মশা মারতে কামান নয়, বরং এক ভিন্ন উপায় নিয়ে হাজির হয়েছেন আফ্রিকার এক রসায়নবিদ৷ ম্যালেরিয়া প্রতিরোধক সাবান তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
সন্ধ্যার সময় শিকারের খোঁজে বের হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী পোকা৷ অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী৷ প্রতিবছর প্রায় দশ লাখ লোক এই রোগে মারা যায়৷ মশা এবং এই রোগ প্রতিরোধের অভিনব এক উপায় বের করেছেন এক তরুণ রসায়নবিদ৷ ২০২০ সালের মধ্যে এক লাখ জীবন বাঁচাতে চান তিনি৷ তাঁর নাম জেরার নিয়নডিকো৷
এই রসায়নবিদ বলেন, ‘‘আফ্রিকায় দশকের পর দশক ধরে মানুষ ম্যালেরিয়ার মারা যাচ্ছে৷ এই রোগ অনেক সমস্যার জন্য দায়ী৷ এই সমস্যার সমাধান বের করতে আফ্রিকানদের কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ৷''
তবে এটা সহজ কাজ নয়৷ ম্যালেরিয়াবিরোধী কার্যক্রমে প্রতিবছর দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো বিনিয়োগ করা হয়৷ কিন্তু এই রোগ পুরোপুরি নির্মুলের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে৷ অনেক চেষ্টা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং অকার্যকর, বলেন জেরার নিয়নডিকো৷ তিনি অবশ্য এই চেষ্টা ভিন্নভাবে করতে চান – এক সহজ এবং কার্যকর অলৌকিক অস্ত্র ব্যবহার করে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাবান নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কেননা এটা এমন একটি পণ্য যা ঝুঁকি থাকা মানুষদের প্রতিদিনের জীবনে সহজেই সন্নিবেশ করা যায়৷ আফ্রিকার ৯৫ শতাংশ বাড়িতে সাবান ব্যবহার হয়, এমনকি দরিদ্রতম পরিবারেও৷''
এক কামড়ে হতে পারে মৃত্যু
ভারত-বাংলাদেশে মশা, মশার কামড় অথবা ম্যালেরিয়া নতুন কিছু নয়৷ আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আফ্রিকায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে মারা যায় এক জন শিশু৷ অথচ এ রোগ প্রতিরোধে আজও কোনো টিকা বের হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
মশার আক্রমণ
আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণীর নাম এনোফিলিস মশা৷ লম্বায় ছয় মিলিমিটার এই মশা ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী৷ প্রতি বছর সারা বিশ্বের প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এ রোগে মারা যায়৷
ছবি: imago/blickwinkel
বৃত্তাকারে ঘোরা
হলুদগুলো জীবাণু৷ আর নীলগুলো জীবাণুর চলার পথ৷ গবেষকরা কতগুলো জীবাণুকে তরলপূর্ণ একটি গ্লাসে ছেড়ে দিয়েছেন৷ জীবাণুগুলো বাঁকানো বলে তারা একটি বৃত্তের মধ্যে ঘুরছে৷ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে তারা বৃত্ত পূরণ করতে পারে৷
ছবি: Colourbox
কামড় খাওয়ার ১২ দিন পর মৃত্যু
মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ঢোকার পর সেটা কিছুদিন যকৃতে বাসা বাঁধে৷ কিন্তু যার শরীরে ঢোকে সে টের পায় না৷ যকৃতে গিয়ে জীবাণুগুলো রক্তকোষকে আক্রমণ করে শরীরকে অসুস্থ করে ফেলে৷
ছবি: AP
রক্তধারায় জীবাণু
শরীরে ঢোকার এক থেকে তিনদিনের মধ্যে জীবাণুগুলো রক্তকোষ ভেঙে ফেলে৷ ফলে জ্বর হয়৷ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Ordonez
জীবন রক্ষাকারী
ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায় মশার কামড় না খাওয়া৷ ক্রিম ও স্প্রে ব্যবহার এবং মশারি খাটিয়ে ঘুমানো এক্ষেত্রে ভালো ফল দিতে পারে৷
ছবি: DW/A.Bacha
দ্বিগুণ সুরক্ষা
গবেষকরা বিশেষ ধরণের মশারি তৈরি করেছেন যার সুতায় কীটনাশক লাগানো আছে৷ ফলে মশা মশারির উপর বসলেই মারা যাবে৷
ছবি: Kerry Skyring
কঠোর পদক্ষেপ
মশা দমনে মুম্বইয়ে কীটনাশক ছড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু মশা মারতে এটা কার্যকর হলেও স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ যেখানে কীটনাশক ছিটানো হয় সেখানকার খাদ্য চক্রের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে৷
ছবি: Reuters
দ্রুত রোগ নির্ণয়
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ম্যালেরিয়া শনাক্ত করা যায়৷ আফ্রিকার দেশ মালিতে একটি ছেলের শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণু ঢুকেছে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সময়ের সঙ্গে পাল্লা
ওষুধের মাধ্যমে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ধ্বংস করা যায়৷ কিন্তু সময় যত বাড়ছে জীবাণুগুলো ততই ওষুধের বিরুদ্ধে জয়ী হচ্ছে৷ অর্থাৎ ওষুধের কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে৷ যেমন ‘ক্লোরোকুইন’ নামের একটি ওষুধ বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের মানুষের দেহে আর কার্যকর হচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন?
ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এখনো কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তবে গবেষকরা কাজ করে যাচ্ছেন৷ তারা খুব শীঘ্রই এতে সফলতা আশা করছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images/J. Cabezas
10 ছবি1 | 10
ফাসো সাবান শুধু পরিষ্কারের জন্যই নয়, এটির গন্ধও মশাকে দূরে সরিয়ে দেয়৷ প্রতিরোধের এই পন্থা তৈরিতে যে তেল ব্যবহার করা হয়েছে তা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ সম্ভব৷ রাতের বেলা মশারি মানুষকে মশা থেকে দূরে রাখলেও দিনে এবং সন্ধ্যার সময়, বিশেষ করে যখন মশারা আক্রমণাত্মক, তখন মানুষকে রক্ষার উপায় তেমন নেই৷ নির্মাণ শ্রমিক লুই নাতামা এই বিষয়ে বলেন, ‘‘আমি একজন নির্মাণ শ্রমিক এবং কাজের সময় তেমন প্রতিরোধক থাকে না৷ ফলে প্রায়ই মশা কামড়ে দেয় যা আমাকে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়৷''
মশা প্রতিরোধক ক্রিম এবং স্প্রেগুলো দামি এবং অধিকাংশক্ষেত্রেই তেমন কার্যকর নয়৷ আর ফাসো সাবানের দাম সাধারণ সাবানের চেয়ে বেশি হবে না এবং দিনের বেলায় প্রয়োজনের সময় সেটি সুরক্ষা দেবে৷ নিয়নডিকোর কথায়, ‘‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ছয় ঘণ্টা নিরাপত্তা দেয়া৷ আর তা সংক্রমণের ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে আনবে৷''
সময় যত কম নষ্ট হবে, ততই মঙ্গল – কেননা প্রতি দুই মিনিটে একটি শিশু ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছে৷