ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান তো বটেই তার বাইরেও ইউরোপীয় দেশগুলি এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। মোট ৪৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান পৌঁছেছেন ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে মলডোভার বিলাসবহুল মিমি ওয়াইনারি প্রাসাদে।
সম্মেলনের প্রথম দিনেই উঠে এসেছে ইউক্রেনের প্রসঙ্গ। বুধবার রাতেও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে প্রবল আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। একের পর এক দূরপাল্লার মিসাইল, ড্রোন এবং বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও ট্রেনে করে মলডোভার সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এদিনের বক্তৃতায় তিনি ফের অস্ত্র সাহায্যের কথা বলেছেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়া যেদিন চাইবে, সেদিনই যুদ্ধ থেমে যাবে। কিন্তু রাশিয়া তেমন কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং রাজধানী-সহ সর্বত্র একের পর এক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ইউক্রেনের আরো অস্ত্র প্রয়োজন। ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলির কাছে তিনি আরো বেশি অস্ত্রের দাবি করেছেন।
যখন সাবওয়েই তাদের ঘর, স্কুল এবং বিনোদনকেন্দ্র
ইউক্রেন যুদ্ধ বদলে দিয়েছে তাদের জীবন৷ সব সময় যেন প্রাণ হাতে নিয়ে বাঁচতে হয় তাদের৷ যেখানে যখন রাশিয়ার হামলা সেখানে তখনই হতে পারে জীবনাবসান৷ তবুও কাটছে জীবন৷ সাবওয়েতেও চলছে বসবাস, লেখাপড়া এবং বিনোদন৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
আকস্মিক হামলা
রাশিয়ার মিসাইল বা বোমা হামলার বিভীষিকা নেমে আসে যখন তখন৷ তাই ইউক্রেনের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে যাবার প্রস্তুতি রাখতে হয় সব সময়৷ রাজধানী কিয়েভেও জীবন চলছে একই নিয়মে৷
ছবি: Valentyn Ogirenko/REUTERS
এসকেলেটর যেন বিশ্রামাগার
প্রাণভয়ে মেট্রোস্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তারা৷ তখন এসকেলেটরের সিঁড়িই তাদের আশ্রয়স্থল, সেখানে কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা৷ মিসাইল বা বোমা হামলার বিকট শব্দ না থামা পর্যন্ত কারো মেট্রো স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার উপায় নেই৷ গত ২৯ মে-র তোলা ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
শত শত মানুষের ভিড়
এই ছবিটিও গত ২৯ মে-র৷ কিয়েভে তখন আবার শুরু হয়েছে রাশিয়ার বিমান হামলা৷ মেট্রো স্টেশনটিতে তাই শত শত মানুষের ভিড়৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
সৈনিকের অসহায়ত্ব
হঠাৎ আকাশ থেকে বোমা হামলা শুরু হলে সৈন্যদেরও বিশেষ কিছু করার থাকে না৷ তাদেরও তখন ছুটতে হয় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে৷ ২৯ মে-র ছবিটিতে ধরা পড়েছে এক মেট্রোস্টেশনে ইউক্রেনের দুই সেনা সদস্যের অসহায়ত্ব৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
বাবা-মেয়ে
এক সেনাসদস্য মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মেট্রোস্টেশনে৷ বাবার কাছে বসে মেয়েটি মন দিয়েছে ট্যাবে৷ বাবা নিজের টুপি পরিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে৷ গত ৯ মার্চের ছবি৷
ছবি: Alina Smutko/REUTERS
অস্থায়ী স্কুল
রাশিয়ার হামলা শুরু হলে কখনো কখনো মেট্রোস্টেশন যে অস্থায়ী স্কুলের রূপ নেয়, ওপরের ছবিটি তার প্রমাণ৷ স্কুলের শিক্ষার্থীদের সেখানেই ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
সাবওয়েতে কনসার্ট!
