জার্মানিতে – বিশেষ করে রাইন নদের উপত্যকায় – মশা নিয়ে একটা সমস্যা আছে৷ জার্মান মশা নিয়ন্ত্রণ সমিতি কেএবিএস এবার ড্রোন থেকে কীটনাশক স্প্রে করে মশক নিধন করতে চান৷
বিজ্ঞাপন
গত অক্টোবর মাসে ড্রোনটি সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে৷ ১২ কিলোগ্রাম ওজনের ড্রোনটি থেকে যে ‘বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল এজেন্ট' ছড়ানো হবে, তা মশার কীট বিনষ্ট করার ক্ষমতা রাখে৷ ড্রোনটি আগামী বসন্তে প্রথম ব্যবহার করা হবে, বলে জানিয়েছেন কেএবিএস-এর বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক নরব্যার্ট বেকার৷
স্পায়ার শহরে জার্মান মশা নিয়ন্ত্রণ সমিতির মুখ্য কার্যালয়ে বেকার জার্মান সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে বলেন যে, ইউরোপে পুকুর বা খাল-বিলে মশার ডিম নষ্ট করার জন্য ড্রোনের ব্যবহার হবে এই প্রথম৷ প্রথমে স্বল্প কয়েকটি এলাকায় এভাবে কীটনাশক ছড়ানো হবে, বলে তিনি জানান৷
এ পর্যন্ত কেএবিএস তাদের বাৎসরিক অভিযানে রাইন নদের প্রশাখা ও খালবিলে ‘স্প্রে গান' দিয়ে কীটনাশক ছড়িয়েছে; নয়ত হেলিকপ্টার থেকে বড় আকারে বেশি পরিমাণে কীটনাশক ছিটোনো হয়েছে৷
বেকার বলেন, ‘‘ড্রোন হেলিকপ্টারের বিকল্প হতে পারে না, কিন্তু আমরা হেলিকপ্টারের কাজ কমাতে পারি – যেখানে বর্ষার জল জমে, এমন সব ছোট ছোট জায়গায় ড্রোন থেকে কীটনাশক ছিটোতে পারি৷ এবং তা-তে কাজও হয়েছে৷''
রোগের নাম ‘চিকুনগুনিয়া জ্বর’
ডেঙ্গু জ্বরের কথা আমরা কমবেশি সবাই জানি৷ চিকুনগুনিয়া জ্বর অনেকটা তার মতোই৷ নতুন এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কারণ আফ্রিকার এই জ্বর ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মশাবাহিত রোগ
এডিস অ্যালবোপিকটাস ও এডিস এজিপটি নামক মশার কামড়ে চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে থাকে৷ তবে কেবল নারী এডিস মশাই এই জ্বরের জন্য দায়ী৷
ছবি: picture-alliance/AP
লক্ষণ
মশার কামড় খাওয়ার পাঁচ দিন পর থেকে শরীরে এই রোগের লক্ষণ ফুটে ওঠে৷ এক্ষেত্রে মাথাব্যথা, সর্দি, বমি বমি ভাব, হাত ও পায়ের গিঁটে এবং আঙুলের গিঁটে ব্যথা, ফোসকা পড়া ও শরীর বেঁকে যেতে পারে৷ জ্বর উঠতে পারে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত৷ থাকতে পারে ২ থেকে ১২ দিন৷ তবে সাধারণত ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত জ্বর থাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেঙ্গু নয়
অনেকে চিকুনগুনিয়া জ্বরকে ডেঙ্গু জ্বর মনে করতে পারেন৷ কারণ এদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে৷ তবে ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার মূল পার্থক্য হলো, এই জ্বরে হাড়ের জোড়াগুলো ফুলে যায়, ডেঙ্গু জ্বরে যেটা হয় না৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিকিৎসা
রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে রোগটি শনাক্ত করা যায়৷ এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি৷ তাই চিকুনগুনিয়া সারাতে সাধারণ জ্বরের চিকিত্সা নিলেই চলবে৷ বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার ও প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে৷ তবে চিকুনগুনিয়া জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশার প্রজনন বন্ধ করতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DW
ঢাকায় চিকুনগুনিয়া
জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআর গত বছর এই রোগের উপর একটি সমীক্ষা চালায়৷ এ সময় ঢাকার মোট ৬০১ জনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ এদের মধ্যে ২০৭ জনই চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় জানা যায়৷ সে হিসেবে ঢাকার প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইতিহাস
১৯৫২-৫৩ সালে আফ্রিকার তাঞ্জানিয়ায় প্রথম এই রোগের আবির্ভাব ঘটে৷ বাংলাদেশে প্রথম এ রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং ঢাকার দোহার ও কেরানীগঞ্জে৷ পরে ২০১১ সালের নভেম্বরে নতুন করে পাবনার সাঁথিয়ায় আবারও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷ আর ঢাকায় প্রথম দেখা দেয় ২০১৩ সালের আগস্টে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
6 ছবি1 | 6
কেএবিএস ড্রোনটি টেস্ট করার সময় সেটিকে একটি বালতির উপর দিয়ে উড়িয়ে ঠিক সময়ে ড্রোনের নীচের দিকে ঝোলানো ঝুড়ির দরজা খুলে দিয়ে সেই ঝুড়ি থেকে কীটনাশক ছড়িয়েছে৷ ড্রোনটির ঝুড়িতে পাঁচ কিলোগ্রাম কীটনাশক ধরে৷
পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, ড্রোনটিকে দশ মিটার উচ্চতায় ঘণ্টায় সাত কিলোমিটার গতিতে ওড়ালে মোট পাঁচ মিটার জমি – বা পানির উপর কীটনাশক ছড়ানো যায়৷ মশা মারার পক্ষে তাই যথেষ্ট, বলে বেকার জানান৷
ড্রোন ওড়ানোর জন্য জার্মান এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বেকার বলেন, ‘‘আমরা এখন যেভাবে ড্রোন ব্যবহার করছি, আমাদের তা করার অনুমতি আছে৷ ড্রোনটা অপারেটরের দৃষ্টির মধ্যে থাকা চাই আর ড্রোনের ওজন একটা নির্দিষ্ট ওজনের বেশি হলে চলবে না৷''