ক্লাবের নতুন জার্সির এক কোণে আলোচিত এক মসজিদের ছবি পছন্দ না হওয়ায় ক্লাবের সদস্য না থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন এক সমর্থক৷ তাকে সানন্দে বিদায় জানিয়েছে জার্মানির ফুটবল ক্লাব এফসি কোলন৷
বিজ্ঞাপন
বুন্ডেসলিগার এই ক্লাব মাঠের সাফল্যের কারণে খবরে আসে না অনেক বছর হলো৷ মাত্র দু'বারের বুন্ডেসলিগা চ্যাম্পিয়নরা সর্বশেষ সাফল্যটি পেয়েছিল ৪২ বছর আগে৷ রানার্সআপ হওয়ার আনন্দও ৩০ বছর আগের৷ সেই ক্লাব এই করোনাকালেও সংবাদ শিরোনামে!
নিজেদের নতুন জার্সির ছবি টুইটারে পোস্ট করেছিল এফসি কোলন৷ তা দেখে এক সমর্থক মহাক্ষুব্ধ৷ ক্ষোভের কারণ মসজিদের ছবি৷ ক্ষুব্ধ সমর্থক জানিয়ে দেন, তিনি মনে করেন এর মাধ্যমে একটি ফুটবল ক্লাব নিজেকে ‘ধর্মীয় সংগঠন' হিসেবে তুলে ধরেছে এবং ‘মুসলমান এবং মসজিদের সঙ্গে' এই ক্লাবকে তিনি মেলাতে পারেন না, সুতরাং আর তিনি ক্লাবের সদস্য থাকতে চান না৷
আর সব ক্লাবের মতো এফসি কোলনের কাছেও সমর্থকদের গুরুত্ব অনেক৷ তবে এ ক্ষেত্রে উগ্রতারবিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া আবশ্যক ভেবে জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলের নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ক্লাবটি জানিয়ে দিয়েছে, কোলন শহরকে তুলে ধরতে গেলে মসজিদটির ছবি রাখতেই হবে, সুতরাং মাননীয় সমর্থককে বিদায় জানানোতেই তাদের আনন্দ৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
জার্সিতে মসজিদের পাশাপাশি কোলন ক্যাথেড্রাল, রাইন নদীসহ শহরের আরো কিছু দর্শনীয় স্থানের ছবিও স্থান পেয়েছে৷ তাই কোলনের ক্লাব হিসেবে শহরের সব ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার মানসিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ওই সমর্থককে টুইটারে ‘গুডবাই' বলেছে এফসি কোলন৷
জার্সিতে স্থান পাওয়া মসজিদটি জার্মানিতে খুব আলোচিত৷ তুরস্ক সরকার এবং জার্মানিতে তুর্কি মুসলমানদের ধর্মীয় সংগঠন ডিআইটিআইবি=র অর্থায়নে নির্মিত এই মসজিদটির উদ্বোধন হয় ২০১৮ সালে৷ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷
তবে এই মসজিদের ছবি রাখার বিষয়ে এফসি কোলনের যুক্তিটা খুব স্পষ্ট৷ টুইটারে ক্লাবের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘‘এই মসজিদ আসলে কোলনে বসবাসরত বিশাল তুর্কি কমিউনিটির প্রতীক, তাদের অনেকেই এফসি কোলনের অন্ধ ভক্ত৷''