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে একটা সময় পর্যন্ত মেট্রো রেল স্টেশনে আশ্রয় নেয়া মানুষদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটতো মহাতঙ্কে৷ তবে ধীরে ধীরে যুদ্ধের এই নির্মম বাস্তবতা মানতে শুরু করেন তারা৷ বিশেষ করে এক বছর আগে রক ব্যান্ড ইউ-টু যখন সেখানে এসে কনসার্ট করলো, ইউক্রেনবাসীরাও যেন বুঝতে শুরু করলেন যুদ্ধপরিস্থিতিতে সব সময় সব পরিস্থিতেই মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের৷ ওপরের ছবিতে নেচে নেচে গাইছেন ইউ-টু তারকা বোনো৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
শিল্পী-সেনার দ্বৈত সংগীত
ইউ-টু তারকা বোনোর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গাইছেন ইউক্রেনের এক সেনা সদস্য৷ কিয়েভের এক মেট্রোস্টেশনের এই কনসার্টের ছবিটি ২০২২ সালের ৮ মে তোলা৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
মগ্ন শ্রোতা
পল ডেভিড হিউসন, অর্থাৎ ইউ-টু রক ব্যান্ডের ভোকালিস্ট বোনোর গান মন দিয়ে শুনছেন কিয়েভের কয়েক শ মানুষ৷ গত বছরের ৮ মে-র ছবি৷
ছবি: VALENTYN OGIRENKO/REUTERS
সাবওয়েতে ভাষাশিক্ষা
বিমান হামলা সেই কখন শুরু হয়েছে, থামার কোনো লক্ষণই নেই৷ তাই এক শিক্ষক মেট্রোরেলেই শুরু করে দিয়েছেন ভাষা শেখানোর ক্লাস৷ গত ৩ মে-র ছবি৷
ছবি: Viacheslav Ratynskyi/REUTERS
10 ছবি1 | 10
একইসঙ্গে এদিন জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তার দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোয় যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তুত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগেই ইউক্রেনকে মেম্বারশিপ দেওয়ার আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু ন্যাটোয় শেষপর্যন্ত ইউক্রেন জায়গা করে নিতে পারবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এদিনের আলোচনায় মলডোভাকেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মলডোভা এবিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ইউক্রেন ও রাশিয়ার বন্দি বিনিময় অব্যাহত
এবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর বাখমুতে বন্দি বিনিময় করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন৷ ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা তাদের ১০৬ সেনা সদস্যকে ছাড়িয়ে এনেছে৷ রাশিয়া বলছে, বাখমুত এখনো তাদের দখলে৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
বন্দি বিনিময়
ইউক্রেনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর দুই দেশের যুদ্ধে অনেক সৈন্য দু’পক্ষের হাতে ধরা পড়েছে৷ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বন্দি বিনিময় হয়েছে৷ সবশেষ হল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের শহর বাখমুতে৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
বাখমুত
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বাখমুত হল ডোনেৎস্ক ওব্লাস্ট অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর৷ এটি বাখমুতকা নদীর তীরে অবস্থিত৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
ইউক্রেনের ১০৬
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দপ্তর থেকে বলা হয়, বাখমুত থেকে ১০৬ জন সেনা সদস্য ফিরে এসেছেন৷ তাদের আটজন অফিসার৷ বন্দি বিনিময়ের কথা রাশিয়া স্বীকার করলেও কতজন তারা ফেরত পেয়েছে তা পরিষ্কার করেনি ক্রেমলিন৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
রাশিয়ার দখলে
এদিকে, ক্রেমলিন বলছে, বন্দি বিনিময় হলেও বাখমুত এখনো তাদের দখলে রয়েছে৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
বন্দি বিনিময় অব্যাহত
ইউক্রেনের ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর এ পর্যন্ত দুই হাজার ৪৩০ জন বন্দি ফেরত পেয়েছে তারা৷ এর মধ্যে ১৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷
ছবি: Yevhenii Zavhorodnii/REUTERS
5 ছবি1 | 5
রাশিয়া এবং বেলারুশ ছাড়া ইউরোপের প্রায় সব দেশই এদিনের বৈঠকে যোগ দিয়েছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, ''রাশিয়া এখানে নেই কারণ, রাশিয়া নিজেই নিজের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা যুদ্ধ শুরু করেছে।'' বস্তুত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোটা ইউরোপকে সংঘবদ্ধ করার ক্ষেত্রে এই সম্মেলন তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বেলারুশ রাশিয়ার বন্ধু, তাই তাদেরকেও এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টও ভ্লাদিমির পুটিনের পরম বন্ধু। কিন্তু তাকে এই সম্মেলনে যোগ দিতে দেখা গেছে। যদিও রেড কার্পেটে তার পাশে আর কেউ ছিলেন না।
প্রথম দিনের আলোচনা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এই সম্মেলনে যে কোনো সিদ্ধান্ত হবে না, তা আগেই জানিয়েছিলেন জার্মানি এবং ফ্রান্সের রাষ্ট্রপ্রধান। তাদের বক্তব্য, এই সম্মেলনে সকলের অভিমত শোনা হবে। সকলের সঙ্গে আলোচনার পরিসর তৈরি করা হবে। এখানে যা আলোচনা হবে, পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তা সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হবে। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ইউরোপের অধিকাংশ দেশগুলিকে একটি ছাতার তলায় আনা। এদিনের বৈঠকে ফের ইউরোপীয় ইউনিয়নে আরো দেশকে ঢোকানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।