শব্দদূষণ কমাতে ঘানার রাজধানী আক্রার মসজিদগুলোকে লাউডস্পিকার ব্যবহার করে আজান না দিয়ে মোবাইলে এসএমএস কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা দিয়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের ডাকতে বলা হয়েছে৷ মুসলমানরা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷
ছবি: picture alliance/AA/J. Perdigo
বিজ্ঞাপন
দেশটির পরিবেশমন্ত্রী কোয়াবেনা ফ্রিম্পং-বোয়েটেং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘টেক্সট কিংবা হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে কেন নামাজের সময়সূচি জানানো যাবে না? ইমাম সবাইকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাতে পারেন৷ আমি মনে করি, এর ফলে শব্দ কমবে৷ এটি হয়ত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, কিন্তু এই বিষয়ে আমরা ভাবতে পারি৷’’
রাজধানীতে অনেক মুসলমান মোবাইল ব্যবহারের বিষয়টি মানতে পারছেন না৷ শেখ উসান আহমেদ নামে ফাদামা সম্প্রদায়ের এক ইমাম শব্দ দূষণের পরিমাণ যে কমতে পারে সে ব্যাপারে একমত৷ তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক জটিলতার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ইমামকে মাসিক ভিত্তিতে বেতন দেয়া হয় না৷ এই কাজ করতে তিনি কোথায় টাকা পাবেন? যা করা সম্ভব, তা পালন করার চেষ্টা করি আমরা৷ সুতরাং টেক্সট বা অন্য উপায় বার্তা পাঠানো সমস্যা না৷ কিন্তু এর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না৷’’
শব্দদূষণের নানান উৎস
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি নষ্ট আর ১০০ ডেসিবেলে চিরতরে তা হারাতে হতে পারে৷ অথচ রাজধানী ঢাকার অনেক জায়গাতেই শব্দ ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত ওঠে৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
যত্রতত্র মাইকের ব্যবহার
ঢাকা শহরে উচ্চ শব্দের মাইকের ব্যবহারে আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে তা মানা হয় না৷ সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানা কারণে ঢাকায় ব্যবহৃত হয় উচ্চ শব্দের মাইক৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
রাজনৈতিক সমাবেশ
ঢাকায় শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশ৷ এসব সমাবেশে প্রচুর মাইকের ব্যবহার হয়৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাবেশস্থল থেকে আশপাশের অনেকটা এলাকা জুড়ে মাইক স্থাপন করা হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ধর্মীয় অনুষ্ঠান
শব্দ দূষণের আরেক কারণ বিভিন্ন ধর্মের নানান অনুষ্ঠান৷ এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়াজ মাহফিল৷ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাত পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়৷ হিন্দু ধর্মের নানান অনুষ্ঠানেও গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ওপেন কনসার্ট
ঢাকা শহরের নানান এলাকায় বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ওপেন এয়ার কনসার্টের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে ব্যবহৃত হয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড সিস্টেম৷ তাতেও ভয়ঙ্কর শব্দ দূষণ হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
হাইড্রোলিক হর্ন
ঢাকার শব্দ দূষণের আরেক কারণ বিভিন্ন বাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার৷ হাইকোর্টের রায়ে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে খুব একটা মানা হয় না৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
অযাচিত হর্ন
ঢাকা শহরে চালকরা অপ্রয়োজনে প্রচুর হর্ন বাজান৷ এমনকি যানজটে আটকে থাকলেও অনেক চালককে হর্ন বাজাতে দেখা যায়৷ ফলে ভয়াবহ শব্দ দূষণের সৃষ্টি হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লক্করঝক্কর পরিবহন
ঢাকা শহরের বাসগুলোর বড় একটা অংশই বহু বছরের পুরনো৷ ফলে এসব বাহনের ইঞ্জিন থেকে অস্বাভাবিক উচ্চ শব্দের সৃষ্টি হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভবন নির্মাণ
ঢাকা শহরের সর্বত্রই বছরজুড়ে চলে ভবন নির্মাণকাজ৷ প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিকট শব্দে রড কাটা, ইট-পাথর ভাঙার কাজ হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
লোড শেডিংয়ে জেনারেটর
