1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যভারত

মশার রাজ্যে স্বাগতম!

১২ মে ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গুর প্রকোপ উত্তরোত্তর বাড়ছে৷ কিন্তু তাতে রাজনীতির কী বা আসে যায়!

Indien Tehatta | Netz schützt eine Frau vor Malariaübertragenden Mücken
ফাইল ফটো৷ছবি: Soumyabrata Roy/NurPhoto/picture alliance

এই কূলে মশা আর ওই কূলে কামান, মাঝখানে ডেঙ্গু বয়ে চলে যায়৷ 'এগিয়ে বাংলা'র বদলে এই যদি হতো পশ্চিমবঙ্গের ব্র্যান্ড ট্যাগলাইন, মন্দ হতো না৷ শীত নেই গ্রীষ্ম নেই টানা ভ্যানের পিছনে শ্যালো পাম্পের মতো দেখতে কামান বসিয়ে পুরসভার ভ্যান সেই যে প্রাগৈতিহাসিক কালে কলকেত্তার রাস্তা ধরে চলতে শুরু করেছিল, অনন্ত যাত্রা চলছে তো চলছেই৷ আর সেই যাত্রাপথে গজনির সুলতানের মতো এডিস ইজিপ্টাই একেকবার হানা দেয়, আর রাজ্যজুড়ে ডেঙ্গুর ঝড় ওঠে৷ হাসপাতাল বেড শূন্য হয়, ঘরে ঘরে ত্রাস, প্রশাসনের টিকিতে আগুন৷ কিন্তু কাজের কাজ হয় না৷ ভারত অন্তরিক্ষ-যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করলেও ডেঙ্গুর মশাকে হারানোর অস্ত্র এখনো খুঁজে বার করতে পারেনি৷

বস্তুত, সেই অর্থে ডেঙ্গুর প্রতিষেধক গোটা বিশ্বেই এখনো আবিষ্কৃত হয়নি৷ এ কেবল পশ্চিমবঙ্গের একার গাফিলতি নয়৷ কিন্তু ডেঙ্গু কমানোর বা প্রতিরোধের কিছু সুচিন্তিত পরিকল্পনা বিশ্বের বহু দেশ এবং ভারতের বেশ কিছু রাজ্য নিয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রতিবছরই বলে নেবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঠিক নিয়ে উঠতে পারে না৷ আর সে কারণেই ২০২২ সালের তথ্য বলছে, দেশের মধ্যে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ায় শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ৷ এক বছরে এরাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭ হাজার ২৭১জন৷ আর ম্যালেরিয়ায় ৪০ হাজার ৫৬৩জন৷ অর্থাৎ, সব মিলিয়ে সংখ্যাটি এক লাখেরও বেশি৷

দ্বিতীয় স্থানে উত্তরপ্রদেশ৷ সেখানে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার৷ মুশকিল হলো, এই সংখ্যারও আসলে কোনো ভিত্তি নেই৷ প্রতিটি রাজ্যই সংখ্যায় কারচুপি করে৷ সংখ্যাতত্ত্ব বরাবরই কারচুপির বিষয়৷ কেন্দ্র বরাবর অভিযোগ করে, পশ্চিমবঙ্গ ডেঙ্গুর ঠিক তথ্য এবং পরিসংখ্যান কেন্দ্রকে দেয় না৷ পশ্চিমবঙ্গের অভিযোগ, কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে বেশি হাইলাইট করে৷ উত্তরপ্রদেশও যে ঠিক পরিসংখ্যান দেয়, এমন ভাবার কারণ নেই৷ ফলে ধরেই নেওয়া যায়, যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, আসল সংখ্যা তার চেয়ে অনেকটাই বেশি৷

কিছু বছর আগে রাজধানী দিল্লিও ডেঙ্গুর উৎপাতে নাজেহাল ছিল৷ কিন্তু দিল্লির প্রশাসন গত কয়েকবছরে বিষয়টি অনেকটাই আয়ত্তের মধ্যে আনতে পেরেছে৷ অকারণ কামান না দেগে দিল্লি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিয়েছে৷ শীত নেই গ্রীষ্ম নেই দিল্লি পুরসভার কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে জল জমে আছে কি না, পরীক্ষা করেন৷ গাছের টবে জল জমলেও তারা তা পরিষ্কার করাতে বাধ্য করেন৷ নিয়মিত ট্যাংকের পরীক্ষা হয়৷ আবর্জনার স্তূপে ভাঙা বালতি, হাঁড়ি, গামলায় জল জমছে কি না, নজর রাখা হয়৷ শুধু এইটুকু নজরদারিতেই অনেকটা লাভ হয়েছে দিল্লির৷ ডেঙ্গুর পরিমাণ চোখে পড়ার মতো কমেছে৷

পশ্চিমবঙ্গ দিল্লি নয়৷ আয়তনে, জলবায়ুগতভাবে পশ্চিমবঙ্গ অনেক আলাদা৷ একেকটি জেলার এক এক রকম আবহাওয়া, পরিকাঠামো৷ কিন্তু দিল্লির প্রশাসন যে কাজটি করেছে, পশ্চিমবঙ্গ কি তা করতে পারে না? অবশ্যই পারে৷ বাড়ি বাড়ি ঘুরে জল জমছে কি না, তা দেখা মোটেই খুব কঠিন এবং পরিশ্রমের কাজ নয়৷ আবর্জনার স্তূপ পরিষ্কার রাখা প্রশাসনের ন্যূনতম দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ কিন্তু কে করবে সে কাজ?

পশ্চিমবঙ্গে আসলে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা কেবল রাজনীতি চলে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রবিঠাকুরের জন্মদিন, অসুখ-বিসুখ-মহামারি থেকে ফুটবল অথবা আইপিএল-- সবকিছুই পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির বিষয়৷ ফলে ডেঙ্গুতেও কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক জনসভায় বলে ওঠেন-- ডেঙ্গুর মশা বাংলাদেশ থেকে আসছে৷ কথার ভাব এমন, যেন বাংলাদেশ তিস্তার বদলা নিতে ভিসা-পাসপোর্ট দিয়ে মশাকে সীমান্ত পার করাচ্ছে৷

কথায় বলে নেপোয় মারে দই৷ পশ্চিমবঙ্গের এই প্রবল রাজনৈতিক বাকবিতণ্ডার সুযোগে বছর বছর ডেঙ্গু সেই কাজটিই করে যাচ্ছে৷ শক-বর্গি-হুনদের মতো ডেঙ্গুর মশাও বছর বছর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে৷ রাজ্যের অসহায় মানুষের সেই আক্রমণ দেখা ছাড়া আর কোনো গতি নেই৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি একটাই বিষয় বোঝে-- সংখ্যা৷ তা সে মৃত্যুর সংখ্যা হোক অথবা জীবনের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