প্রতি শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের আযান মসজিদের মাইকে প্রচারের অনুমতি দিয়েছে জার্মানির কোলন শহর কর্তৃপক্ষ৷ এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হবে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে আযান সাধারণত মাইকে প্রচার করা যায় না৷ এক্ষেত্রে কোলন এক ব্যতিক্রম হতে চলেছে৷ শহরের মেয়র জানিয়েছেন যে মুসলমানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিদর্শন হিসেবে শহরটির মসজিদে প্রতি শুক্রবার দুপুরে জুম্মার নামাজের আযান মাইকে প্রচারের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ আপাতত দুই বছরের জন্য এই অনুমতি দেয়া হয়েছে, তবে তা নবায়নযোগ্য৷
বহুসংস্কৃতির শহর কোলনে জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির অবস্থান৷ স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরটির কেন্দ্রীয় এই মসজিদসহ সবমিলিয়ে ৩৫টি মসজিদে শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেল তিনটার মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট মাইকে আযান প্রচার করা যাবে৷
কোলনে বসবাসরত মুসলিমদের সঙ্গে শহর কর্তৃপক্ষের এক আলোচনার ভিত্তিতে আযানের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে৷ মুয়াজ্জিন আযান দেয়ার সময় লাইড স্পিকারে শব্দের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা অনুসরণ করতে হবে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের আগে থেকে বিষয়টি জানাতে হবে৷
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ
জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে, কোলনে৷ ২০১৭ সালে এটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ইতোমধ্যে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই মসজিদ নিয়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Becker
ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত এই মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বড় এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় মসজিদ৷ এটির আয়তন ৪৫০০ বর্গমিটার৷ এতে একসঙ্গে দুই থেকে চার হাজার মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে৷ জার্মানিতে তুর্কি মুসলিমদের সংগঠন ডিটিব মসজিদটি নির্মাণ করেছে৷ নামাজের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে সংলাপ, খেলাধুলা আয়োজনের ব্যবস্থা এবং দোকান ও লাইব্রেরি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
ভিন্ন ডিজাইনের মসজিদ
‘নন-অটোমান’ ডিজাইন অনুসরন করে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে৷ এতে কংক্রিট এবং কাঁচের দেয়াল ও গম্বুজ রয়েছে৷ দু’টি মিনারতের উচ্চতা ৫৫ মিটার করে৷ আর মসজিদের ভেতরে দেয়ালে বিভিন্ন ক্যালিগ্রাফি রয়েছে৷
ছবি: Picture alliance/dpa/M. Becker
দীর্ঘদিনের স্বপ্ন
কোলনে বসবাসরত তুর্কিরা দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক মসজিদের স্বপ্ন দেখছিলেন৷ তবে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়৷ এমনকি ২০১১ সালে বিপুল প্রতিবাদের মুখে এটির নির্মাণকাজ কিছুদিনের জন্য মন্থরও করা হয়৷ অভিবাসীবিরোধী চক্র এটি নির্মাণের বিরোধিতা করে৷ তবে পত্রিকার এক জরিপে দেখা যায়, শহরের ৬৩ শতাংশ বাসিন্দা এটি তৈরির পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চোখে পড়ার মতো স্থাপনা
জার্মানিতে প্রায় পাঁচ মিলিয়নের মতো মুসলমান বাস করেন৷ তাঁদের একটি বড় অংশই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ কোলনে বসবাসরত সোয়া লাখ মুসলমানের জন্য সত্তরটির মতো মসজিদ রয়েছে৷ অধিকাংশ মসজিদই এমন জায়গায় তৈরি যা সচরাচর চোখে পড়েনা৷ তবে এই মসজিদটি ব্যতিক্রম৷
ছবি: Picture alliance/dpa/O. Berg
খরচ কম নয়
মসজিদটি তৈরিতে কমপক্ষে সতের মিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে৷ তবে এখনও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলে জানা গেছে৷ এই অর্থের অধিকাংশই দিয়েছে ডিটিব৷ কিছু অর্থ সংগ্রহে সহযোগিতা করেছে একটি গির্জা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Geisler
পল ব্যোম, স্থপতি
কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদটির নকশা করেছেন পল ব্যোম৷ তিনি এবং তাঁর বাবা মূলত গির্জার ডিজাইন করার জন্য বিখ্যাত৷ তবে সমজিদটি তৈরির মাধ্যমে তিনি তাঁর দক্ষতাকে অন্যস্তরে নিয়ে গেছেন৷
ছবি: AP
প্রার্থনার এক স্বচ্ছ ঘর
‘উন্মুক্ত’ এবং ‘উজ্জ্বল’৷ মসজিদটির ডিজাইন সম্পর্কে এই দুটো শব্দই উচ্চারণ করেছেন ব্যোম৷ মসজিদটির মধ্যে প্রাকৃতিক আলো নিশ্চিত করতে দেয়ালে প্রচুর কাঁচ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আর মসজিদটি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্যও উন্মুক্ত৷ যেকেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: Lichtblick Film GmbH/Raphael Beinder
জার্মান স্টাইলে তৈরি মসজিদ
কোলনের মানুষ মসজিদটিকে স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘ক্যোলশ ম্যুশি’৷ আর মসজিদটির ডিজাইনেও জার্মান ছোঁয়া রয়েছে৷ প্রচলিত তুর্কি মসজিদগুলো যেরকম, এই মসজিদটি মোটেও সেরকম নয়৷
ছবি: picture alliance / dpa
কিছু শর্ত
কোলন কর্তৃপক্ষ মসজিদটি নির্মাণের অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি কিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সেখানে জার্মান ভাষা শিক্ষার আয়োজন থাকতে হবে৷ পাশাপাশি ইমামকে জার্মান ভাষায় দক্ষ হতে হবে৷ আর খুতবা দিতে হবে এমন ভাষায়, যা নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিরা বুঝতে পারেন৷ মোটের উপর, প্রার্থনায় অংশ নিতে আসা পুরুষ এবং নারীদের সমান মর্যাদা দিতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
কোলনের কেন্দ্রীয় মসজিদ নিয়ে মাঝেমাঝেই মুসলিমবিরোধী চেতনা সৃষ্টির চেষ্টা করে উগ্র ডানপন্থি দলগুলো৷ জার্মানিতে তুর্কি সরকারের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষ ডিটিবের আংশিক আর্থিক সহায়তায় মসজিদটি তৈরির সময় থেকেই এটি নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে৷ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান নিজেই মসজিদটি উদ্বোধন করেছিলেন৷
আযানের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্ত দিলেন মেয়র
যদিও কোলনের মুসলমানেরা আযানের অনুমতি দেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হচ্ছে৷ শহরের মেয়র হেনরিয়াটে রেকার এই বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন৷
টুইটারে সপ্তাহান্তে তিনি লিখেছেন, ‘‘আযান প্রকল্প নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে৷ কোলন ধর্মীয় স্বাধীনতার শহর৷''
রেকার লিখেছেন, ‘‘কোলনের মূল ট্রেন স্টেশনে আসলে শুরুতেই ক্যাথিড্রাল চোখে পড়ে এবং এরপর গির্জার ঘণ্টার শব্দ শোনা যায়৷ কোলন শহরের অনেক বাসিন্দা মুসলমান৷ আমার কাছে আযানের বিষয়টি সম্মান প্রদর্শনের বহিঃপ্রকাশ৷''
জার্মানিতে ৪৫ লাখের মতো মুসলমান বসবাস করেন৷ ইউরোপের খ্রিস্টান প্রধান এই দেশটির সবচেয়ে বড় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এটি৷