই পরিবারটিকে বাড়ির ‘বেসমেন্ট’-এ আশ্রয় নিতে হয়েছিল৷ সারাদিন ধরে রকেট হামলা চলছিল – ভয় তো পাওয়ারই কথা৷ পরে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়৷ বাড়ি ফেরার কথা শুনলে আজও তাদের বুক কাঁপে৷
ছবি: DW/F. Warwick
বিপদ সংকেত
ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট পাহারা দিচ্ছে পুলিশ৷ যে কোনো সময় আবারো রকেট আর বোমা হামলার আশঙ্কা যে এখনো আছে...!
ছবি: DW/F. Warwick
শুধু ধ্বংসস্তূপ
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের পোপাসনা অঞ্চল৷ সেখানকারই বাসিন্দা এই নারী৷ নিজের বসতবাড়িটি আজ ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নয়৷ অবশিষ্ট পাথর-নুড়ির মধ্যেই কী যে খুঁজছেন তিনি!
ছবি: DW/F. Warwick
কোনো রকমে বেঁচে থাকা
বোমা হামলায় জানলাটা গেছে৷ জানালা ভাঙা ঘরেই থাকতে হবে, কারণ যাওয়ার যে কোনো জায়গা নেই! কাঠ দিয়ে কোনো রকমে জানলাটা ঢাকার চেষ্টা চলছে৷ রাতে যে ভীষণ শীত পড়ে!
ছবি: DW/F. Warwick
খেটে খাওয়া প্রজন্ম
ছবির এই বাচ্চা থেলেটির নাম ডানিলো৷ বয়স ৯, বাড়ি পোপাসনায়৷ ওরও আজ মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই৷ বাবা-মা ওকে এমনটাই বলেছে৷
ছবি: DW/F. Warwick
সমব্যথীর হাত...
ফেটে যাওয়া গ্যাস পাইপ মেরামতের চেষ্টা করছেন পোপাসনার এক বাসিন্দা৷ মর্টার এবং রকেট হামলায় বিদ্ধস্ত গোটা এলাকাটা৷ সরকারের জরুরি উদ্ধার ও ত্রাণ কর্তৃপক্ষের কাজ শুরু করাটা খুব দুষ্কর ও সময় সাপেক্ষ, তাই স্থানীয়রাই বাড়িয়েছে সাহায্যের হাত৷
ছবি: DW/F. Warwick
স্বস্তিতে নেই কেউ
পোপাসনার একটা মানসিক হাসপাতাল৷ সেখানে রোগীদের তালিকা দেখছেন এক ডাক্তার৷ অনেক রোগী সেখানে৷ সবার মনেই আতঙ্ক৷ কিছুক্ষণ পর পরই যে শোনা যাচ্ছে রকেট, মর্টার আর বোমা বিস্ফোরণের শব্দ!
ছবি: DW/F. Warwick
11 ছবি1 | 11
রোববার ইউক্রেনের খারকিভ শহরে এক বোমা হামলায় দু'জন নিহত এবং অন্তত আট জন আহত হয়৷ হামলায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ রুশভাষী অধ্যুষিত আরো কয়েকটি শহরেও বোমা হামলার খবর পাওয়া গেছে৷
ওদিকে কিয়েভে ‘মার্চ অফ ডিগনিটি' হওয়ার একদিন আগে মস্কোয় ইউক্রেন প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর ভূমিকার প্রতিবাদে বিশাল এক সমাবেশ হয়৷ মস্কোর রেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ অংশ নেয়৷ সমাবেশে অংশ নেয়া বক্তারা মনে করেন, এক বছর আগে ইউক্রেনের ময়দান স্কয়ারে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তার মূল কথাই হলো রুশ-বিরোধীতা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো তাতে মদদ জোগাচ্ছে৷