ঢাকা শহরে সারা বছর, বিশেষ করে গ্রীষ্ম মৌসুমে লোড শেডিং একটি বড় সমস্যা৷ এ সময়ে বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ শব্দের জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে শব্দ দূষণের সৃষ্টি হয়৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
শিল্প কারখানা
শিল্প কারখানা কারখানা থেকেও সৃষ্টি হয় শব্দ দূষণ৷
ছবি: DW/M. M. Rahman
10 ছবি1 | 10
ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলা অন্য মুসলমান ব্যক্তিরাও সরকারের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ নোরা এনসিয়াহ বলছেন, ‘‘সকালবেলায় মেগাফোন ব্যবহার করে নামাজের জন্য মুসলমানদের ডাকার বিষয়টিকে আমি সমস্যা বলে মনে করি না, কারণ, খ্রিষ্টানদের গির্জাও মেগাফোন ব্যবহার করে৷’’
আক্রার আরেক বাসিন্দা কেভিন প্র্যাটও পরিবেশমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ ‘‘সবাই সামাজিক মাধ্যমে নেই৷ এছাড়া সবাই তাঁর (মন্ত্রী) মতো শিক্ষিত নন,’’ বলেন তিনি৷
এদিকে, বিষয়টি ভবিষ্যতে আইনের আওতায় আনা হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ঘানার সরকার৷ মসজিদ ছাড়াও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে সৃষ্ট দূষণ কমানোরও পরিকল্পনা করছে দেশটি৷
উল্লেখ্য, খ্রিষ্টানপ্রধান ঘানার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ মুসলমান৷
এর আগে রাজধানী কিগালিতে লাউডস্পিকার ব্যবহারে মসজিদগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রুয়ান্ডা৷ এছাড়া ভবন নির্মাণ নীতিমালা না মানা ও শব্দ দূষণের অভিযোগে খ্রিষ্টানপ্রধান সেই দেশে কয়েকশ' গির্জাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ উল্লেখ্য, রুয়ান্ডায় মুসলমানের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার পাঁচ শতাংশ৷
আইজ্যাক কালেদজি/জেডএইচ
ঈশ্বর যখন রোজগারের উপায়
ধর্ম ব্যবসা ক্রমেই জমে উঠছে ঘানায়৷ এর সঙ্গে উত্থান ঘটছে একদল ধর্মগুরুর৷ ঘানার গির্জাপ্রধানরা খুবই শক্তিশালী৷ অন্যকে সম্পত্তি আর ভালো স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের অর্থভাণ্ডার ফুলেফেঁপে উঠছে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
স্বঘোষিত পয়গম্বর
ড্যানিয়েল ওবিনিম ইন্টারন্যাশানাল গড’স ওয়ে চার্চ তৈরি করে বছর চল্লিশেই নিজের তৈরি সাম্রাজ্যের স্বঘোষিত সম্রাট! ঘানার তিনটি বড় গির্জাও তিনি তৈরি করেছেন৷ এহেন ধর্মগুরু তাঁর জনসভায় সাংবাদিককে আঘাত ও একজোড়া বালক-বালিকাকে চাবকানোর জন্য আপাতত জেলের ঘানি পিষছেন৷
ছবি: Tomaso Clavarino
বিশ্বাসীদের সংখ্যা বাড়ছে
আফ্রিকা মহাদেশে গির্জা ক্রমেই ভক্তদের আকর্ষণ করছে৷ সমীক্ষা বলছে, ধর্মপ্রচারকদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে৷ ২০০০ সালে যে সংখ্যাটা ৩০ লক্ষ ছিল, সেটা ২০১৫-তে বেড়ে প্রায় ৫৫ লক্ষে দাঁড়িয়েছে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
রাস্তার ধারেও
ঘানার রাস্তার ধারে ইতিউতি চোখে পড়বে গির্জার বিজ্ঞাপন৷ এখানকার অধিকাংশ গির্জা মাত্র একজন দিয়েই চলে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
টিভি চ্যানেলেও রমরমিয়ে
গির্জাপ্রধানরা এখন আর শুধু রবিবারের সকাল বা সপ্তাহের অন্যান্য দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন না৷ টিভি চ্যানেল, ওয়েব টিভি চ্যানেলের দৌলতে তাঁদের ভক্তসংখ্যা এখন অনেক৷ এই ছবিটি একটি লাইভ শো-এর আগে পর্দার পেছনে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
প্রার্থনা যখন শব্দদোষে
প্রতিটা গির্জায় সাউন্ড সিস্টেম থাকবেই৷ উচ্চগ্রামের শব্দ সেখানে বাজবেই৷ সেটা রবিবার বা যে কোনও দিনই হতে পারে৷ ফলে যারা কাছাকাছি থাকেন বা কাজকর্ম করেন, তাঁদের পক্ষে সেটা সহ্য করা একরকম মানসিক কষ্টই বলা যেতে পারে৷ তবে সরকার ধর্মীয় উপাসনালয় থেকে সৃষ্ট দূষণ কমানোর উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
গির্জাপ্রাঙ্গণে কচিমুখ
তরুণরাই এখন গির্জা চত্বরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ অলৌকিকে বিশ্বাস রাখা, ক্ষত বা রোগ নিরাময়ে দৈবের শরণ ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই এখন গির্জা তরুণদের ভরসা কাজে লাগাচ্ছে৷
ছবি: Tomaso Clavarino
ভোর হলো, শুরু হলো
ধর্ম প্রচারে রেডিও খুব সহায়ক৷ সারাদিন ধরে নানা রেডিও চ্যানেলে ধর্মপ্রচারের নানা অনুষ্ঠান শুনতে পাবেন৷ ছবিতে ভোরে ধর্মপ্রচারের এমন দৃ্শ্যই দেখানো হচ্ছে৷