1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মশায় নাকাল ঢাকার নাগরিক

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
১২ মার্চ ২০২১

মশার যন্ত্রণায় নাকাল রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা৷ উত্তর-দক্ষিণের দুই মেয়র মাঠে নেমে পড়েছেন৷ কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না৷ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না মশা৷

ঢাকার গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়কের গুদারাঘাটে লেকের বৃহস্পতিবারের ছবিছবি: Mortuza Rashed/DW

কেমন আছে নগরবাসী? এ প্রশ্ন সামনে রেখে আজকাল আর কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই৷ অনলাইনভিত্তিক সমাজমাধ্যমে চোখ রাখলেই অনেকটা আঁচ করা যায় পরিস্থিতি৷ সম্প্রতি ঢাকা শহরে ফেসবুকে মশার যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরছেন অনেকেই৷ নগরের নিকেতনের বাসিন্দা লেখক-গবেষক আফসান চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘নিকেতনে ঘোষণা দিয়ে মশার ওষুধ দেয়া হলো, অনেক বেশি ওষুধ৷ মশা আগের মতোই৷ যে চিনিতে মিষ্টি নাই সেটা এক চামচ আর এক মণ একই৷’’

নগরপিতারা কামান দাগিয়ে মশা মারবেন- এ আশা নিয়ে নগরবাসী একেবারে বসে যে থাকে, তা কিন্তু নয়৷ ঘরের মশা তাড়াতে কেউ ব্যবহার করছে কয়েল, কেউবা অ্যারোসোল৷ এসব সহনীয় মাত্রার কীটনাশকে তৈরি হলেও অনেকেই এগুলোর গন্ধ সহ্য করতে পারে না৷ শুরু হয়ে যায় হাঁচি-কাঁশি৷ আবার বাংলাদেশে যে অনেক ব্র্যান্ডই রাসায়নিক উপকরণ ব্যবহারের মাত্রা সীমা মানছে না, সেটাও উঠে এসেছে অনেক সময়৷

ঘরে ঘরে মশক নিধনে বর্তমানে কয়েল-অ্যারোসোলের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় রিচার্জেবল ব্যাট৷ বাসায় বসে মশা মারার ব্যাট চালাতেই ব্যস্ত থাকছে কেউ কেউ৷ মশক নিধনের সবরকম উপকরণের চাহিদা যে বেড়েছে, তা জানা যায় রাজধানীর বাজার ঘুরে৷ মিরপুরের বাসিন্দা ডেইজি আখতার জানালেন, তার বাসায় প্রতিদিন অ্যারোসোল দিতে হচ্ছে৷ সন্ধ্যা হলে জ্বালাতে হয় কয়েল৷ মশা মারার ব্যাটও রেখেছেন ঘরে৷ তার অভিযোগ, আগে একটা অ্যারোসোলেই মাস চলে যেতো৷ এখন প্রতি সপ্তাহে কিনতে হচ্ছে৷

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বৃষ্টির পূর্বেই অকেজো পাত্র সরাতে হবে: ড. কবিরুল বাশার

This browser does not support the audio element.

চলতি বছর ঢাকা শহরেমশা বেশি- এটা জানা গেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে৷ তারা জানিয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার মশার ঘনত্ব চার গুণ বেশি৷ তবে এগুলো এডিস মশা নয়৷ শুধুই কিউলেক্স মশা৷ এ থেকে হতে পারে ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ৷ তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ঢাকা শহরে যে প্রজাতির কিউলেক্স আছে, সেগুলো থেকে ফাইলেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম৷ এ তথ্য এসেছে গবেষণা থেকেই৷

কিন্তু মশার কামড়ের চুলকানি কম যন্ত্রণার নয়৷ কানের কাছে ঘ্যানঘ্যানও অসহনীয়৷ আর এডিস মশা যদি চলে আসে, তবে তো ডেঙ্গু জ্বরের ভয়ে থাকতে হবে নগরবাসীকে৷ করোনাকালে প্রকোপ কম থাকলেও তার আগের বছর কিন্তু এডিসের যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে৷ ২০১৯ সালে শুধু ঢাকা শহরেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ৷ এরমধ্যে মারা যায় শতাধিক৷ সেই সময়ে পরিবারের সদস্য আক্রান্ত হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-কে আইনি নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম৷ তিনি অবশ্য জানালেন, এই নোটিশের মূল লক্ষ্য ছিল মশা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো৷

ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ নগর প্রশাসনের তৎপরতা থাকলেও মশা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না৷ এ বিষয়ে তানজিম আল ইসলাম বলেন, শুধু ঋতুভিত্তিক কাজ করলে হবে না৷ মশক নিধন কার্যক্রমে সারা বছর ধারাবাহিক প্রক্রিয়া থাকতে হবে৷

মশক নিধন ধারাবাহিক প্রক্রিয়া রাখতে হবে: তানজিম আল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে ঢাকা শহরে এবার কিউলেক্স মশা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টিও একটি কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ বৃষ্টি হলেই এ জাতীয় মশা কমে আসবে৷ তার আগে পর্যন্ত নর্দমা সচল রাখতে হবে৷ ডোবানালা রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন৷ কারণ, নোংরা ও আবদ্ধ পানি কিউলেক্স মশা প্রজননের প্রধান স্থান৷ তাই পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে মেয়র-কাউন্সিলরদের নজরদারি অনেক বেশি প্রয়োজন৷ তারা অবশ্য নগরবাসীকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ কখনো কখনো নাগরিক দায়িত্বশীলতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন কঠোর কায়দায়৷ সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম রাস্তায় পড়ে থাকা বাসাবাড়ির বর্জ্য সংশ্লিষ্ট ভবনে ফেরত পাঠান৷ তারপর বলেন, যারা রাস্তায় ময়লা ফেলে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, উত্তর সিটি সেই ময়লা তাদের বাড়িতে ফেলে আসবে৷

নগর পরিচ্ছন্ন হলে, বৃষ্টি এলে কমে আসবে কিউলেক্স মশা৷ কিন্তু সেই সময়ে আবার ডেঙ্গুজ্বরের বাহক এডিস মশার ঝুঁকি বেড়ে যায়৷ কারণ, জমে থাকা পরিচ্ছন্ন পানি হচ্ছে এডিস মশার প্রজননস্থল৷ সেই মৌসুম থেকে খুব বেশি দূরে নেই ঢাকা শহর৷ তাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে প্রস্তুতি নিতে হবে এখনি৷ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এডিস মশা৷ এর উপায় জানিয়ে দিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার৷ তার মতে, এডিস মশা জন্মায় পাত্রে জমে থাকা পানিতে৷ এই মশা নিয়ন্ত্রনে বৃষ্টির পূর্বেই অকেজো পাত্র সরানোর তাগিদ দিলেন তিনি৷

তায়েব মিল্লাত হোসেন সাংবাদিক
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